করোনা ভাইরাসের লক্ষণ: কিভাবে বুঝব এবং কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হব?
কোভিড ১৯ কি?
ইহা করোনা ভাইরাস পরিবারের একটি সদস্য যা পূর্বে কখনও দেখা যায়নি। অন্যান্য করোনা ভাইরাসের মত ইহাও পশু হতে মানব দেহে এসেছে।
ইহা নভেম্বর ২০১৯ এ চীনের হুয়ান শহরে প্রথম দেখা দেয় এবং ইতোমধ্যে বিশ্বের সকল দেশের মধ্যে ইতোমধ্যে ২০৪ টি দেশে এবং ধারণা করা হচ্ছে আরো বেশী দেশ ও অঞ্চল এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪৩,২৬১ এর অধিক মানুষ মারা গিয়েছে। প্রতিদিনেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
এই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া কিভাবে বুঝব?
এই ভাইরাসের লক্ষণ নিউমোনিয়ার মতোই। যারা এ রোগে আক্রান্ত হয় তাদের কফ, কাঁশি এবং শ্বাস কষ্ট দেখা দেয়। যেহেতু ইহা ভাইরাস জনিত নিউমোনিয়া – তাই এ রোগে এন্টিবায়োটিক ঔষধে কোনো কাজ করে না।
ভাইরাস জনিত জ্বরে আমরা যে ঔষধ ব্যবহার করি তাও এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করে না এবং এ রোগের এখন পর্যন্ত কোন ভ্যাসকিনও আবিস্কার হয়নি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থ্য হওয়া নির্ভর করে তার ইমিউনো শক্তির (strength of the immune system) উপর। যার ইমিউনো শক্তি যত বেশী তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা (The National health Service -NHS) এর মতে এ রোগে আক্রান্ত হওয়া বুঝতে নিম্নের যে কোন একটি লক্ষণ কারো দেখা দিলেই বুঝতে হবে তিনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে:
- খুবই উচ্চ তাপমাত্রা – বুকের সামনে ও পিছনে স্পর্শ করলে অত্যন্ত গরম অনুভূত হবে।
- নতুন করে অবিরাম কফ ও কাঁশি থাকবে – এর অর্থ অবিরামভাবে আক্রান্ত ব্যক্তি কাঁশতে থাকবে।
করোনা ভাইরাসের লক্ষণ: কিভাবে বুঝব এবং কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হব?
শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বা কফ/কাঁশি দেখা দিলে – তখন কি ডাক্তারের শরণাপন্ন হব?
না, যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের পরামর্শ হলো,যে কোন ব্যক্তির এই ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে তাকে কমপক্ষে ৭ দিন বাড়িতে অবস্থান করতে হবে।
আর তার সাথে যদি অন্য কেহ একই বাড়িতে বসবাস করে, তবে বাড়ীর বাহিরে এই ভাইরাস ছড়ানো প্রতিরোধে তাদেরকেও কমপক্ষে ১৪ দিন বাড়ীতে অবস্থান করতে হবে। কেহ যদি বিদেশ হতে আসে তাদেরকেও কমপক্ষে ১৪ দিন বাড়িতে অবস্থান করতে হবে।
করোনা ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দেওয়ার ৭ দিনের মধ্যে যদি লক্ষণ দীর্ঘ স্থায়ী হয় এবং শারীরিক অবস্থা খরাপ হতে খারাপের দিকে যেতে থাকে, তবে জরুরীভাবে সরকার কর্তৃক নির্দ্ধারিত করোনা ভাইরাস স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
নিম্নে করোনা ভাইরাসের ৭ দিনের ক্রমাবনতি ও বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক করোনা ভাইরাস চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রের সাথে জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগের ফোন নম্বরসমূহ দেয়া হল:
আইইডিসিআর হটলাইনে যোগাযোগ করুন:
→ 01937000011
→ 01937110011
→ 01927711784
→ 01927711785
→ 01944333222
Email: iedcrcvid19@gmail.com
বিশ্বের অনেক দেশ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ইতোমধ্যে এক দেশ হতে অন্য দেশে এবং দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে ।
আমেরিকা-যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ অনেকদেশ সম্পূর্ণভাবে দেশটিকে বিশ্ব থেকে ১৫ দিন হতে ১ মাসের জন্য বিছিন্ন করাসহ অভ্যন্তরভাগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ( Shut down) ঘোষণা করেছে। দেশের সকল নাগরিকের উচিৎ করোনা ভাইরাস বিষয়ে সরকারের সর্বশেষ ঘোষিত পরিস্থিতি ও নির্দেশনা সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং তা যথাযথ অনুসরণ করা।
এই ভাইরাসটি কেন ইনফ্লুয়েঞ্জা অপেক্ষা ভংয়কর এবং বিশেষজ্ঞরা ইহাকে কিরূপ ভয় পাচ্ছে?

করোনা ভাইরাস:
আমরা এও জানিনা এই নতুন করোনা ভাইরাস কিরূপ মারাত্মক এবং আরো অধিক তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত বুঝা যাবে না আসলে ইহা কত ভয়ংকর। তবে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অ্যানালাইসিস এ দেখা যাচ্ছে যে এই ভাইরাসটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে, কিন্তু মানুষের মৃত্যুর হার অন্য করোনা ভাইরাসের তুলনায় খুবই কম।
এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার কম বয়সীদের ক্ষেত্রে ১% হতেও অনেক কম এবং বড়দের ক্ষেত্রে ও শারিরীকভাবে অন্য রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ৩% এর মতো।
উল্লেখ্য যে,বিশ্বে মৌসুমী জ্বরে মৃত্যুর হার ১% এর নিচে এবং প্রতি বছর ইহাতে বিশ্বে ৪,০০,০০০ লোক মৃত্যু বরণ করে। এই ভাইরাসের অপর সদস্য সারস (Severe Acute Respiratory Syndrome – SARS) ভাইরাসে মৃত্যুর হার ১০% এর অধিক।
অন্য বিষয়টি হল এখনও এই ভাইরাসের কোন ভেসকিন আবিস্কার হয়নি – এর অর্থ হল যারা বয়স্ক এবং অন্য রোগ যেমন হৃদ রোগ, ফুসফুস ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে আছে তাদের জন্য বড় সমস্যা। তাদের উচিৎ ঘন ঘন হাত ধৌত করাসহ অন্য লোকের সংস্পর্শ হতে দূরে থাকা।
আর কোন প্রকার করোনা ভাইরাস পৃথিবীতে আছে কিনা?
জ্বী, আছে। Severe Acute Respiratory Syndrome (SARS) এবং Middle Eastern Respiratory Syndrome (MERS) উভয়ই হল করোনা ভাইরাস পরিবারভূক্ত সদস্য এবং উভয়ই পশু হতে এসেছে।
২০০৩ সালে SARS ৩৭ টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং তখন বিশ্বে আতংক তৈরী করে। এই ভাইরাসে তখন সারা বিশ্বে ৮০০০ লোক আক্রান্ত হয় এবং ৭৫০ জন মারা যায়।
MERS ভাইরাসটি সহজে মানুষ হতে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হতে পারে না, কিন্তু, ইহা অনেক বেশী প্রাণঘাতী, যা এ পর্যন্ত ২৫০০ আক্রান্ত লোকের মধ্যে ৩৫% এর মৃত্যু ঘটিয়েছে।
Source: Sarah Boseley, Hannah Devlin and Martin Belam for The Guardian