খননকাজের মাত্র ৩ বছরের মধ্যে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে খুলনার ময়ূর ও হাতিয়া নদী। জলাবদ্ধতা নিরসনে মাত্র তিন বছর আগে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়ূর ও হাতিয়া নদীর ১২ কিলোমিটার খনন করা হলেও আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয় নি।
গল্লামারী ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ময়ূর নদের দুইপাশ ঘুরে দেখা যায়, সেখানে যত্রতত্র পলিথিনসহ গৃহস্থালী ময়লা-আবর্জনা ফেলে স্তুপ করা হয়েছে।নদের মাঝখানে পানি শূন্য উঁচু সমতল ভূমি।সেখানে পড়ে আছে শুকনো কচুরিপানা। আবার কোথাও জন্মেছে সবুজ ঘাস- লতা-পাতা। শক্ত ও উঁচু নদীর বুকে চলাচলের পথ বানিয়ে পারাপার হচ্ছেন জনসাধারণ।
খুলনা সিটি করপোরেশন থেকে জানা যায়, খুলনা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৭টি ড্রেনের মুখ ময়ূর ও হাতিয়া এই দুই নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। ফলে দীর্ঘ বছর সংস্কার না হওয়ার কারনে ময়ূর ও হাতিয়া নদী ভরাট হয়ে যায়।
কোনো কোনো স্থানে নদী দখলেরও ঘটনা ঘটেছে। আর এই কারণেই সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরীতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আর তাই সিটি করপোরেশন নগর উন্নয়ন প্রকল্পে নদী দুটির তলদেশের পলি ও ময়লা অপসারণসহ জোয়ার-ভাটা নিশ্চিতকরণের বিষয়টির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়।
কেসিসি’র সিআরডিপি’র (নগর উন্নয়ন প্রকল্পে) আওতায় দুই নদীর অন্তত ১১.৬৬ কিলোমিটার খননে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এডিবির অর্থায়নে খনন কাজের ব্যয় ধরা হয় ১৪ কোটি ৫২ লাখ ৫১ হাজার টাকা।
২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর এই খনন কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। একই বছর ১৩ ডিসেম্বর ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়। কাজের প্রথম পর্যায়ে শ্মশানঘাট এলাকায় পানি কম থাকায় ম্যানুয়ালি নদী খনন শুরু হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে ম্যানুয়াল ব্যবস্থা পাল্টে নদীর গভীরতম স্থানে ১২টি সেমি ড্রেজার ব্যবহার করে এই খননকাজ চালানো হয়। ২০১৬ সালে খননকাজ শেষ হয়।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিমত, নদী দু’টিতে খননের নামে শুধুমাত্র পানি পরিষ্কার করা হয়েছে। নদী থেকে উত্তোলন করা পানিতে তেমন কোনো মাটির অস্তিত্ব ছিল না বা পর্যাপ্ত পরিমাণ মাটি জমা হতে দেখা যায়নি। তবে কিছু পলিথিন উঠিয়ে নদীর দু’পাশে রাখা হয়েছিল।
সেমি ড্রেজার দিয়ে কোনোভাবেই নদীর তলদেশের মাটি খনন করা সম্ভব না। ফলে যে অবস্থা ছিল তাই রয়ে গেছে। ফলে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ বিফলে গেছে। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নদী খনন করা উচিত ছিল।
বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা জানান, ভরাট হওয়া নদী দুটির পলি ও ময়লা অপসারণ করার কথা থাকলেও ড্রেজারের মাধ্যমে শুধুমাত্র পানি অপসারণ করা হয়।
লোক দেখানো খননে কচুরিপানার শেকড়সহ মাটি পানির নিচেই রয়ে গেছে। এছাড়া খননে যা উঠানো হয়েছিল, রোদ ও বৃষ্টিতে তা ফের নদীতে গিয়ে পড়েছে। ফলে দ্রুতই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
নদীর খনন কাজে অনিয়মের কথা স্বীকার করে মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক জানান, ময়ূর ও হাতিয়া নদীর খনন কাজ হিসাব অনুযায়ী হয়নি। বড় ধরনের পুকুর চুরি হয়েছে।
খনন কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হওয়ায় এই দুর্দশার সৃষ্টি হয়েছে। তাই দুদকের উচিত এব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
জানা যায়, নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ময়ূর নদকে ঘিরে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরু হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ময়ূর নদ খননসহ প্রটেকশন ওয়াল, ওয়াকওয়ে, উন্মুক্ত স্থান ও সেতু নির্মাণ করা হবে।