ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের পরিবেশ ছাড়পত্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৭ সালে। ২০০৭ সাল থেকে সাভারের আমিনবাজারের এ জলাভূমিকে ডাম্পিং স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করে আসছে ঢাকা সিটি করপোরেশন। বর্তমানে এখানে প্রতিদিন উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডের প্রায় ৩২০০ টন বর্জ্য ফেলা হয়।
ইতিমধ্যে ডাম্পিং স্টেশনের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের দায়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে সর্বোচ্চ জরিমানা করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। তাদের অভিযোগ, পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই এখানে বর্জ্য ফেলছে ডিএনসিসি।
সম্প্রতি লন্ডন ভিত্তিক ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এ বছরের তালিকা অনুযায়ী বিশ্বে বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহর গুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান তৃতীয়।এ তালিকায় অর্ন্তভুক্তির পেছনে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও পরিবেশ দূষণের দায়ও কম নয় বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা।
ল্যান্ডফিলে ৫০ একর জায়গা জুড়ে ময়লা ফেলবার কথা থাকলেও বাস্তবে ময়লা ফেলা হচ্ছে আরো বেশি জায়গায়। ল্যান্ডফিল থেকে ময়লা উপচে পড়ছে এখানকার পানিতেও।আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের পাশেই বলিয়ারপুর এলাকা। বর্জ্যের তীব্র দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এ এলাকায় বসবাসকারীদের জীবন। অর্থনৈতিকভাবেও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে দুই সিটি মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় সাত হাজার টন বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে। ২০১৭-১৮ সালে শুধুমাত্র ঢাকা উত্তর সিটিতেই বর্জ্যের পরিমাণ বেড়েছে ২১ দশমিক ৯৩ ভাগ।
ক্রমবর্ধমান বর্জ্যের হারের কথা মাথায় রেখে আরো দুটি ল্যান্ডফিল চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। আমিনবাজারের এ ল্যান্ডফিলটি সম্প্রসারণের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতিও চেয়েছে সংস্থাটি।বাংলাদেশে ল্যান্ডফিল স্থাপনের কোনো আইনি নির্দেশনা নেই। তবে বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী বিমানবন্দর, মহাসড়ক ও জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে ল্যান্ডফিল স্থাপন করতে হবে। আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের ক্ষেত্রে এ মানদণ্ডের কোনটিই অনুসরণ করা হয়নি।
মাটি, পানি ও পরিবেশ দূষণের অভিযোগে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে আমিনবাজারে ময়লা ফেলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে হাইকোর্ট। তবে তৎকালীন অবিভক্ত সিটি করপোরেশনের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে দুই মাস পরেই ঐ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় আপিল বিভাগ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দাবি, ‘পরিবেশসম্মতভাবেই’ এখানে বর্জ্য ফেলছেন তারা। দূষণ এড়াতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানান ডিএনসিসি’র বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শফিকুর রহমান ।তিনি বলেন , ”ভূগর্ভের পানি যেন দূষিত না হয় সেজন্য আমিনবাজারে দুটি লিচেট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছে। বায়ু দূষণ রোধে সয়েল কাভারের কাজ করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর কেন আমাদেরকে দূষণের দায়ে অভিযুক্ত করছে- তা তারাই বলতে পারবে।”
তবে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) এর প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন , পানিতে ময়লা ফেলে পরিবেশসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অসম্ভব ব্যাপার।সিটি করপোরেশনের কাজ সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এক জায়গা থেকে ময়লা নিয়ে আরেক জায়গায় ফেলা নয়।পরিবেশসম্মত উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গ্রহণের পাশাপাশি রাষ্ট্রকে নাগরিকদের কম বর্জ্য উৎপাদনে সচেতন করতে হবে। না হয় ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
এ ল্যান্ডফিল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এর তীব্র বিরোধীতা করে আসছে তাঁর সংগঠন ‘বেলা’। ১২ বছর আগে এ ল্যান্ডফিলের বিরুদ্ধে বেলা’র করা মামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ”সিটি করপোরেশন তখন কতগুলো বিষয় কোর্টে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছিল। বলা হয়েছিল সাংঘাতিক পরিবেশসম্মত করে ফেলা হবে।নিচে কংক্রিট ঢালাই দেয়া হবে, কোনো রকম লিচিং হবে না। সেই যুক্তির ১২ বছর পার হয়েছে, একটা ইটও তারা সেখানে গাড়তে পারেনি।’