30 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ৯:৩১ | ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
সমুদ্র ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই বাংলাদেশ
বাংলাদেশ পরিবেশ

সমুদ্র ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই বাংলাদেশ

সমুদ্র ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই বাংলাদেশ

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই বাংলাদেশের এই ঝুঁকি বেশি।

আবার বিশ্বের বৃহত্তম এই বদ্বীপের বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ভূপ্রকৃতির সঙ্গে অভিযোজনের অক্ষমতা এবং প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের সুরক্ষায় উদাসীনতাও বাংলাদেশের এই ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে। পরিতাপের বিষয় হলো এই উদাসীনতা যেমন রাষ্ট্রীয় পরিসরে তেমনি বিদ্যায়তনিক ও জনপরিসরেও বিদ্যমান।

সম্ভবত এই কারণেই সাধারণ্যে এই দেশ কেবল নদীমাতৃক বাংলাদেশ হিসেবেই কথিত সমুদ্রমাতৃক বাংলাদেশ নয়। অথচ গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার মিলিত অববাহিকার সাগরসঙ্গম হয়েছে এই সমুদ্রমেখলা বাংলাদেশেই।

আশার কথা হলো, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত হওয়ার পর থেকে বঙ্গোপসাগর নিয়ে সচেতনতা ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ বেড়েছে। সমুদ্রসম্পদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা নিয়েও কথা হচ্ছে।



বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনকে ঘিরে বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সরকারের সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণা করা এক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।

টেকসই উপায়ে সমুদ্রসম্পদ আহরণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় জানুয়ারিতে ‘সেন্টমার্টিন মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া’ তৈরির এই ঘোষণা দেয়।

মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিকভাবে হুমকির মুখে থাকা প্রবাল, গোলাপি ডলফিন, হাঙ্গর, রে মাছ, সামুদ্রিক কাছিম, সামুদ্রিক পাখি, সামুদ্রিক ঘাস, সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য এবং এদের আবাসস্থল সংরক্ষণ, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই আহরণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকার মানোন্নয়ন, ব্লু ইকোনমি সমৃদ্ধকরণ এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-১৪) অর্জনের লক্ষ্যে এই সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।

এতে সেন্টমার্টিনসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ৭০ মিটার গভীর পর্যন্ত ওই এলাকার সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরে বঙ্গোপসাগরের টেকনাফ পর্যন্ত, পূর্বে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক জলসীমা এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের বাকি এলাকা রয়েছে।

সেন্টমার্টিন বঙ্গোপসাগরের বুকে মাত্র ৮ দশমিক ৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট প্রবালদ্বীপ হলেও তা অনন্য জীববৈচিত্র্যের আধার। এ দ্বীপ সামুদ্রিক কাছিমের প্রজনন ক্ষেত্র।

প্রবালদ্বীপটিতে ৬৮ প্রজাতির প্রবাল, ১৫১ প্রজাতির শৈবাল, ১৯১ প্রজাতির মোলাস্ট বা কড়ি জাতীয় প্রাণী, ৪০ প্রজাতির কাঁকড়া, ২৩৪ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, পাঁচ প্রজাতির ডলফিন, চার প্রজাতির উভচর প্রাণী, ২৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ১২০ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১৭৫ প্রজাতির উদ্ভিদ, দুই প্রজাতির বাদুড়সহ নানা প্রজাতির প্রাণীর বসবাস ছিল এককালে।



উল্লেখ্য যে, এসব প্রজাতির অনেকগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এসব জীববৈচিত্র্য। এসব বিবেচনায় নিয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার এর আগে ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিনের ৫৯০ হেক্টর এলাকাকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করেছিল।

প্রবালদ্বীপটি সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। একদিকে প্রায় শত বছর ধরে গড়ে ওঠা জনবসতি আরেকদিকে শীতকালীন পর্যটন মৌসুমে উপচেপড়া পর্যটকের ভিড়ে সেন্টমার্টিনসের জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। লক্ষ্য করা জরুরি, সেন্টমার্টিনের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১২ হাজার।

সেখানে রয়েছে দুই শতাধিক আবাসিক হোটেল-রিসোর্ট। কোনোটিরই বৈধ অনুমোদন কিংবা পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। এ ছাড়া সরকারি ভবনসহ ৩ হাজার বসতবাড়ির চাপও এই দ্বীপ সহ্য করতে পারছে না। এই প্রেক্ষাপটে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল যে, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিনে রাত কাটানো নিষিদ্ধ করা হবে।

কিন্তু সেন্টমার্টিন-টেকনাফ রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী জাহাজের মালিক, পর্যটক, দ্বীপের হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক ও বাসিন্দাদের চাপে এ সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেনি সরকার। তবে সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে ২০২৫ সালের মধ্যে সেন্টমার্টিনের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তির মালিকানা সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার পাশাপাশি বাসিন্দাদের অন্যত্র পুনর্বাসন করতে বলা হয়েছে।

কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সত্যটি হলো পরিকল্পনা যত ভালোই হোক না কেন সেটা বাস্তবায়ন করতে না পারলে দেশের এই অনন্য প্রবালদ্বীপটির সুরক্ষা সম্ভব হবে না।



‘সেন্টমার্টিন মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া’ ঘোষণার অন্যতম কারণ জাতিসংঘের এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। সরকারের এই ইতিবাচক উদ্যোগ আন্তর্জাতিক পরিসরেও প্রশংসিত হচ্ছে।

সেন্টমার্টিন ঘিরে সুরক্ষিত সামুদ্রিক এলাকা গড়ে তোলায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন হলিউডের অভিনেতা ও পরিবেশকর্মী লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। তিনি আশাপ্রকাশ করেছেন জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার পাশাপাশি এটা এই প্রবালপ্রাচীরের সুরক্ষা দেবে।

খেয়াল করা দরকার, জাতিসংঘের এসডিজি-তে বলা আছে, ‘লাইফ বিলো ওয়াটার’ বা পানির নিচের জীবনের সুরক্ষা দিতে হবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশের শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান বা বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এ মেরিন রিসোর্চ সার্ভে সম্পাদন করা এবং সি-ফিশিং ও ইকো ট্যুরিজম জোরদার করার পাশাপাশি উপকূল ও সাগর দূষণমুক্ত করার ঘোষণাও রয়েছে। সরকারকে তাই সেন্টমার্টিনসহ বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় আরও উদ্যমী ও কঠোর হতে হবে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত