সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর নগরীগুলোর তালিকায় প্রথম দিকে উঠে এসেছে। বায়ুদূষিত হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় উৎস ইটভাটাগুলো। দেখা যাচ্ছে, সারা দেশে ইটভাটাগুলো চলছে সেগুলোর মালিকদের খেয়ালখুশিমতো। অধিকাংশ ইটভাটার মালিক আইনকানুনের তোয়াক্কা করেন না। কারণ, তাঁরা কীভাবে ইটভাটাগুলো চালাচ্ছেন, সেদিকে সরকারি কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে সারা দেশে মোট ইটভাটার সংখ্যা ৮ হাজার ৩৩টি। এগুলোর মধ্যে ২ হাজার ৫১৩টির পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। আইন অনুযায়ী পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া কোনো ইটভাটা চলতে পারে না, সে অর্থে এগুলো অবৈধ স্থাপনা। উপরন্তু, ইটভাটায় জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণের যে শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে, ২ হাজার ৮৩৭টি ইটভাটা সেই প্রযুক্তি গ্রহণ করেনি। এই ইটভাটাগুলোও আইনত অবৈধ। পরিবেশ অধিদপ্তর গত বুধবার ৩ হাজারের বেশি অবৈধ ইটভাটার একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। পরিবেশ ছাড়পত্র না নিয়ে, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণ না করে যেসব ইটভাটা ইট পোড়ানোর কাজ শুরু করেছে এবং ইট পুড়িয়ে চলেছে,পরিবেশ অধিদপ্তর কেন এত দিন সেগুলোর খোঁজ রাখেনি? শুধু তা-ই নয়, যেসব ইটভাটা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে বলে দাবি করেছে, তাদের প্রযুক্তিগুলো প্রকৃতপক্ষে কতটা পরিবেশবান্ধব, সে বিষয়েও পরিবেশ অধিদপ্তর খোঁজ রাখেনি। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, যেসব প্রযুক্তিকে পরিবেশবান্ধব বলে দাবি করা হচ্ছে, সেগুলোতে অনেক গলদ আছে, সেগুলোও নানা ধরনের দূষণ ঘটাচ্ছে।
ইট তৈরির শিল্পটিকে পরিবেশসম্মতভাবে পরিচালনা করার জন্য বাংলাদেশে ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ নামের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন আছে। তা ছাড়া ২০১০ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের স্বাভাবিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা হলে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া দেশে একটিও ইটভাটা চালু করা সম্ভব ছিল না।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দেশের প্রতি তিনটি ইটভাটার মধ্যে একটিই চলছে অবৈধভাবে। এটা কাগজ-কলমের হিসাব। অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে দেশের ৯০ শতাংশ ইটভাটাই অবৈধ। বছরের পর বছর ধরে এগুলো মারাত্মক দূষণ ঘটিয়ে চলেছে, কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর ভ্রুক্ষেপ করেনি। যখন বায়ুদূষণের মারাত্মক উচ্চমাত্রা সংবাদমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে, তখন সরকার আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করে ঘোষণা দিল বায়ুদূষণ রোধ করার জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আর উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশ এসেছে, ঢাকা ও এর আশপাশের চারটি জেলার অবৈধ ইটভাটাগুলো ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
কিন্তু এ ব্যাপারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপমন্ত্রীর যে বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে সংশয় জাগে। উপমন্ত্রী বলেছেন, শুষ্ক মৌসুমে উন্নয়নকাজগুলো পুরোদমে চলে, এই সময়ে প্রচুর ইটের দরকার হয়। সুতরাং সব অবৈধ ইটভাটা একযোগে বন্ধ করে দিলে উন্নয়নকাজে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। তাহলে কোন অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা হবে, কোনটি ছাড় পাবে—এটা কীভাবে নির্ধারণ করা হবে? তা ছাড়া এই বক্তব্যের আইনগত ভিত্তি কী?