পরিবেশ ও প্রকৃতিকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে আরো সহজভাবে তুলে ধরতে হবে
প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। ২০২১ সালে এ দিবসের প্রতিপাদ্য হল ‘আমাদের ধরিত্রী পুনরুদ্ধার করি’। এ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ‘দ্য আর্থ সোসাইটি আয়োজন করে ‘প্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক ঘণ্টাব্যাপী ওয়েবিনার। এখানে বক্তাগণ পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে সুরক্ষায় সম্মিলিত পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা করেন।
জলবায়ু সংসদের আহ্বায়ক নাহিম রাজ্জাক, এমপির সঞ্চালনায় ওয়েবইনারের আলোচকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লেখক সাদাত হোসাইন, চলচ্চিত্র নির্মাতা আশফাক নিপুণ, স্থপতি নাহিদ শারমিন, অ্যাক্টিভিস্ট রেবেকা সুলতানা ও ইকোসিস্টেম কনসালটেন্ট দীপঙ্কর আইচ।
১৯৭০ সালের ২২ এপ্রিল উইসকনসিনের জুনিয়র সিনেটর গেলর্ড নেলসনের হাত ধরে বৈশ্বিক পরিবেশ আন্দোলনের সূচনা হয়। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বায়ু, মাটি এবং জলের দূষণ সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এরপর থেকে জাতিসংঘ এই দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃ ধরিত্রী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।
তখন থেকেই পরিবেশবাদী এবং সমমনাগণ সম্মিলিতভাবে গ্রহের ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত কর্মপরিকল্পনা ও কীভাবে পরিবেশকে সর্বোত্তমভাবে সুরক্ষিত করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করতে ঐক্যবদ্ধ হয়।
সাদাত হোসাইন তার গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা, প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক ও বিভিন্ন প্রজাতি এবং প্রাকৃতিক জীবনের ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করে জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে তার গ্রামকে প্রভাবিত করেছে সে সম্পর্কে আলোচনা করেন।
প্রকৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার অধিকারী, বাবার সাথে তার সম্পর্কের তুলনা করে প্রকৃতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ এবং মানসিক সংযুক্তি সম্পর্কে সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের দায়বদ্ধতার উপর তিনি জোর দেন এবং কীভাবে তাঁর বাবা নিজের সন্তানের মধ্যে একই মূল্যবোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন সে সম্পর্কেও আলোকপাত করেন।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু মূল্যবোধের শিক্ষাটা স্কুল পাঠ্যবই নয়, বরং পরিবার হতেই আসে, সেহেতু প্রকৃতিকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে সহজভাবে তুলে ধরতে হবে।
নাহিদ শারমিন বলেন, নগর পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ এবং এজেন্সি গুলির কারণে সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও, স্থপতিদের অবশ্যই তাদের অনুশীলনকে ভালো করে ধরে রাখতে হবে এবং এমন অভিজ্ঞতা প্রদান করতে হবে যা মানব এবং প্রকৃতি উভয়েরই কল্যান সাধন করে।
জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার উপযোগী ভবনের নকশা প্রণয়নে দেশীয় অভিজ্ঞতার সমন্বয় সাধনের উপর তিনি জোর দান করেন।
দীপঙ্কর আইচ বলেন, জলবায়ু সাক্ষরতা নিশ্চিতকরণের পূর্বে বুনিয়াদি সাক্ষরতা সঠিকভাবে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, সাক্ষরতার কোনও সঠিক মডেল নেই। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনকে অভিযোজন, প্রশমন এবং ত্বদীয় ভিত্তিতে বেশি দেখা হয়।
সুতরাং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টিকে সাধারণ মানুষের উপর বিশেষ করে বাংলাদেশের জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত হবে না। বরং জলবায়ু সাক্ষাৎকার বিষয়টি মানুষের মননে আসার আগে প্রাথমিক সাক্ষরতার বিষয়টি আগে আসতে হবে।
রেবেকা সুলতানা বলেন, যারা জনগণের অজ্ঞতার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ও তাদের সুস্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার প্রয়োজন। যুব স্বেচ্ছাসেবীদের সংকট সম্পর্কে সচেতন করে তোলা এবং সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তা মোকাবেলায় স্থানীয়ভাবে সক্ষম করে গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন।
কীভাবে শিশু ও যুবকদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বিদ্যালয়গুলিকে বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ এবং প্রচারণা পরিচালনা করতে হবে যা শিশুদের জন্য একটি ইতিবাচক শিক্ষার ব্যবস্থা করবে।
আশফাক নিপুণ বলেন, সব ধরনের ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার মানুষ সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বিশেষত তৃণমূলের গ্রামীণ সম্প্রদায়কে চিত্রিত করা, প্রকৃতির সাথে তাদের সম্পর্কের স্থানীয় অভিজ্ঞতা এবং বাবা-মা ও দাদা-দাদীর নেতৃত্বাধীন আমাদের সরল শিকড়ে ফিরে যাওয়া।
নাহিম রাজ্জাক মূল আলোচ্যের সারসংক্ষেপ উল্লেখ করে সেশন শেষ করেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, আচরণ পরিবর্তনের শিক্ষাটা পরিবার ও ঘর হতেই আসা উচিত। স্কুল শিক্ষাক্রমে জলবায়ু শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত এবং পাশাপাশি প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।
প্রকৃতি এবং জলবায়ুর গল্প ডিজিটাল মিডিয়া ফরম্যাটে তুলে ধরতে হবে যা তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করবে। নগরায়ন অবশ্যই পরিবেশ বান্ধব মানগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে এবং শিশুদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবা ও দায়িত্ববোধের তাৎপর্য তুলে ধরতে হবে। এইভাবে গ্রহের স্বাস্থ্যের পুনরুদ্ধার এবং জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধির জন্য সবাইকে একত্রিত হতে হবে। ফলে গ্রহটি বাসযোগ্য হয়ে উঠবে সবার জন্য ।