রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে মোট ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার (১৪ জানুয়ারি ২০২০) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা যায়, ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে সুপারিশসংবলিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে উপস্থাপনের পর এ আদেশ দেন আদালত। গত বছরের ২১ জানুয়ারি পত্রিকায় ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গতকাল হাইকোর্টে রিট আবেদন করে এইচআরপিবি। যার ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার ৯ দফা নির্দেশনা দেন আদালত।আদালতে রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা।
এসময় আদালত বলেছে, রাজধানীর বাতাস দূষিত হওয়ার কারণ কী এবং তা রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যেসব পরিবহন নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে, সেসব যানবাহন জব্দ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদেশের পর অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানান, ‘ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। যা নিয়ন্ত্রণে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।সে জন্য আদালতের ১২ দফা নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেছিলাম। আদালত ৯টি নির্দেশনা দিয়েছেন।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার জানান, নির্মল বায়ু ও পরিবেশ রক্ষায় বিশ্বব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকায় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এই টাকা পরিবেশ অধিদপ্তর কিভাবে ব্যয় করেছে, পরিবেশ উন্নয়নে কী ধরনের ভূমিকা রেখেছে, এতে জনগণ কী ধরনের সুফল পাচ্ছে অর্থাৎ পুরো প্রকল্পের টাকা কিভাবে ব্যয় হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিতে তলব করা হয়েছে।
হাইকোর্টের দেওয়া ৯ দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে,
সড়ক পরিবহন আইনের বিধান অনুযায়ী পরিবহনের ‘ইকোনমিক লাইফ’ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। যেসব পরিবহনের ইকোনমিক লাইফের মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেসব পরিবহন চলাচলে নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া চলমান টায়ার পোড়ানো ও ব্যাটারি রিসাইকেলিং বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই আদেশ বাস্তবায়ন করে পরিবেশ অধিদপ্তরকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ঢাকার পাশের চার জেলায় (গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ) যেসব অবৈধ ইটভাটা এখনো বন্ধ করা হয়নি, সেগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া ঢাকায় বালু, ময়লা, বর্জ্য বহনের সময় বহনকারী ট্রাকসহ সংশ্লিষ্ট যানবাহনের ঢেকে চলাচল করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দোকান বা মার্কেটের ময়লা যাতে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে ফেলা হয়, তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ এলাকায় বালু, সিমেন্ট, মাটিসহ নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজ যাতে আইন ও দরপত্রের শর্তানুযায়ী নিশ্চিত করা হয় তারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের যেসব ধুলাবালিপ্রবণ এলাকায় এখনো পানি ছিটানো হয়নি, সেসব এলাকায় নিয়মিত পানি ছিটাতেও বলা হয়েছে।