31 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ১০:৪৭ | ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলন কি এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
আন্তর্জাতিক পরিবেশ রহমান মাহফুজ

COP26: গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলন কি এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

COP26: গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলন কি এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ? (BBC অবলম্বনে)

রহমান মাহফুজ, প্রকৌশলী, পরিবেশ কর্মী, পরিবেশ এবং পরিবেশ অর্থনৈতিক কলামিষ্ট, সংগঠক এবং সমাজসেবী।

Parched earth

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে ৩১ অক্টোবর, ২০২১ হতে  স্কটল্যান্ডের বন্দর নগরী গ্লাসগোতে জাতিসংঘের ২৬তম জলবায়ু  সম্মেলন COP26 (26th Conference of the Parties) অনুষ্ঠিত হচ্ছে,  যা ১২ নভেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত চলবে।

গ্লাসগোতে চলমান সম্মেলনটি  আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে বদলে দিতে পারে।



COP26 কি এবং কেন এ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে?

কয়লা, তেল এবং গ্যাসের মতো মানুষের দ্বারা ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে কার্বণ নির্গমনের কারণে পৃথিবী উষ্ণ হচ্ছে।

ফলে দিন দিন জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলি – ঘূর্ণিঝড়, জ্বলোচ্ছ্বাস, বন্যা, তাপপ্রবাহ, এবং বনের আগুন ইত্যাদি – তীব্রতর হচ্ছে। গত দশকটি এ বিশ্ব রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণ ছিল এবং এ বিষয়ে বিশ্ববাসীর  কার্বণ নির্গমণ হ্রাসে যৌথ পদক্ষেপের প্রয়োজন।

পৃথিবী ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে
পৃথিবীর বার্ষিক গড় তাপমাত্রার সাথে ১৮৫০ সাল হতে ২০২০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর স্থল ভাগ ও মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির গড় তুলনা নিন্মে প্রদত্ত হলো:

World is getting warmer graphic
নোট: পৃথিবীর বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১৯৫১ হতে ১৯৮০ এর উপাত্ত হতে হিসাব করা হয়েছে।

এই COP26 সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে ২০০ টি দেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বণ নির্গমন কমানোর পরিকল্পনার জন্য বলা হয়েছে।

২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তিতে এদেশগুলির সকলেই  এ শতাব্দিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫° সে.  রাখার এবং ২° সে. এর বেশ  নিচে রাখতে সম্মত হয়েছিল – যাতে এ বিশ্ব  জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে পারে।

এর অর্থ হল ২০৫০ সালে কার্বণ নিট শূন্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত দেশগুলিকে কার্বণ নির্গমন হ্রাস করতে হবে।



COP26 এ কি করতে সম্মত হয়েছে?

অনেক দেশ শীর্ষ সম্মেলনের আগে কার্বণ নির্গমন কমানোর পরিকল্পনা করেছে, তবে নতুন ঘোষণার ঝাঁকুনি রয়েছে:

  • গাছ: ১০০ টিরও বেশি দেশের বিশ্ব নেতারা বন উজাড় মোকাবিলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গাছ প্রচুর পরিমাণে CO2 শোষণ করতে পারে। এর আগেও অনুরূপ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তবে এটি আরও ভাল অর্থায়নে করার প্রতিশ্রুতি।
  • মিথেন: ১০০ টিরও বেশি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন নিঃসরণ ৩০% কমানোর পরিকল্পনায় যোগ দিয়েছে। তবে বিশ্বের মিথেন নিঃসরণকারী বড়দেশ চীন, রাশিয়া এবং ভারত এ পরিকল্পণায় যোগ দেয়নি।
  • কয়লা: ৪০ টিরও বেশি দেশ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে, কয়লা বিদ্যুৎ হলো একক বৃহত্তম জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। তবে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সবচেয়ে কয়লা নির্ভর দেশগুলির মধ্যে কয়েকটি এ উদ্যোগে স্বাক্ষর করেনি।

অর্থ: বিশ্বের ৪৫০টি সংস্থা ১৩০ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার নিয়ন্ত্রণ করছে – বিশ্বব্যাপী প্রাইভেট সম্পদের প্রায় ৪০% – সবুজ প্রযুক্তিতে (“clean” technology) বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যেমন নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ শক্তি (renewable energy) উৎপাদনে।

COP26 এ কারা আছেন?

গ্লাসগোতে বিশ্বনেতা, আলোচক এবং সাংবাদিকসহ প্রায় ২৫,০০০ লোকের উপস্থিতি রয়েছে। তবে রাশিয়া ও চীনের প্রেসিডেন্টগণ সম্মেলনে যোগ না দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন। হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং হাজার হাজার জলবায়ু কর্মীগণ  সম্মেলনে যোগ  দিয়েছে এবং বিক্ষোভ করছে।

COP26  সংখ্যাগত বিবরণী

৩১ অক্টোবর, ২০২১ হতে  স্কটল্যান্ডের বন্দর নগরী গ্লাসগোতে জাতিসংঘের ২৬তম জলবায়ু  সম্মেলন COP26 (26th Conference of the Parties) অনুষ্ঠিত হচ্ছে,  যা ১২ নভেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত চলবে।

কারা কারা সেখানে জমায়েত হচ্ছে
বিশ্বের ২০০ টি দেশের ২৫০০০ প্রতিনিধিত্বকারী যুক্তরাজ্যের ১০,০০০ পুলিশ কর্মকর্তা আনুমানিক ১,০০,০০০ জলবায়ু বিক্ষোভকারী
উদ্দেশ্যসমূহ কি কি?
জলবায়ুর ধ্বংসাত্বক কার্যাবলী হতে এ পৃথিবীকে রক্ষা কল্পে এ শতাব্দিতে বিশ্ব তাপমাত্রা ১.৫° সে. এ সীমাবদ্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি পূণ;আদায়। আনুমানিক অংশগ্রহনকারী ২০০ টি দেশের নিকট হতে গ্রীণ হাউজ গ্যাস নির্গমণ কমানোর জন্য নতুন পরিকল্পনা চাওয়া হবে। প্যারিস চুক্তিতে প্রতিশ্রুত গ্রীণ হাউজ গ্যাস নির্গমণকারী ধনি দেশগুলোকে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ আদায়ে বাধ্য করা

বিশ্ববাসী জলবায়ু সমস্যার সমাধানে কিভাবে একমত হতে পারে?

অর্থ এবং জলবায়ু ন্যায়বিচার সম্পর্কে অনেক কথা আশা করি। উন্নয়নশীল দেশগুলি জনসংখ্যার মাথাপিছু কম দূষণ করে এবং অতীতে বেশিরভাগ গ্রীণ হাউজ গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী নয়।

কিন্তু তারা জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ প্রভাবে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ।

Family in floodwater in Bangladesh
গ্রীণ হাউজ গ্যাসের নির্গমন কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তাদের অর্থের প্রয়োজন। এর অর্থ হতে পারে যে দেশগুলি কয়লা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ শক্তির উপর নির্ভর তাদের  আরও বেশি সৌর প্যানেল স্থাপন করা এবং বন্যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।



এ সম্মেলণে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষতিপূরণ নিয়েও লড়াই হবে।

Flooding hits Mexico hospital, killing 17 patients - BBC News

২০০৯ সালে, ধনী দেশগুলি ২০২০ সালের মধ্যে জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ দরিদ্র দেশগুলিকে সাহায্য করার জন্য বছরে ১০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ তবে, এই লক্ষ্য এখনও পূরণ হয়নি এবং এ প্রতিশ্রুতি ২০২৩ – এ পারে৷

জলবায়ু ক্ষতিপূরণ

প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী  গ্রীণ হাউজ গ্যাস নির্গমণকারী উন্নত দেশগুলি জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোকে প্রতিশ্রুত বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার এর বিপরীতে নিন্মাক্ত ভাবে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।

COP26 – এ চীনের প্রতিশ্রুতিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় দূষণকারী দেশ, তাই এটি গুরুত্বপূর্ণ যে প্রেসিডেন্ট শি ব্যক্তিগতভাবে আসেননি বা কয়লার ব্যবহার কমানোর পরিকল্পনাকে সমর্থন করেননি।

এ সম্মেলনে যে সকল বিষয় বেশি আলোচিত হবে তা হলো:

  • COP26: COP মানে কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিস। UN দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, COP1 ১৯৯৫ সালে হয়েছিল –এখন ২৬ তম সম্মেলন।
  • প্যারিস চুক্তি: প্যারিস চুক্তি বিশ্বের সমস্ত দেশকে একত্রিত করেছে – প্রথমবারের মতো – বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলা এবং গ্রিনহাউস-গ্যাস নির্গমন কমানোর একক ঐতিহাসিক চুক্তিতে।
  • IPCC: জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেল জলবায়ু পরিবর্তনের সাম্প্রতিক গবেষণা পরীক্ষা করে।
  • ১.৫° সে.: বিজ্ঞানীদের মতে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১.৫° সে. -এর নিচে রাখা-প্রাক-শিল্প সময়ের তুলনায়-জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলি এড়াবে।

COP26 এর সফলতা কি হতে পারে?

এ সম্মেলনের আয়োজক দেশ হিসাবে, যুক্তরাজ্য চায় সমস্ত অংশগ্রহণকারীরা ২০৫০ সালের মধ্যে নিট শূন্য কার্বণ নির্গমনে পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হোক – সেইসাথে ২০৩০ সালের মধ্যে বড় একটা  হ্রাস যাতে অর্জণ করা সম্ভব হয় তার প্রতিশ্রুতিতে সম্মত হোক।



জলবায়ু বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকারও চাইবে, যেমন ইতোমধ্যে বন উজাড় রোধ করণ এবং মিথেনের নির্গমণ হ্রাস বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলি আগামী পাঁচ বছরে একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক প্যাকেজ চাইবে।

প্যারিশ চুক্তি অনুযায়ী এ শতাব্দিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫° সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আর বেশি সময় নেই বলে এর থেকে কম কিছুকে অপর্যাপ্ত বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।

যাইহোক, কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে বিশ্ব নেতারা এটিকে অনেক দেরিতে ছেড়ে দিয়েছেন এবং COP26-এ যাই হোক না কেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫° সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যকে অর্জন করা যাবে না।

সৌজন্যে:BBC

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত