সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে চলে গেছে সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়ক। ইউনিয়নে প্রবেশ করতেই সড়কের পাশে পড়ে আছে আবর্জনার বিশালাকার স্তূপ।সড়কের দেড় কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে এমনি একের পর এক ১২টি ময়লার ভাগাড়।এই ময়লার ভাগাড়গুলোতে দিন দিন ময়লা ফেলার কারনে উৎকট দুর্গন্ধে স্থানীয় এলাকাসহ আশেপাশের এলাকার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে।
গতকাল বুধবার(৪ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি স্থানেই বিশালাকৃতির আবর্জনার স্তূপ। সেখানে পলিথিন, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক, বোতল, পচা–বাসি খাবার, বিভিন্ন পশুর নাড়িভুঁড়ি, ক্লিনিক্যাল বর্জ্যসহ নানা ধরনের বর্জ্য রয়েছে। সব কটি স্থান থেকেই উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বিড়াল-কুকুর-কাক খাবারের খোঁজে আবর্জনা ঘাঁটায় বাতাসে দুর্গন্ধ আরও বেশি ছড়াচ্ছে। পথচারীরা নাক-মুখ চেপে এ অংশ পার হচ্ছে। পরিবেশদূষণের পাশাপাশি এলাকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও এতে বাড়ছে বলে স্থানীয় লোকজন মনে করছেন।
এদিকে এলাকার স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়ক-সংলগ্ন ১২টি স্থানে দীর্ঘদিন ধরেই আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। নানা ধরনের বর্জ্য থাকায় প্রতিনিয়ত এসব স্থান থেকে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়ায়। এতে আশপাশের বাসিন্দা ও পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শহরতলির ঠিক লাগোয়া অংশ এমন অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা থাকার বিষয়টি একদিকে যেমন দৃষ্টিকটু, অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকরও।দিনের পর দিন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা এ স্থানগুলোকে আবর্জনার ভাগাড় হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। ফলে বর্জ্যের স্তূপ হয়ে গেছে। এসব অপসারণেও কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
জানা যায়, সড়ক-সংলগ্ন যে ১২টি স্থান স্থানীয় ইউপি কার্যালয়ের অনুমতিবিহীন আবর্জনার ভাগাড় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলো হলো সিলেট সরকারি কলেজ-সংলগ্ন বিপরীত পার্শ্ব, শ্যামলী ১ নম্বর রোডের বিপরীত এলাকা, প্যারাগন আবাসিক এলাকার বিপরীত অংশ, বাংলাদেশ কারিগরি প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্র এলাকা, দ্বীপিকা আবাসিক এলাকা-সংলগ্ন সড়কের উভয় অংশ, আঞ্চলিক বীজগুদাম-সংলগ্ন সড়কের উভয় অংশ, চামেলীবাগ ২ নম্বর ও ৩ নম্বর রোড-সংলগ্ন এলাকা এবং খাদিমপাড়া ১ ও ২ নম্বর আবাসিক এলাকা-সংলগ্ন অংশ।
মেজরটিলা এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, এ সড়ক দিয়েই পর্যটন কেন্দ্র জাফলং, জৈন্তাপুর, লালাখাল, শ্রীপুর, শাপলা বিল, তামাবিলসহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন স্থানে যেতে হয়। হজরত শাহপরান (রহ.) মাজারেও এখান দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। এর ফলে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এ সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা যায়, এ সড়কের আশপাশে সিলেট এমসি কলেজ, সিলেট সরকারি কলেজ, স্কলার্সহোম মেজরটিলা কলেজ, হজরত শাহজালাল (রহ.) উচ্চবিদ্যালয়, দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ব্যাংক ও বিপণিবিতান অবস্থিত। এ অবস্থায় যেসব শিক্ষার্থী হেঁটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে, তাদের উৎকট দুর্গন্ধ সহ্য করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যেই যেতে হচ্ছে।
চামেলীবাগ ও খাদিমপাড়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, কখনোই তাঁরা এসব আবর্জনা অপসারণে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নিতে দেখেননি। এ কারণে সারা বছরই ময়লা-আবর্জনায় ভরা থাকে। চার বছর ধরে আবর্জনা ফেলার পরিমাণ বেড়েছে। সড়কটি এখন ‘আবর্জনার সড়ক’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজ বলেন, ‘শহরতলিতে অবস্থান হলেও স্থানগুলো খাদিমপাড়া ইউপিতে পড়েছে। তাই সিটি করপোরেশন এসব আবর্জনা অপসারণ করে না। এসব আবর্জনার স্তূপ অপসারণে সাহায্য করতে গত জুলাই মাসে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিটি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদের বলেছি, প্রয়োজনে আবর্জনা অপসারণের টাকা উপজেলা প্রশাসন বহন করবে। পুনর্বার তাদের তাগাদা দেব।’ ইউএনও বলেন, দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে স্থায়ীভাবে ডাস্টবিন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।