যমুনা নদী ধারণ করেছে এক ভয়ঙ্কর রূপ। বর্ষার মৌসুম শুরুর আগেই যদি এমন হয় তাহলে সামনে কেমন হবে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয়দের। এরই মধ্যে যমুনা গিলে নিয়েছে কয়েক হাজার বসতভিটা-ফসলী জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফসলী জমি আর বসতভিটা। ফলে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে সেখানকার কিছু মানুষ। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড সরেজমিনে সেখানকার দৃশ্য পরিদর্শন কারার পরেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আর এই নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা।
স্থানীয়দের ভাস্য অনুযায়ী তারা বলছেন, বর্ষার আগে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে অসংখ্য স্থাপনা, ঘরবাড়ী, ফসলী জমি, তাঁত কারখানা, মসজিদ, মাদ্রসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজার বিলীন হবার আশঙ্কা রয়েছে। ভাঙনের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভাঙনকবলিতরা।
জানা যায়, বর্ষার মৌসুমের আগে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। এ কারণে অরক্ষিত নদীর তীরে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। মাত্র একমাসের ব্যবধানে কয়েক হাজার বসতভিটা-ফসলী জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা চৌহালী উপজেলা সদরের জনতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে খাস পুকুরিয়া হয়ে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চরবিনুনাই-ভুতের মোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দক্ষিণ খাস পুকুরিয়া, মিটুয়ানী, রেহাই পুকুরিয়া ও চরবিনুনাই এলাকার প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি, সাতটি তাঁত কারখানা, তিনটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং প্রায় দেড় কিলোমিটার পাকা সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনরোধে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এছাড়াও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পড়ছে। এছাড়াও এনায়েতপুর ব্রাহ্মন গ্রাম থেকে পাঁচিল পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার, বেলকুচি উপজেলার চরাঞ্চলের ব্যাপক ভাঙগন শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, শাহজাদপুরে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্থায়ী বাঁধের অন্তত দশটি পয়েন্টে ধ্বসে গেছে।
চৌহালী উপজেলার খাস পুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সরকার জানান, যমুনার ভাঙনে তার ইউনিয়নের খাসপুখুরিয়া ও মেটুয়ানি গ্রামের তীরবর্তী এলাকার অন্তত ২০/২৫টি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে এ অঞ্চলের মানুষের।
বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাহ্হার সিদ্দিকী জানান, গত এক মাসের ব্যবধানে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের রেহাই পুকুরিয়া, চর নাকালিয়া, বিনানুই ও চর সলিমাবাদ গ্রামের তীরবর্তী অঞ্চলের শতাধিক ঘরবাড়ি এবং মেটুয়ানি ও দেওয়ানগঞ্জ বাজারসহ তাঁতকারখানা এবং তিনটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
চৌহালী উপজেলা অংশের দায়িত্ব থাকা টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ওই এলাকায় স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন জানান, এনায়েতপুরের ছয় কিলোমিটার রোধে সাড়ে ৬শ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে স্থায়ী ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া জরুরীভাবে ভাঙনরোধে কিছু জিওব্যাগ ফেলানো হবে বলেও তিনি জানান। সূত্র: বিডি-প্রতিদিন