বৈরী আবহাওয়ায়ও বাম্পার ফলন, ব্রি-৭৫ ধান চাষে পাল্টে যেতে পারে কৃষি অর্থনীতি
এবারের প্রকৃতির বৈরীতায় আক্রান্ত হয়েছে দেশের কৃষি ও কৃষক। এরপরেও কম সময়ে, অধিক ফলন এবং কম খরচে ব্রি ধান-৭৫ আগাম জাতের ধান চাষ করে বৈরী আবহাওয়ায় বাম্পার ফলনের ইতিহাস গড়েছে কৃষক।
আর এই আগাম জাতের ধানের প্রদর্শনী প্লটে সোনালী শীষের দোলায় কৃষকের চোখে নতুন স্বপ্নের ঝিলিক। এই নতুন জাতের ধানে হাসি ফুটিয়েছে কৃষকের মুখে।
ব্রি ধান-৭৫ আগাম জাতের ধানে ভরে গেছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জের বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। প্রদর্শনী প্লটের উদ্যোক্তা কৃষকরা মনে করেন এই জাতের ধান চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে পাল্টে যেতে পারে দেশের কৃষি অর্থনীতি। পাশাপাশি কৃষকের অবস্থারও পরিবর্তন ঘটাবে।
এ বছর বীরগঞ্জ উপজেলায় ২৯ হাজার ৬শত হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি ধান-৭৫ আগাম জাতের ধান ৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে রাজস্ব খাতের অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রদর্শনী প্লটের ধান সোমবার কর্তন শুরু করা হয়। কর্তনকৃত ৩৩ শতক জমিতে ধান হয়েছে ১৮ মণ।
প্রতিমণ ধান বিক্রি হয়েছে ৯শ টাকা দরে। ধানের খড় বিক্রয় হয়েছে ৪ হাজার টাকা। লিজসহ উক্ত জমিতে খরচ হয়েছে মাত্র ১২হাজার ৫শত টাকা। এতে ৩৩শতক জমিতে কৃষকের লাভ হয়েছে ৭হাজার ৭শত টাকা।
কম সময়ে এবং কম খরচে এই নতুন জাতের ধান চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে বীরগঞ্জ উপজেলা সুজালপুর ইউপির জগদল গ্রামের কৃষক মোঃ রায়হান আলী।
কৃষক মোঃ রায়হান আলী জানান, এ জাতের ধান চাষে সময় কম লাগে। পোকা মাকড়ের আক্রমন কম হওয়ায় বালাই নাশক স্প্রে করতে হয় না বললেই চলে। ফলে অধিক ফলন হয়।
আবার এই ধান আগাম বাজারে আসায় দাম ভাল পাওয়া যায়। তাছাড়া এই জমির ধান তোলার পর সবজি চাষ করে বাড়তি লাভবান হওয়া যায়। এ জাতের ধান চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা উপ সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ রেজাউল করিম জানান, আমন মৌসুতে ব্রি ধান ৭৫ একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। ২১ জুলাই হতে ২০ আগস্ট বীজ বপন করে ২৫ হতে ৩০ দিনের মধ্যে চারা রোপন করতে হয়।
মাত্র ১১০ থেকে ১১৫দিনের মধ্যে এ ধান ঘরে তোলা যায়। এ ধানের কাণ্ড শক্ত বলে গাছ হেলে পড়ে না। শীষ হতে ধান ঝরে পড়ে না। জাতটি আগাম হওয়ায় রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম। বিশেষ করে বাদামী গাছ ফড়িং (কারেন্ট পোকা) অথবা মাজরা পোকার আক্রমন হওয়ার আগেই এই জাতটির ফলন কর্তন শুরু হয়।
এ জাতের ধানের ফলন বেশি হয় অর্থাৎ হেক্টর প্রতি সাড়ে ৪টন হতে ৫টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া এজান স্বপ্লকালীন হওয়ায় রবি মৌসুমের আগাম শাক সজবিসহ একই জমিতে ৩-৪টি ফসল চাষ করা যায়।
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার আবু রেজা মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, এ ধানের চাল মাঝারী চিকন এবং সামান্য সুগন্ধি। রান্নার পর ভাত হতে সুগন্ধি ছড়ায়। এ কারণে চালের চাহিদা রয়েছে।
বর্তমানে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক চাহিদা থাকায় আগামীতে উপজেলায় এই জাতের ধানের চাষ বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।