উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য থাকবে আলাদা বাজেট
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য আলাদা বাজেট প্রণয়ন করছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি এতে যে পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তার চিত্র স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলমান আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ এর মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা বলছেন, উন্নত দেশগুলোর অনবরত কার্বন নির্গমনের ফলে বাংলাদেশসহ তার উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতি মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত তহবিল না পাওয়া গেলেও বাংলাদেশ তা ঘুচিয়ে নিতে পদক্ষেপ নিয়েছে।
জানতে চাওয়া হলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলকে দুর্যোগ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ৩৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হবে। এছাড়াও উপকূলীয় প্রতিটি হটস্পটের জন্য আলাদা বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব বিষয় আজকে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বছরে দুর্যোগের কারণে প্রায় ৫০ হাজার লোক বাস্তুচ্যুত হয়। এটা আমি আলোচনায় তুলে ধরেছি।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্লাইমেট ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি করেছেন। সেই তহবিলে অনেক স্বল্পতা আছে। এ তহবিলে যাতে সহযোগিতা করে, সেটি আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরেছি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসীন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন কমলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমে আসবে। এসব বিষয় আমরা কপ-২৬ সম্মেলনে তুলে ধরছি। পাশাপাশি এজন্য যে অর্থ প্রয়োজন সেটিও তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার এবার কপ-২৬ সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে খুবই আন্তরিক। এবার যেভাবে আলোচনা হচ্ছে- এখন পর্যন্ত পজিটিভ। তবে সেই আন্তরিকতার বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে কপ-২৬ সম্মেলনের শেষ দিকে।
সচিব বলেন, উন্নত দেশগুলোর কারণে আমাদের দেশে জলবায়ু দুর্যোগ বাড়ছে। এবারের সম্মেলনে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির অনেকাংশই বাস্তবায়ন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ বিশ্বমহলে প্রশংসার পাশাপাশি জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তুচ্যুতিকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জনের অন্যতম প্রধান অন্তরায় হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধু ২০২০ সালেই হঠাৎ শুরু হওয়া বিপর্যয়ের কারণে ৩০ দশমিক ৭ মিলিয়ন মানুষ নতুনভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের গ্রাউন্ডসওয়েল রিপোর্টে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ৬টি জলবায়ু হটস্পট অঞ্চলজুড়ে ২১৬ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক, অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থানীয় জ্ঞান কাজে লাগিয়ে উপকূলীয় বাজেটটি প্রণয়ন করতে হবে। একই প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত আর্থিক অনুদানকে কাজে লাগানোর বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।