করোনাভাইরাস (COVID-19) দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ এবং কিভাবে শ্বাসযন্ত্রকে আক্রান্ত করে?
করোনাভাইরাস (COVID-19): বর্তমানে সারা বিশ্ব মানুষের নিকট এক আতংকের নাম। করোনাভাইরাস পরিবারের এ নতুন সদস্যটি দ্রুততম গতিতে সারা পৃথিবীর মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে। এ ভাইরাসটির প্রধান বৈশিষ্ঠ্য হল ভাইরাসটি অন্য ভাইরাসের মত আচরণ করছে না এবং ঠান্ডা গরম পরিবেশ – কিছুই মানছে না। ভাইরাসটির হিংস্রতা হল মানবদেহের শ্বাসযন্ত্রকে আক্রমণ করার মাধ্যমে কষ্টদায়ক মৃত্যুর কারণ ঘটানো ।
কিভাবে এই ভাইরাসটি মানুষের দেহে প্রবেশ করে এবং শ্বাসযন্ত্রকে আক্রমণ করে তা যদি জানতে পারি, তবে আমাদের পক্ষে এ ভাইরাসটিকে পরাজিত করতে সক্ষমতা অর্জন করা সহজতর হবে।
করোনাভাইরাস (COVID-19) এর গঠন প্রকৃতি ও বৈশিষ্ঠ্য
এই ভাইরাসটির পূর্ণাঙ্গ নাম Severe Acute Respiratory Syndrome Coronavirus 2 (SARS-CoV-2। এই ভাইরাসটির পরিবারভূক্ত অন্য দুটি সদস্য হল, সার্স (Severe Acute Respiratory Syndrome Coronavirus -SARS-CoV) ও মার্স (Middle East Respiratory Syndrome – MERS-CoV)।
করোনাভাইরাস হল একটি আবরনে মোড়ানো ভাইরাস (Enveloped Viruses) এবং তৈলাক্ত প্রলেপ দ্বারা আবৃত, যা “Lipid bilayer” নামেও পরিচিত। আবরনটি হতে মুকুটের সূঁচালো কাঁটার মত চারদিকে ছড়িয়ে থাকে। তাই এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে Coronavirus, কারণ লেটিন ভাষায় Corona অর্থ Crown বা মুকুট।
তৈলাক্ত প্রলেপ ও সূঁচালো কাঁটার মত অংশসমূহ প্রোটিন বা অ্যামিনো এসিড দিয়ে গঠিত। আর সাবান বা অ্যালকোহল হল ক্ষার বা ক্ষরক। পানির উপস্থিতিতে ক্ষার বা ক্ষারকের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যামিনো এসিড ভেঙ্গে যায় বা গলে যায়। ফলে ভাইরাসটিও ধ্বংস হয়ে যায়।
অম্ল বা এসিড + ক্ষার বা ক্ষরক → লবন + পানি, ( পানির উপস্থিতে)
NH3-COOH (Amino acid) + OH+ (Alkaline) → NH3– R-COOH (Neutralized compound) + H2O (Water).
এ জন্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সাবান বা অ্যালকোহল দিয়ে পানি সহযোগে ভাল করে হাত ধোঁয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
অন্যান্য আবরণযুক্ত ভাইরাস বিষয়ে গবেষণায় জানা গেছে যে, ভাইরাসটির তৈলাক্ত প্রলেপটি তাপে সংবেদনশীল হয়ে ওঠে এবং তখন ইহা সহজেই ধ্বংস হয়ে যায় অর্থাৎ দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে না। শীতল পরিবেশে তৈলাক্ত প্রলেপটি রাবারের মত শক্ত হয়ে যায়, ফলে তৈলাক্ত প্রলেপটি ভাইরাসকে দেহের বাহির হতে প্রতিরক্ষা দিতে পারে অর্থাৎ এ সময় এরা দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে।
অধিকাংশ আবরণযুক্ত ভাইরাস মৌসুম ভিত্তিক শক্তিশালী প্রভাব দেখায়। তবে এ ভাইরাসটি তেমন আচরণ করছে না বলে অনেকেই ধারণা করছে। আরও একটি শীত অতিক্রম না করা পর্যন্ত ভাইরাসটির আচরণ স্পষ্ট নাও হতে পারে।
করোনাভাইরাস (COVID-19) বিভিন্ন বস্তুর উপর পতিত হলে ভিন্ন ভিন্ন বস্তুর উপর সময় সময় পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। বিভিন্ন বস্তুর গায়ে পতিত হলে ভাইরাসটি কত সময় ধরে জীবিত থাকতে পারে তার গবেষণা লব্ধ একটি তথ্য নিন্মে দেয়া হল:
বস্তুর নাম |
জীবিত থাকার সময় |
Source |
বাতাসে | ৩ ঘন্টা পর্যন্ত | Core77 |
কপার | ৪ ঘন্টা পর্যন্ত | |
কার্ডবোড | ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত | |
প্লাস্টিক, ষ্টেনলেস স্টিল, , | ২-৩ দিন পর্যন্ত | |
অন্যান্য মেটাল (সোনা, রূপা, ইত্যাদি) কাঠ বা কাঠের আসবাবপত্র, গ্লাস ও গ্লাসের তৈরী আসবাবপত্র, বাসন কোশন সিরামিক (বাসন–কোশন, পাত্র, মগ ইত্যাদি, কাগজ ও কাগজের তৈরী বস্তু। |
৫ দিন পর্যন্ত | WebMD |
কিভাবে করোনাভাইরাস (COVID-19 Coronavirus) মানব দেহে প্রবেশ করে
মুখ গহ্বর, নাক, চোখ, লোমকুপ ও ইনজেকশন সিরিঞ্জ এর মাধ্যমে রোগ জীবানু ও বিষাক্ত পদার্থ মানবদেহে প্রবেশ করে। তবে এ পর্যন্ত গবেষণায় যা জানা গিয়েছে তা হল করোনাভাইরাস (COVID-19 Coronavirus) টি মুখ গহ্বর, নাক ও চোখ দিয়ে মানবদেহে প্রবেশ করছে।নাক ও মুখ দিয়েই প্রধানত প্রবেশ করে। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় মানুষের পায়খানা ও প্রস্রাবেও ভাইরাসটির অস্তিদ্ব পাওয়া গিয়েছে। ইহা আরও কিভাবে মানবদেহে ছড়াতে পারে সে বিষয়ে এখনও বলার সময় আসেনি, – এ বিষয় জানার জন্য গবেষকরা দিবা-রাত্রি গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বিন্দু বিন্দু (Droplets)আকারে ভাইরাসটি বাতাসে ছড়ায় এবং প্রথমে বাতাসে ভাসতে থাকে। তার পর আস্তে আস্তে নিন্মগামী হয়ে মাটি, ফ্লোর, কোন বস্তুর উপর পতিত হয়। ইহা ছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তি তার কফ, শ্লেষ্মা যত্রতত্র ফেললে বা হাঁচি কাশির সময় কণুই ব্যবহার না করে হাত দ্বারা মুখ, নাক স্পর্শ করলে তিনি তাঁর কফ, শ্লেষ্মার মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ছড়াতে পারেন।
এইরুপ আক্রান্ত ব্যক্তি যদি হাঁচি, কাশির সময় মুখে টিস্যু বা কাপড় বা কনুই ব্যবহার না করেন এবং তার ৬ ফুট দূরত্বের (কারও কারও মতে ৩ ফুট দূরত্বের কথা বলেন, তবে বায়ু প্রবাহের উপরই দূরত্বটা নির্ভরশীল) মধ্যে অন্যকোন ব্যাক্তি অবস্থান করে এবং তার মুখ, নাক বা চোখ খোলা থাকে, তবে বাতাসে ভাসতে থাকা জীবানু খোলা নাক. মুখ বা চোখ দিয়ে শ্বাস নেয়ার সময় ঐ সুস্থ্য বক্তির দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে।
সম্প্রতি জাপানের এক গবেষক মাইক্রোলেন্সের ক্যামেরা ব্যবহার করে দেখিয়েছেন যে, শুধু হাঁচি কাশি নয় আক্রান্ত ব্যক্তি কথা বলার সময়, শ্বাস প্রশ্বাসের সময় অনবরত ভাইরাসের জীবানু বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ জন্য সবসময় মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন।
জাপানের গবেষক এর গবেষণাটির ভিডিও –
আর যদি তার নাক, মুখ বা চোখে প্রবেশ করতে না পারে তখন তার দেহের মুখ, নাক, চোখের আবৃত বস্তু বা কাপড়সহ দেহের অন্যান্য আবৃত ও অনাবৃত অংশে ঐ সকল ভাইরাস লেগে যেতে পারে এবং সেগুলো জীবানু নাশক স্প্রে বা সাবান দ্বারা ধৌত/ধ্বংস করা না হলে সেগুলো দ্বারা সে নিজে বা তার সংস্পর্শের ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে।
একই ভাবে হাঁচি কাশির সময কাঁপড়, টিস্যু বা কণুই ব্যবহার করা না হলে তার জীবানু অন্য কোন বস্তুর উপর পতিত হতে পারে। কোন বস্তুর উপর পতিত জীবানু এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির সময় ব্যবহৃত কাঁপড়, টিস্যুগুলো যদি যথাযথভাবে মুখ বন্ধ ডাস্টবীনে ফেলা না হয় এবং জীবানু মুক্ত না করে যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয় এবং কণুইর পরিবর্তে ব্যবহার করা হাত জীবানুমূক্ত না করে অন্য ব্যক্তি, বস্তু, বিশেষ করে দরজার হাতল/লক, কলিংবেল বা লিফ্ট এর সুইচ, সিড়ির হাতল ইত্যাদি স্পর্শ করে বা হাঁচি কাশির সাথে বের হওয়া কফ, থুথু ইত্যাদি যত্রতত্র ফেলে দেয় এবং সেগুলো যখন কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ হাত দ্বারা স্পর্শ করে এবং সে হাত জীবানুমুক্ত না করে ঐ হাত ব্যবহার করে কোন খাদ্য গ্রহন করে বা অন্য কাউকে খাদ্য পরিবেশন করে বা তিনি নিজের হাত দ্বারা তাঁর নিজের বা অন্যের মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করে, তখন ভাইরাস জীবানু তার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাক, মুখ বা চোখ দিয়ে দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
করোনা ভাইরাসের আক্রমণের লক্ষ্যস্থলই হল মানবদেহের(স্তন্যপায়ী প্রাণীদের) শ্বাসযন্ত্র অর্থাৎ ফুসফুস্। মানুষসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে এই ভাইরাস দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে শ্বাসযন্ত্রকে আক্রমণ ও তদস্থানে বংশবিস্তার করার মাধ্যমে শ্বাস–প্রশ্বাস প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় এবং ক্রমান্বয়ে মানুষসহ স্তন্যপায়ী প্রাণীরা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে থাকে।
মানুষসহ সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শ্বাসযন্ত্র উল্টো গাছের মত। বর্ণনার সহজতর করার সুবিধার্থে পরবর্তীতে স্তন্যপায়ী কথাটি বাদ দিয়ে শুধু মানুষের কথাই আলোচনা করা হয়েছে।
আমাদের শ্বাস গ্রহণের সময় এবং খাদ্য গ্রহনের সময় বায়ু নি:শ্বাসের সাথে ও খাদ্য দ্রব্যের সাথে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া জাতীয় রোগজীবানু, বিষাক্ত বস্তু, ধুলোবালু ইত্যাদি বস্তুও আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় Foreign Materials বলে এবং ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফ্যঙ্গাস, প্যারাসাইটস ইতাদিকে প্যাথোজেনস (Photogenes) বলে এবং প্যাথোজেনস হতেই প্যাথোলজি কথাটার উৎপত্তি।
ধুলাবালি (Soil Particles) ব্যাকটোরিয়া, ফ্যঙ্গাস, প্যারাসাইটস ইত্যাদি জীবানু বহন করে মানব দেহে নিয়ে যায় বলে এ সকল Foreign Materials কেও প্যাথোজেনস বলা যেতে পারে। প্যাথোজেনস আমাদের মুখ, নাক, চোখ দিয়ে ঢুকে পড়লে যাতে পরবর্তী ধাপ হতেই এদেরকে ধ্বংস করা যায় সৃষ্টিকর্তা এ জন্য আমাদের শরীরে বিভিন্ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (Defense Systems) বিদ্যমান রেখেছেন। আমরা এখানে শুধু করোনাভাইরাস সংশ্লিষ্ট মানব দেহের শ্বাসযন্ত্র (Respiratory Tract) নিয়েই আলোচনা করব।
শ্বাসযন্ত্রের গঠণ, কার্যক্রম এবং ধুলা বালি ও প্যাথোজেনস্ এর আক্রমণ
করোনাভাইরাস (COVID-19 Coronavirus) মানব দেহের শ্বাসযন্ত্রকে কিভাবে আক্রান্ত করে এবং কিভাবে একটি নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লড়াই করে সুস্থ্যতা এনে দেয় বা পরাজিত হয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় তার বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণার জন্য আমাদের জানা প্রয়োজন মানবদেহের শ্বাসযন্ত্রের গঠণ, কার্যক্রম ও ধুলা বালি ও প্যাথোজেনস্ সমূহ দ্বারা কিভাবে আমাদের দেহ আক্রান্ত হয়।
মানুষসহ বেশীরভাগ স্তন্যপ্রায়ী প্রাণীদের শ্বাসযন্ত্র গাছটির ৩টি অংশ।
- ১। উপরের অংশ: মুখ গহ্বরের উদ্ধাংশ, সাইনাস অর্থাৎ চোখ ও কপালের ভিতরের খোলা অংশ, নাক ও নাসান্দ্র এবং নাকের ভিতরের বায়ু পথ, গলদেশ।
- ২। শ্বাসযন্ত্রের বায়ুর পথ: ভয়েস বক্স বা ল্যারিনেক্স, শ্বাসনালী বা ট্রাকিয়া (Trachea), ব্রোঙ্কি এবং ব্রোঙ্কিওলস।
- ৩। ফুসফুস: শ্বাস প্রশ্বাসের ব্রোঙ্কিওলস, আলভোলার নালী, আলভোলার স্যাকস এবং অ্যালভিওলি।
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি দিনে ১৩০০০ লিটার নিঃশ্বাস গ্রহন করে এবং সমপরিমান শ্বাস ফেলে।
শ্বাস গ্রহনের সময় নাক এবং মুখ গহ্বরের উপরে দিয়ে বা চোখের সংস্পর্শে আসার কারণে চোখ দিয়ে ঢুকে পড়া করোনাভাইরাস সহ অন্য ভাইরাস, ব্যাকটোরিয়া ধুলা বালি ফুসফুসে যাওয়ার পথে গলদেশে উষ্ণ এবং আর্দ্র হয়।
নাকের মধ্যে প্রবেশ করার সাথে সাথে পার্টিকুলেট পদার্থগুলো একইভাবে আর্দ্র হয়। বড় কণাসমূহ নাকের প্রবেশদ্বারে নাকের পশম দ্বারা ফিল্টার করা হয় এবং নাক ঝাড়ার সময় এ সকল ধুলোবালির বড় কণিকাসমূহ শ্লেষকের সাথে অথবা নাক ধোঁয়ার সময় নাকে পানি দিয়ে পরিস্কার করা হয়।
বিশেষ করে মুসলিমদের নামাজ, ধর্মগ্রন্থ পাঠে বা অন্যান্য ইবাদতের পূর্বে অযু এবং গোছল করার সময় এ পদ্ধতিতে ৩ বার করে নাক পরিস্কার করার নিয়ম রয়েছে। অন্য অনেক ধর্মেও ইবাদতের পূর্বে পবিত্র হওয়ার এ নিয়ম থাকতে পারে। এর ফলে নাকের ভিতরের লোম বা পশমে আটকিয়ে থাকা প্যাথোজেনসসমূহ সহজে পরিস্কার হয়ে যায়।
গলদেশ ও চুক্ষু দিয়ে প্রবেশকৃত রোগ জীবানু ও পার্টিকুলেট ম্যাটারিয়ালগুলো আর্দ্র ও গরম হয়ে শ্বাসনালীতে যাওয়ার পথে বড় বড় পার্টিকুলেট ম্যাটেরিয়ালগুলো ও রোগ জীবানু বেশ সময় ধরে গলদেশে লেগে থাকে এবং তখন গলায় কি যেন লেগে আছে – এমন অনুভূত হলে মানুষ কাশি বা গড় গড় করে গলদেশ পরিস্কার করার মাধ্যমে সেগুলো থুথুর সাহায্যে বের করে ফেলে।
মুসলিমগণ অযু এবং গোসল করার্ সময় এ প্রদ্ধতিতে ৩ বার করে গড় গড় করে গলদেশের নিন্মভাগ পরিস্কার করার নিয়ম রয়েছে। অন্য ধর্মেও এ নিয়ম থাকতে পারে। এর ফলে গলদেশের ভিতরের উষ্ণ ও আর্দ্র অবস্থায় লেগে থাকা প্যাথোজেনসসমূহ সহজে পরিস্কার হয়ে যায়।
অনেকের প্রশ্ন ঠান্ডা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক কিনা। হাঁ, ঠান্ডা শ্বাসযন্ত্রের কেমোসেনসেভিটি বা রাসায়নিক সংবেদনশীলতার প্রকাশ ঘটায় এবং মানব দেহের হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় (Pulmonary Vascular Disease)। মানবদেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা সাধারনত ৩০ ডিগ্রী সেন্টিগেড থাকে, এর কম তাপমাত্রার কোন বস্তু বা বায়ু মানব দেহে প্রবেশ করলে দেহ কোষেরও তাপমাত্রা হ্রাস করে দেয়, তখন দেহ কোষ চুপসে যায় এবং কাজ করতে পারে না।
পক্ষান্তরে গরম জল বা খাদ্য গ্রহনে বা গরম শ্বাস গ্রহন করা হলে দেহের অভ্যন্তরীণ কোষসমূহ উদ্ধিপ্ত হয় এবং সক্রিয় হয় এবং রোগ জীবানু ধ্বংসহ দেহের বিপাক ক্রিয়া (Metabolism) অত্যন্ত সক্রিয় হয়।
বিপাক ক্রিয়া হল দেহের অভ্যন্তরে সংগঠিত রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহ যার মাধ্যমে খাদ্য পরিপাক হয়, পরিপাককৃত খাদ্য হতে শক্তিতে পরিবর্তন বা শক্তি উৎপন্ন হয়, রক্তে মিশে ও রক্তের মাধ্যমে জীবকোষসমূহে পরিবাহিত হয় এবং জীবকোষ সমূহের অভ্যন্তরেও বিপাক ক্রিয়া চলতে থাকে, শরীরের অপ্রয়োজনীয় ও উচ্ছিষ্ট দ্রব্যাদি শরীর হতে বের করে দেয়।
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা বিষাক্ত পদার্থ (Xenobiotics) ধ্বংস করে কিডনির মাধ্যমে বের করে দেয়। বিষাক্ত পদার্থসমূহ সাধারনত মানবদেহের অভ্যন্তরে প্রবেশের প্রবেশদ্বারে যেমন, ত্বক, ফুসফুস, লিভার, কিডনি ও খাদ্যনালীতেই ধ্বংস করে দেয়, এক্ষেত্রে লিভারই মূখ্য ভূমিকা পালন করে।
মূল কথা বিপাক ক্রিয়া হল দেহের অভ্যন্তরীন সকল রাসায়নিক ক্রিয়া বিক্রিয়া যার দ্বারা বেঁচে থাকা, দেহ কাঠামোর মজবুত ও বৃদ্ধি, শক্তি উৎপন্ন হওয়া এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিকাশ ঘটে।
এ জন্যেই ঠান্ডার পরিবর্তে গরম খাদ্য গ্রহন ও গরম জলীয পান করা উচিত এবং বিশেষজ্ঞ পর্যায়েও খাওয়ার আধা ঘন্টা পর গরম জল এবং অসুস্থ্য রোগীদের, বিশেষ করে শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত রোগীদেরকে গরম জল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। অসুস্থ্য অবস্থায় গরম জল সেবনে স্বস্থিও অনুভূত হয়।
স্যোসাল মিডিয়ায় ব্যপক প্রচার রয়েছে যে,বার বার গরম পানীয় পান করার মাধ্যমে এবং নাক, মুখ দিয়ে গরম পানির বাষ্প গ্রহনের মাধ্যমে অথবা গরম পানি দ্বারা গড় গড় করার মাথ্যমে এই ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর পরবর্তীতে ভাইরাস হতে মুক্তি ঘটেছে অর্থাৎ পরবর্তী পরীক্ষায় নেগেটিভ পাওয়া গিয়েছে।
এর একটি কারণ হতে পারে করোনাভাইরাস যেহেতু মুখ, নাক বা চোখ দিয়ে মানুষের দেহে প্রবেশ করে আর্দ্র ও উষ্ণ অবস্থায় কিছু সময় গলদেশে অবস্থানসহ শ্বাসযন্ত্রের উদ্ধাংশে গড়ে ৫ দিন অবস্থান করে এবং ভাইরাসটির উপরের আবরণ এসিডের প্রলেপ দ্বারা তৈরী সেহেতু গরম পানীয় বা গরম বাষ্পে বা গরম জলে গড়গড় করলে এসিডের উপরের আবরণ গলে যায় বলে ভাইরাস ধ্বংস হয়ে যায় এবং গরম পানীয় ও বাষ্পে শরীরে অভ্যন্তরীণ মানব কোষগুলো সক্রিয় হয়।
আবার অনেকে গরম পানির সাথে মধু ও লেবুর রস মিশানোর জন্য উপদেশ দিয়ে থাকেন। মধু অত্যন্ত শক্তিশালী এন্টিব্যাকটোরিয়াল, এন্টিভাইরাল এবং এন্টিঅক্নিডেন্ট উপাদান সমৃদ্ধ এবং অত্যন্ত শক্তিশালী, যার ফলে মধু ব্যাকটোরিয়া এবং ভাইরাসের বীরুদ্ধে খুবই কার্যকরী।
ইহা ছাড়াও মধুতে ভিটামিন – কে, ডি ও ই রয়েছে এবং এই তিনের সমষ্টিকে বেটা- কেরোটিন (beta-carotene) বলা হয় যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নাসান্দ্র পরিষ্কার রাখে ও শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহের বীরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী।
আর লেবুর রসে প্রচুর পরিমান এন্টিঅক্নিডেন্ট ও ভিটামিন সি রয়েছে। এন্টিঅক্নিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরে অভ্যন্তরে কোন কোন বিষাক্ত পদার্থ প্রবেশ করলে, উহার ভিত্তিগত (Radical) ভেঙ্গে ধ্বংস করে দেয়, দেহের অভ্যন্তরীণ প্রদাহ (Infection)) প্রতিরোধ ও সারিয়ে তোলে, হৃদয় রোগ, ডায়াবেটিস, পার্কিংসন্স রোগ প্রতিরোধী ও উপকারী।
ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভাইরাস ও ব্যাকটোরিয়ার আক্রমণ হতে সুরক্ষা দেয় এবং দেহের ত্বক, শ্বাসনালীসহ দেহের অভ্যন্তরীণ সকল অঙ্গের ভিতরের ও বাহিরের কাঠামো গঠনের এপিথেলিয়াল কোষ (epithelial cells) ও ভাইরাস, ব্যাকটোরিয়া ইত্যাদি প্যাথোজেন এর মাঝে একটি প্রতিরোধ মূলক পর্দা তৈরী করে সুরক্ষা দেয়।
ফলে এক গ্লাস গরম পানির সাথে কয়েক ফোটা লেবুর রস, এক টেবিল চামচ মধু গলা ব্যথা, মুখের ভিতর ভাইরাল প্রদাহ, কফের সমস্যা দূরীকরণসহ শ্বাসযন্ত্রসহ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নানাবিধ উপকরেী ( HEALTHYSAB and PUbMed) এবং দেহের অভ্যন্তরের তড়িৎ শক্তির উৎপাদক (energy booster)ও বটে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের মধু না খাওয়াই ভাল এবং যাদের ডায়াবেটিস নাই তারাও সন্ধ্যার পর মধু ছাড়া গরম জলে লেবুর রস দিয়ে পান করাই উত্তম।
যা হোক বলছিলাম ভাইরাস মানব দেহে প্রবেশের বিষয়টি, গলদেশে আর্দ্র ও উষ্ণু হওয়া রোগ জীবানু ও পার্টিকুলেট ম্যাটারসমূহ পরবর্তীতে শ্বাসনালী বা ট্রাকিয়া প্রবেশ করে। ট্রাকিয়ায় অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চুলের ন্যায় চিলিয়া (Cilia) নামক বিলিয়ন বিলিয়ন তন্তু থাকে যে গুলো প্রতি মিনিটে ১৩০০০ বীটের গতিতে উপর নীচে চলতে থাকে এবং ঝাড়ুর মতো কাজ করে।
মানব দেহের ডান ফুসফুসে ৩টি এবং বাম ফুসফুসে ২টি লুব থাকে। প্রধান শ্বাসনালী (Trachea) ডান ও বাম ফুসফুসে ২ ভাগে বিভক্ত হয়, ইহাকে ব্রোঙ্কি (bronchi) এবং ব্রোঙ্কি ২টি ফুসফুসে সূক্ষ্ম এবং সুক্ষতর টিউবগুলিতে বিভক্ত হয়, এই গুলোকে ব্রোঙ্কিওলস (bronchioles) বলা হয়। ব্রোঙ্কিওলস বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ু থলি (air sacs) এর সাথে যুক্ত থাকে, ঐ গুলোকে অ্যালভেওলি (alveoli)বলা হয়। একজন স্বাস্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্কের ফুসফুসে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন আলভেলি থাকে।
অ্যালভেওলিতেই নি:শ্বাসের সাথে গ্রহনকৃত অক্সিজেন (O2) এবং দেহ কোষে উৎপাদিত কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) এর আদান প্রদান হয়। অ্যালভোলিগুলোর গায়ে চলন্ত রক্তের একটি পাতলা শীট পরিচালিত হয়, রক্তের পাতলা শীট প্রবাহিত হওযার সময় রক্ত নি:শ্বাসের সাথে ফুসফুসে প্রবেশকৃত বায়ু হতে অক্সিজেন অনু গ্রহন করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড নি:সরণ করে।
ব্রোঙ্কিওলস ও অ্যালভোলিওগুলোর অনবরত সংকোচন-প্রসারণ এবং চিলিয়াগুলোর উপর নীচ অবিরামভাবে দ্রুত গতিতে চলমান থাকার ফলে নি:শ্বাসের সাথে অক্সিজেন সমৃদ্ধ বায়ু নাক, মুখ হয়ে গলা, শ্বাসনালী, ব্রোঙ্কি, ব্রোঙ্কিওলস ও অ্যালভেওলিগুলোতে প্রবেশ করে এবং তথা হতে দেহের কোষসমূহের জৈবিক ক্রিয়ার ফলে উৎপাদিত কার্বন ডাই অক্সাইড রক্ত দ্বারা পরিশোধিত হয়ে ফুসফুসের অ্যালভেওলিগুলোতে নি:সরিত হয় – একই পথে বিপরীত মুখী বায়ু প্রবাহের মাধ্যেমে নাক, মুখ দ্বারা বায়ুতে নি:সারিত হয়- মূলত ইহাই শ্বাস-প্র:শ্বাস যা অবিরামভাবে মানবদেহে চলতে থাকে।
উল্লেখ্য যে, দেহের অভ্যন্তরে রক্ত পরিবহনের জন্য দু’রকম রক্তনালী থাকে, যে সকল রক্তনালী শরীরেরে বিভিন্ন কোষ হতে দুষিত রক্ত(CO2 বাহিত রক্ত) হার্টের মাধ্যমে ফুসফুসে নিয়ে আসে সে সকল রক্তনালীকে বলা হয় শিরা (Vein)এবং যেগুলো ফুসফুস হতে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত দেহের বিভিন্ন কোষ পর্যন্ত পরিবহন করে সে গুলোকে বলা হয় ধমণী(Artery)।
রক্তের লোহিত কণিকা (Red Cells) ফুসফুস হতে অক্সিজেন বহন করে এবং ফুসফুসে কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে আসে। আর হার্ট (Heart) দেহের বিভিন্ন অংগ হতে দূষিত রক্ত ফুসফুসে নিয়ে আসা ও ফুসফুস হতে দেহের বিভিন্ন অংগে নিয়ে যাওয়ার কার্যক্রম ৪টি ভাল্বের পর্যাক্রমিক সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে ( পর্যাক্রমিকভাবে ২টির সংকোচন ও প্রসারণ, আবার পরবর্তীতে প্রসারণ ২ টির সংকোচন ও সংকোচিত ২টির প্রসারণ ) নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মোট কথা হার্ট দেহের রক্ত চলাচলে পাম্প হিসাবে কাজ করে, যা থেমে যাওয়া মানে রক্ত চলাচল বন্ধ। ইদানিং চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে মানবদেহের অকেজো, অক্ষম হার্ট বা হার্টের ভাল্ব কৃত্রিম হার্ট বা ভাল্বের প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।
মানবদেহের গলদেশ হতে ব্রোঙ্কিওলস পর্যন্ত বিস্তৃত শ্বাসনালীর অভ্যন্তরীণ সিলিয়াসমূহের অবিরাম ভাবে দ্রুত ঝাঁকুনির ফলে এবং শ্বাসনালীর ক্রমশ: সরু হওয়ার কারণে এবং শ্বাসনালীর ক্রমান্বয়ে বড় হতে ছোট হওয়ায় উহার স্থানে স্থানে ধুলোবালি ও অন্যান্য Foreign ম্যাটেরিয়ালগুলো জমা হতে থাকে এবং লুমেনার সংকোচন ও প্রসারনের ফলে সেগুলো কাশি, কফ, শ্লেষ্মার মাধ্যমে বের করে দেওয়া হয়।
কিন্তু ৫ মিলি মিটারের কম আকারের ধুলো কণা, বিষাক্ত পদার্থ, ব্রোঙ্কিও এবং ব্রোঙ্কিওলসে প্রবেশ করে। ব্রোঙ্কিওলস হতে অ্যালভোলিগুলোতে প্রবেশের পূর্বে বাযু ব্রোঙ্কিওলসে বেশ কিছু সময় ধরে জমা থাকে এবং এ সময় ব্রোঙ্কিও ও ব্রোঙ্কিওলসের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে ১ মাইক্রোমিটার সাইজের উদ্ধের ধুলোকণাগুলো তথা হতে হাঁচি কাশির মাধ্যমে কফ, শ্লেষ্মার সাথে বের করে দেওয়া হয় এবং ১ মাইক্রোমিটার হতে ছোট কণাগুলো অ্যালভোলিগুলোতে প্রবেশ করতে পারে এবং তথায় জমা হতে থাকে। বিষাক্ত পদার্থগুলো দ্রুত রক্তে মিশে যায়।
আর রোগ জীবানু গুলোর মধ্যে কতকগুলো রক্তের সাথে মিশে দেহের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে, কতক অ্যালোভেলিওতে প্রদাহ (Infection) সৃষ্টি করে। ইহাতে অ্যালোভেলিওগুলো ফুলে যায় বা আকারে অত্যধিক বড় হয়ে যায়। ফলে সেগুলো সংকোচিত হতে পারে না, এমেন অবস্থায় মানুষ শ্বাস গ্রহন করতে পারে, কিন্ত শ্বাস ফেলতে পারে না।
ফলে অ্যালিওভ্যালিগুলো বায়ুতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় ও মানুষের শ্বাস কষ্ট হতে থাকে, বুকে ও পিঠে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করতে থাকে। শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার ফলে শরীরে অক্সিজেন প্রবাহ হ্রাস পেতে থাকে এবং অক্সিজেনের অভাবে শরীরে অংগগুলো অবস বা নিষ্ক্রিয় হতে থাকে। এমন এক পর্যায়ে হার্ট থেমে যায়, মস্তিষ্ক ও কিডনির বিপর্যয় ঘটে এবং মানুষের মৃত্যু ঘটে।
ভাইরাস বা ব্যাকটোরিয়া মানবদেহে প্রবেশের পর হতে একবারে অ্যালভিওলি পর্যন্ত শ্বাসনালীর ভিতরের দেওয়ালের কোষ ও রক্ত কোষকে আক্রান্ত করতে চেষ্টা চালাতে থাকে।
কোন কারণে মাত্রারিক্ত ধুলো বালি, দুষিত বায়ু বা ধুমপানের ফলে কার্বন সমৃদ্ধ বিষাক্ত বায়ু আমাদের শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করলে সেগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে পরিশোধন ও মাত্রারিক্ত শ্বাসযন্ত্রের সংকোচন ও প্রসারনের ফলে বার বার কাশি দিতে হয় এবং ক্রমেই আমাদের শ্বাসযন্ত্রের সংকোচন ও প্রসারণের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পেতে থাকে।
রোগ জীবানু শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশের পর হতেই সেগুলো নাক, গলা হতে শুরু করে অ্যালিভলি পর্যন্ত বিভিন্ন অংগকে আক্রান্ত করতে করতে অগ্রসর হয় এবং তথায় বংশবৃদ্ধি করে (যদি না শরীরের ইমুনো শক্তি লড়াই করে এদেরকে পরাস্ত করতে না পারে) এবং অংগগুলোর দেওয়াল পাতলা করে প্রসারণ ঘটায় অর্থাৎ ফুলিয়ে ঐগুলোর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট করতে থাকে।
এ পর্যায়ে মানুষ শ্বাস গ্রহন করতে পারে, কিন্তু স্বাভাবিকভাবে বের করতে পারে না, তখন সেগুলো বের করে দিতে জোরে জোরে কাশি দিতে হয় এবং জোরে চাপ দিয়ে প্রশ্বাস বের করতে হয় এবং জোরে জোরে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে হয়। মানুষের এ প্রর্যায়টি প্রাথমিকভাবে ব্রোঙ্কি, ব্রোঙ্কিওলসে সংগটিত হয় বলে ইহাকে ব্রঙ্কাইটিস শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বলে।
মূলত: ব্রঙ্কাইটিস নামক অবস্থাটি প্রশ্বাসের সাথে স্বাভাবিকভাবে বায়ু বের করতে না পারার অক্ষমতা, নাকের ডগা হতে ব্রোঙ্কিওলসগুলি পর্যন্ত শ্বাসযন্ত্রের প্রসারণের ফলে ইহা ঘটে। তীব্র ব্রঙ্কাইটিসের ফলে শ্বাসকষ্টজনিত জ্বালা অনুভূত হয়। এটি অ্যালার্জির কারণেও হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় বিশুদ্ধ পরিবেশে অবস্থান করা না হলে, ধুমপান বদ্ধ করা না হলে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহন করা না হলে-ইহা ধীরে ধীরে জটিল হয়ে উঠে এবং জীবনের মধ্যপথের এসে জটিল আকার ধারন করে।
এ রোগের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হ’ল কাশি এবং ক্রমাগত কাশি যা ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং সবসময় বা মাঝে মাঝে দেখা দিতে পারে। কফ বা শ্লেষ্মা প্রায়শই স্নিগ্ধ ও পরিষ্কার হতে পারে বা পুঁজ বা রক্তের সংমিশ্রণও থাকতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগটিকে প্রাথমিক অবস্থায় গুরুত্ব দেওয়া হয় না বলে রোগী গুরুতর অসুস্থ বা অক্ষম না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা নেওয়া হয় না। বিধায় ইহা ক্রমশই জটিল আকার ধারণ করে।
সাধারনত পুরুষেরা জীবিকার তাগিদে মাঠে-ঘাটে এবং দূষিত পরিবেশে কাজ করতে হয় বলে এবং মহিলাদের তুলনায় পুরুষেরা অধিক ও শৃঙ্খল ধুমপায়ী (Chain smoker) বলে-এই রোগ মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে প্রায় ৪ গুণ বেশি ঘটে এবং গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দাদের তুলনায় শহরবাসীর মধ্যে বেশি দেখা যায়।
ধুমপান আসলে আমাদের শরীরে সম্মূখের অক্সিজেন সমৃদ্ধ বায়ু, যা নাক ও মুখ দিয়ে আমাদের শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশের অপেক্ষামান থাকে বা আমরাদের শ্বাসযন্ত্র গ্রহণ করার প্রস্তুতি নেয়, তা পুড়ে ফেলে। কোন কিছু পুড়তে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় এবং অক্সিজেন পুড়ে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) ও কার্বন মনো অক্সাইড (CO) উৎপন্ন হয়।
বিশ্বে যতগুলো বিষাক্ত গ্যাস রয়েছে তার মধ্যে কার্বন মনো অক্সাইড অন্যতম। আর কার্বন ডাই অক্সাইড তো আমাদের দেহের বিষাক্ত গ্যাস বলে আমরা প্রশ্বাসের সাথে বের করে দিচ্ছি এবং প্রয়োজনীয় অক্সিজেন গ্রহন করছি।
ধুমপানের কারণে আমরা অক্সিজেন এর পরিবর্তে তামাক ও কাগজ পোড়ানোর ফলে উৎপন্ন শুধু কার্বন ডাই অক্সাইড ও বিষাক্ত কার্বন মনো অক্সাইড গ্রহন করছি না, অধিকন্ত গরম ধোঁয়া নাক দিয়ে বের হওয়ার কারনে ও ফুসফুসের অ্যালভোলিগুলো পর্যন্ত পোঁছে যাওয়ার কারণে নাক হতে অ্যালভোলিগুলো পর্যন্ত শ্বাসযন্ত্রের এই দীর্ঘ পথে থাকা অক্সিজেনও আংশিকভাবে পুড়ে ফেলে। অক্সিজেন পূর্ণ পোড়ানোর ফলে কার্বণ ডাই অক্সাইড এবং আংশিক পোড়ানোর ফলে কার্বন মনো অক্সাইড বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয়।
গাড়ীর ইঞ্জিন কর্তৃক অক্সিজেন আংশিক পুড়ে কার্বণ মন অক্সাইড উৎপন্ন হয় বিধায় ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে দুই স্টক ইঞ্জিনের গাড়ী নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অন্য সকল গাড়ীতে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইড পূর্ণরূপে পুড়িয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করা জন্যই কার্বেলেটর সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে (বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে আর পূর্বেই করা হয়েছে)। ইহাতে সহজেই অনুমেয় যে আসলে ধুমপানের মাধ্যমে ধুমপায়ীগণ মূলত: বিষাক্ত কার্বন মনো অক্সাইডই (CO)সেবন করছে।
ব্রঙ্কাইটিস শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের শ্বাসযন্ত্র পূর্ব হতেই দূর্বল থাকার কারণে দেহ কোন ভাইরাস বা ব্যাকটোরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে ভয়াবহ আকার ধারণ করে এবং তখন ইমুনো শক্তি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তেমনভাবে কাজ করতে পারে না বা কাজ করতে করতেই রোগী আশংকাজনক অবস্থায় পতিত হয় এবং দ্রুত মৃত্যু ঘটে। এজন্যেই বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে নারী অপেক্ষা পুরুষদের মৃত্যুর হার প্রায় ২ গুন বেশী এবং কম বয়সীদের তুলনায় পৌঢ়দের মৃত্যুর হার অনেক অনেক বেশী।
১২/০৪/২০২০ পর্যন্ত WORLDOMETER এর তথ্যমতে করোনাভাইরাসে (COVID-19 Coronavirus) বয়সানুযায়ী মৃত্যুর একটি পরিসংখ্যান দেয়া হল:
বয়স |
মৃত্যুর হার |
০-৯ বছর পর্যন্ত | বিবেচণাযোগ্য নয় |
১০- ৩৯ বছর পর্যন্ত | ০.২% |
৪০-৩৯ বছর পর্যন্ত | ০.৪% |
৫০- ৫৯ বছর পর্যন্ত | ১.৩% |
৬০- ৬৯ বছর পর্যন্ত | ৩.৬% |
৭০- ৭৯ বছর পর্যন্ত | ৮% |
৮০ বছরের উর্দ্ধে | ১৪.৮% |
করোনাভাইরাস (COVID-19 Coronavirus) দ্বারা কিভাবে মানব দেহ আক্রান্ত হয়
ম্যাসেচুয়েটে জেনারেল হাসপাতালের সংক্রমক রোগের প্রবীণ চিকিৎসক ডা: মার্টিণ এস হারি বলেন যে, “করোনাভাইরাস (COVID-19 Coronavirus) টির বিষয়ে আরও বহু কিছু জানার আছে, তবে ভাইরাসটির পরিবার ভূক্ত ১৩ বছর আগে দেখা দেওয়া অপর সদস্য সার্স (SARS-CoV) করোনাভাইরাসের ন্যায় আচরণ করছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।”
করোনাভাইরাস (COVID-19 Coronavirus) টি মানুষের দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশের পরেই আক্রমণ শুরু করে দেয়।
হারিছ বলেন যে,” ভাইরাসটি মানবদেহে প্রবেশের পর হতে ১৪ দিনের মধ্যে এর আক্রান্তের লক্ষণ দেখা দেয়।”
বলে রাখা ভাল যে, ভাইরাস কোন পূর্ণাঙ্গ জীবকোষ নয়, এগুলো হল পরজীবি অর্থাৎ অন্য কোষকে ধ্বংস করে অধিক সংখ্যক ভাইরাসে রূপান্তরিত করতে শক্তি প্রয়োগ করে। মূলত: এদের কোন নিউক্লিয়াস নাই। তাই পূর্ণাঙ্গ কোষ নয়- এই জন্য জীব বিজ্ঞানীরা ইহাকে জীব বা প্রাণীতে বিভক্ত করতে পারেনি।
তাই একটি ভাইরাস নিজে আরেকটা ভাইরাস উৎপাদনের সক্ষমতা নাই। এরা মানব কোষের নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে কোষের জেনেটিক বস্তুগুলোকে দখল করে নেয় এবং সেগুলোকে ব্যবহার করে বংশ বিস্তার করতে থাকে।
করোনাভাইরাস (COVID-19 Coronavirus) (অন্যান্য ভাইরাস/ব্যকটোরিয়াও) মানব দেহে প্রবেশ করা মাত্রই মানব কোষকে আক্রমণ করে এবং বংশ বিস্তার শুরু করে দেয়। তখন ঐ গুলোর গঠন দেখে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাঠামো সেগুলোকে চিহ্নিত করে ফেলে এবং রক্তের শ্বেত কণিকা (Blood White cells), যাদেরকে লিম্পোসিটও বলা হয় এবং প্রাণীদেহের সৈনিক হিসাবে কাজ করে এবং রোগ জীবানুর বীরুদ্ধে এন্টিবোডি (antibodies)তৈরী করে, তাদেরকে সংকেত দেয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সংকেত পাওয়া মাত্রই রক্তের শ্বেত কণিকা সেগুলোকে আক্রমণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আক্রান্ত জীবকোষকে বাহির হতে শক্তি যোগায়। মানুষের রক্তে বিলিয়ন বিলিয়ন শ্বেত কণিকা রয়েছে, কিন্তু সমস্যা হল সকল শ্বেত কণিকা একইরূপ এন্টিবোডি তৈরী করতে পারে না। এ জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী হলে দেহে প্রবেশকৃত ভাইরাসসমূহকে (ব্যাকটোরিয়াও) ধ্বংস করে দেয় এবং রক্ত হতে কিডনির মাধ্যমে শরীর হতে নি:সরিত করে দেয়।
কোন রোগের ভাইরাস বা ব্যকটেরিয়ার বীরুদ্ধে লড়াই করে সহজে জয় লাভের জন্য পূর্বেই ঐ রোগের এন্টিবডি মানব দেহে প্রবেশ করানো হয়, আর তা হল টিকা বা ভ্যাসকিন। যদিও COVID-19 এর টিকা বা ভ্যাসকিন এখনও আবিস্কিৃত হয়নি।
ব্যাকটোরিয়া, ভাইরাস যাদেরকে প্যাথজেনস বলা হয়, তাদের দেহের বাহিরে এন্টিজেনস (antigens) নামক এক প্রকার বিশেষ প্রোটিন রয়েছে যেগুলোকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আক্রমণ করে। মূলত; এই এন্টিজেনেই করোনাভাইরাস এর দেহের চারিদিকে মুকটের সূচাঁলো অশের ন্যয় বাহিরের দিকে প্রলম্বিত থাকে।
যে সকল লোকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের দেহের রক্তের শ্বেত কণিকাসমূহ যুদ্ধে আর পেরে উঠতে পারে না এবং ভাইরাস জীবকোষসমূহের জেনেটিক পদার্থ ব্যবহার করে নতুন নতুন অনুরূপ অসংখ্য ভাইরাসের সৃষ্টি করতে থাকে এবং ক্রমান্বয়ে শ্বাসযন্ত্রের উপর হতে ফুসফুস পর্যন্ত সমস্ত অংশে আক্রান্ত করত: তথায় প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং কোন ব্যক্তির এ অবস্থাকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী বলা হয়।
করোনাভাইরাস (COVID-19 Coronavirus) নাক, মুখ বা চোখ দিয়ে মানবদেহে প্রবেশের পর হতেই শ্বাসযন্ত্রের উপর দিক হতেই দেহ কোষকে আক্রান্ত করা শুরু করে। এরা প্রথমেই মানবদেহের এপিথেলিয়াল কোষ (epithelial cells) কে আক্রমণ করে।
দেহের ত্বক, শরীরের ভিতরের বিভিন্ন অংগের বাহিরের ও ভিতরের কাঠামো, যেমন ত্বক, মুখ গহ্বর, নাক হতে শুরু করে গলদেশ হয়ে অ্যালিভোলিও পর্যন্ত শ্বাসযন্ত্রের ভিতরের ও বাহিরের ত্বকসহ মানব অংগসমূহের সকল অংগের বাহির ও ভিতরের ত্বক এপিথেলিয়াল কোষ দ্বারা গাঠত। এই কোষগুলো একটি অপরটির সাথে পাশাপাশি সুসংগঠিত (Linearly)ভাবে সংযুক্ত হয়ে কোন অঙ্গকে বাহির ও ভিতর হতে সুরক্ষা দেয় এবং অংগের কাঠামো গঠন ও নিয়ন্ত্রণ করে।
করোনাভাইরাসের এন্টিজেন (antigens) নামক প্রোটিন এপিথেলিয়াল কোষের প্রোটিনকে আক্রমণ করে এবং কোষের ভিতরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করতে থাকে। ভাইরাসটি দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশমাত্রই দেহের রোগ প্রতিরোধ কাঠামো সেগুলোকে চিহ্নিত করে ও রক্তের শ্বেত কণিকাকে সংকেত পাঠানো মাত্রই শ্বেত কণিকা সেগুলোকে আক্রমণ করে।
যুদ্ধে শ্বেত কণিকা পেরে উঠতে না পারলে বা পরস্পর যুদ্ধের সময়েই ভাইরাস মানব কোষে ঢুকেই অনুরূপ ভাইরাস উৎপন্ন করতে শুরু করতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত দেহের আক্রান্ত কোষটির মৃত্যু না ঘটৈ। ভাইরাসের সংখ্যাধিক্যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা পেরে উঠতে সময়ের প্রয়োজন হয়।
করোনাভাইরাস প্রথম পর্যায়ে শ্বাসযন্ত্রের উপরের অংশ যেমন নাক, মুখ, চোখ, গলা, শ্বাসনালী বা ট্রাকিয়া এবং ব্রোঙ্কিওগুলোকে আক্রান্ত করে। এই সময় মানুষের গলা ব্যথা, কপাল ব্যথা, শুষ্ক কাশি, জ্বর, ছোট ছোট নি:শ্বাস – প্র:শ্বাস, শুষ্ক কফ, মাংস পেশীর ব্যথা, শরীর ব্যথা ইত্যাদি হালকা লক্ষণ দেখা দেয়।
সাধারনত যাদের রোগ প্রতিরোধ কাঠামো (immune response) শক্তিশালী, তারা তাদের দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশকৃত ভাইরাসকে শ্বাসযন্ত্রের উপরের অংশেই পরাস্ত করতে সক্ষম হয় এবং ৫-৭ দিনের মধ্যেই সুস্থ্য হয়ে যায়।
সাধারনত শিশুদের রোগ প্রতিরোধ কাঠামো সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ৪০ বছর পর্যন্ত তা মোটামুটি অটুট থাকে যদি না অন্য কোন রোগে বিশেষ করে শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত না হয় বা আক্রান্তের অব্যহতি পূর্বে অন্য রোগে পতিত না হয় এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভবর্তী না হয়।
গর্ভবর্তী মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, কারণ তাদের দেহের ভিতরে আরেকটি দেহের গঠনে তখন রোগ প্রতিরোধ কাঠামো নাজুক অবস্থায় থাকে বিধায় এসময়ে এমনিতেই গর্ভবর্তী মায়েরা প্রসুতিকালীন ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়।
কোন আক্রান্ত ব্যক্তির প্রদাহ (infection) শ্বাসযন্ত্রের উপরের অংশ হতে নিন্মাংশে প্রসারিত হলে তা অত্যন্ত বিপর্যয় জনক পর্যায়ে পৌঁছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয়, দক্ষিণ–মধ্যাঞ্চল, পেনিসেলভিয়া ও নিউ জার্সির স্বাস্থ্যসেবা গিসিঙের (Geisinger) এর সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রেগা ডাবাহডেল এবং ডা. অমিত শর্মা বলেন যে, কিছু লোক খাদ্য পরিপাকতন্ত্র আক্রান্তের কথা জানায়, যেমন, বমি বমি ভাব এবং ডায়েরিয়ার কথা বলে। তবে করোনাভাইরাস আক্রান্তের ক্ষেত্রে এরূপ ঘটনা খুবুই বিরল।
নিন্মে COVID-19 আক্রান্তের হালকা বা মাঝারী, তীব্র ও সংকটপূর্ণ অবস্থার পর্যায় উপনীত হওয়ার বয়স ভেদে শতকরা হার প্রদর্শণ করা হল।
উপরের ছকে লক্ষণীয় যে, ১৩.৮০/% তীব্র আক্রান্তের ঘটনা এবং ৬.১% সংকটপূর্ণ আক্রান্তের ঘটনা এর কারণ, এক্ষেত্রে শ্বাসনালী বা বায়ুনালী হয়ে করোনাভাইরাস শ্বাসযন্ত্রের নিন্মাংশে প্রবেশ করার ফলে ঘটেছে এবং এই অংশেই ভাইরাসের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির (Growing) উপযুক্ত স্থান মনে করা হয়।
ডা. হারিছ বলেন যে,” করোনা ভাইরাসের প্রধান লক্ষ্যই হল ফুসফুস” ।
ভাইরাসটির সংখ্যা যখন দ্রুত বৃদ্ধি ঘটতে থাকে এবং বায়ুনালী হয়ে ব্রোঙ্কি, তার পর ব্রোঙ্কিওলস হয়ে ফুসফুসের অ্যালভিওলিগেুলো পর্যন্ত শ্বাসযন্ত্রের প্রতিটি স্তরের কোষসমূহ আক্রান্ত, ধ্বংস করে বংশবৃদ্ধি করতে করতে অগ্রসর হতে থাকে এবং প্রতিটি স্থানের কোষসমূহ সংশ্লিষ্ট স্থান আক্রান্ত হয়ে ফুলে উঠার কারণে বা প্রসারণ ঘটার ফলে প্রতিটি স্থানের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায়, ফলে শ্বাস নালীর সংকোচন ব্যহত হয় এবং শ্বাস নিতে পরেলেও তেমনভাবে শ্বাস ফেলতে পারে না বা আস্তে ফেলে।
রোগীর এ অবস্থাকে সংকটাপূর্ণ অবস্থা বা নিউমোনিয়া বলা হয়্। এই সময়ও দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সীমিত আকারে শ্বেত কণিকা যুদ্ধের জন্য প্রেরণ করতে থাকে। সীমিত আকারে প্রেরনের অর্থ হলো শ্বাস প্রশ্বাস বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় রক্ত চলাচলও এ সকল অংগে হ্রাস পেতে থাকে, তাই প্রয়োজনীয় শ্বেত কনিকা রক্তে আর আসার সুযোগ থাকে না বা সুযোগ হ্রাস পেতে থাকে।
নিউমোনিয়া হলো ছোট ছোট নি:শ্বাস ও কাশির সাথে কফ এবং ফুসফুসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুথলি তথা অ্যালভিওলি আক্রান্ত হওয়া।
কোন রোগীর নিউমোনিয়া হওয়ার অর্থ ফুসফুসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ু থলি তথা অ্যালভিওলিগুলো ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়া। এ সময়ে ভাইরাসগুলো অ্যালভিওলিগুলোর দেওয়ালের এপিথেলিয়াল কোষগুলোকে ধ্বংস করে দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটাতে থাকে।
ফলে অ্যালভিওলিগুলোর ওয়াল পাতলা হতে থাকে এবং এর কারণে উহাদের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হওয়ায় ফুলে উঠতে থাকে, যে গুলো আর সংকুচিত হতে পারে না বিধায় শ্বাস–প্র:শ্বাস কার্যক্রম ক্রমশ: বন্ধ হতে থাকে। এ পর্যায়েও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাঠামো যুদ্ধের জন্য শ্বেত কণিকা পাঠায় এবং যুদ্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট স্থানের জীব কোষগুলোকে শক্তি যোগায়। কিছু ভাইরাস রক্তের সাথে মিশে যায় এবং রক্তের হিমোগ্লোবিন নষ্ট করতে থাকে যাতে রক্তের অক্সিজেন বহনের ক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও লোপ পেতে থাকে। রক্তে মিশে ইহারা হার্টেও প্রদাহ সৃষ্টি করে।
আসলে ইহা মানব কোষ ও ভাইরাসের মধ্যে এক বিষম যুদ্ধ।
হারিছ বলেন, “কোন আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন-মরণ এ যুদ্ধের উপর নির্ভরশীল, ভাল ফল আসবে অর্থাৎ তিনি রোগমুক্ত হবেন যদি যুদ্ধে তার রোগ প্রতিরোধ কাঠামো (Immune system) জয়লাভ করে, নাকি তিনি মারা যাবেন অর্থাৎ তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পরাস্ত হয়।”
যুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারতে থাকলে অ্যালভিওলিগুলোর ওয়াল পাতলা হতে হতে স্থিতিস্থাপকতা সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার এক পর্যায়ে শ্বাস–প্র:শ্বাস কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, তখন রক্ত প্রবাহও সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং ফুসফুসের অক্সিজেন ও কার্বণ ডাই অক্সাইডের আদান প্রদানও বন্ধ হয়ে যায়।
রোগীর শ্বাসযন্ত্রের এই মারাত্বক বিপর্যকর অবস্থায় (Acute respiratory distress syndrome -ARDS) খুব অল্প সংখ্যক রোগী যাদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা থাকে এবং তখন তাদের দেহের সাথে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র (ventilator) সংযুক্ত করে বাহির হতে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।
রক্তে অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ হওয়ার ফলে অক্সিজেন এর অভাবে শরীরের বিভিন্ন অংগসহ হার্ট, কিডনি, ব্রেণ এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
যদি ফুসফসের অধিকাংশ নষ্ট হয়ে যায়, তখন শ্বাসযন্ত্রের কার্যক্ষমতা হরোনোর (respiratory failure) ফলে শরীরের অন্যান্য অংগগুলোও কার্যক্ষমতা হারায় এবং তখন রোগীর মৃত্যু ঘটে (organ failure and death)।
জন হপকিন্স মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ ডা. রামপিয়াল ভিসিডি জোর দিয়ে বলেন যে, “সাধারণত ৭০বছর বয়সের উর্দ্ধের এবং যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, সে সকল আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন সবচেয়ে হুমকিতে রয়েছে। অন্য যারা হুমকিতে রয়েছে, তাদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী, ক্যামথেরাপীর ক্যানসার রোগীদের জন্যও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ঝুকিপূর্ণ।”
তাই বয়স্কদের, যারা ইতোমধ্যে হার্ট ও শ্বাসযন্ত্রের রোগে ভুগছে এবং কেমোথেরাপী দেওয়া হয়েছে এমন ক্যানসারের রোগীদের ও গর্ভবতী মহিলাদেরকে খুবউ সাবধানে এবং সামাজিক দূরত্ব বঝায় রেখে চলাফেরা করতে হবে।
Ref:
1. Book: Environmental Toxicology (Second Edition) -By Ming-Hu Yu
2. Topic: What does the coronavirus do to your body? Everything to know about the infection process By
Javier Zarracina, and Adrianna Rodriguez, USA TODAY, Updated 11:00 p.m. BST Mar. 16, 2020
3. WIKIPEDIA, COre77, WebMD, PubMed Axis and Allies, www.biology-pages.info, antranik.org, Nature Reviews Immunology and HEALTHYSAB.,
4. Topic: Why a coronavirus vaccine is more than a year away, despite medical researchers’ progress by George Petras, Ramon Padilla, and Veronica Bravo, USA TODAY Updated 1:39 p.m. PDT Mar. 11, 2020