গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ
গ্লাসগোর জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের (কপ ২৬) খসড়া ঘোষণায় আগামী বছরের মধ্যে আরও বড় আকারে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে সব দেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
কারণ, ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যে লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছিল, তা পূরণের ক্ষেত্রে বড় ফারাক রয়ে গেছে। এটা পূরণ করা অতীব জরুরি। এ জন্য বার্ষিক মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনার বিষয়ে সম্মত হওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত শুক্রবার রাতে ওই খসড়া প্রকাশ করা হয়। এতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রতিটি দেশকে প্রতিবছর তাদের জাতীয় ভূমিকা বা এনডিসি হালনাগাদ করার কথা বলা হয়েছে।
পরিবেশবাদীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলতি শতকের শেষে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্যমাত্রা প্যারিস চুক্তিতে রয়েছে। গ্লাসগোতে তা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস নির্ধারণ করা জরুরি ছিল।
খসড়া ঘোষণায় যদিও দেড় ডিগ্রির আকাঙ্ক্ষার উল্লেখ রয়েছে, তবু এবার সম্মেলনে এ পর্যন্ত পাওয়া জাতীয় অঙ্গীকারগুলোতে ২০৩০ সালের মধ্যে যতটুকু গ্যাস নির্গমন হ্রাসের আশ্বাস মিলেছে, তার নিরিখে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হলেও পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাবে। বিজ্ঞানীরা ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস উদ্গিরণ আরও অন্তত ৪৫ শতাংশ কমানোর প্রয়োজনের কথা বলেছেন।
এই খসড়ায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্যকে ভিত্তি না করাটা পিছলে পড়া কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সদস্য সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এই খসড়া প্যারিস চুক্তির প্রতিবিম্ব এবং এটি নিয়ে জোরালো বিতর্ক হবে।
আমাদের লক্ষ্যকে উঁচুতে নিয়ে যেতে চেষ্টা চালিয়ে যাব, যাতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখা যায়।’ দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের বিষয়েও স্বল্পোন্নত দেশগুলো বা এলডিসির পক্ষ থেকে কপ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আরও আলোচনার আভাস দেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামে (সিভিএফ) বাংলাদেশের বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা একটি প্ল্যাটফর্মের কথা বলেছি, যেখানে প্রতিবছর দেশগুলো তাদের গ্যাস উদ্গিরণ কমানোর বর্ধিত ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা দেবে।
তবে সেখানে শুধু পরিকল্পনা প্রকাশ করা নয়, তার সঙ্গে কর্মপরিকল্পনাও দিতে হবে। কতটা গ্যাস উদ্গিরণ কমাবে, কীভাবে কমাবে, অভিযোজন ও প্রশমন এবং অর্থায়নের বিষয়গুলো তুলে ধরবে।’
প্রকাশিত খসড়ায় ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গটির স্বীকৃতি এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন বলে মনে করা হচ্ছে।
শিল্পোন্নত দেশগুলোর দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের দুর্যোগের কারণে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার উন্নয়নশীল দেশগুলো। এ ক্ষতিপূরণের দাবি এত দিন নানা অজুহাতে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
এখন খসড়া ঘোষণায় তা উল্লেখের পাশাপাশি বাড়তি ও অতিরিক্ত সহায়তার জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি তাগাদা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় ৫০টি দেশ জলবায়ু সহনীয় এবং নিম্ন কার্বন নিঃসরণমূলক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছে। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে বলে কপ প্রেসিডেন্সির দপ্তর থেকে জানানো হয়।