28 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ৩:০৯ | ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ানো ঠেকাতে কার্বন অফসেট পদ্ধতির ব্যবহার
পরিবেশ রক্ষা

বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ানো ঠেকাতে কার্বন অফসেট পদ্ধতির ব্যবহার

বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ানো ঠেকাতে কার্বন অফসেট পদ্ধতির ব্যবহার

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মানবজাতির জন্য সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর আগে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষকে এমন ধ্বংসের মুখোমুখি করেনি। ভাবতে অবাক লাগে, এই দুর্যোগের পেছনে রয়েছে শুধুমাত্র কয়েকটি গ্যাস।

এ গ্যাসগুলো যেন প্রকৃতিতে নাগিনীর বিষাক্ত নিশ্বাস ছাড়ছে। প্রকৃতিকে করে তুলছে বিপদসংকুল। এই অপ্রতিরোধ্য পরিবর্তনের নাম বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। এর কবলে পড়েই পৃথিবী এখন ভুগছে অস্তিত্বের সংকটে।

শিল্প বিপ্লবের পর মানুষ বায়ুমণ্ডলে দুই হাজার গিগাটনের বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করেছে। তাপ শোষণকারী গ্রিনহাউজ গ্যাস বায়ুমণ্ডলে যে আবরণ তৈরি করেছে তার ফল হিসেবে আমরা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সম্মুখীন হয়েছি।

যদি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমিয়ে আনা না হয় তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল যেমন দাবানল, তাপপ্রবাহ, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি, বন্যা, খরার প্রভাব বেড়েই চলবে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য অপরিহার্য হলো গ্রিন হাউস গ্যাসের দ্রুত নির্গমন রোধ করা। নবায়নযোগ্য এনার্জির ব্যবহার বাড়ানো ও বন উজাড় বন্ধ করা। কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইডের মতো অতি দূষণকারী গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা। তবে শুধুমাত্র এই প্রচেষ্টা গুলিই জলবায়ু পরিবর্তন রোধের জন্য যথেষ্ট নয়।



বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫-২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব রোধ করার জন্য এটি প্রয়োজনীয়। আমাদের শুধু কার্বন নিঃসরণ কমালেই হবে না বরং বায়ুমণ্ডল থেকে কিছু কার্বন অপসারণ করে সংরক্ষণও করতে হবে।

প্রকৃতপক্ষে, বেশির ভাগ জলবায়ু মডেল ২০৫০ সালের মধ্যে বছরে শত কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ করার সঙ্গে সঙ্গে কার্বন হ্রাসের গতি বাড়িয়ে তোলার কথা বলে। বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন অপসারণ করার কার্যকর ও প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে ‘কার্বন অফসেট’ পদ্ধতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এ পদ্ধতিতে বায়ুমণ্ডলে যারা কার্বন নির্গমন করে তারা সেই কার্বনকে অপসারণ করার জন্য অন্যদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থায়ন করবে। তারা রিজেনারেটিভ বা পুনরুৎপাদন পদ্ধতিতে গাছ লাগিয়ে বা চাষাবাদ করে অথবা কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন অপসারণ করে মাটিতে সংরক্ষণ করে রাখবে। কার্বন নির্গমনকারী গ্রুপ কার্বন অপসারণকারী গ্রুপকে অর্থায়ন করবে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য অপরিহার্য হলো গ্রিন হাউস গ্যাসের দ্রুত নির্গমন রোধ করা। নবায়নযোগ্য এনার্জির ব্যবহার বাড়ানো ও বন উজাড় বন্ধ করা। কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইডের মতো অতি দূষণকারী গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা। তবে শুধুমাত্র এই প্রচেষ্টা গুলিই জলবায়ু পরিবর্তন রোধের জন্য যথেষ্ট নয়।

কার্বন অফসেট যেভাবে করা যাবে

  • প্রথম. বায়ুমণ্ডলে নির্গমনরত গ্রিনহাউস গ্যাস ধারণ এবং ধ্বংস করার মাধ্যমে। যেমন ল্যান্ডফিল বা ভাগাড়ে মিথেন গ্যাস ধারণ প্রকল্প।
  • দ্বিতীয়. ক্লিন ও নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার। প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের ফলে যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত হয় তার বিকল্প হিসেবে এটা কাজ করবে।
  • তৃতীয়. রিজেনারেটিভ বা পুনরুৎপাদনশীল কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে। এতে খাদ্য উৎপাদনের জন্য একটি সংরক্ষণ ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালু করা হয়। যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে, মাটিকে পুনরায় চাষ উপযোগী করে, পানি প্রবাহের মান বৃদ্ধি করে, জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি করে, মাটির ক্ষয়রোধ করে।
    এ ধরনের কৃষি ব্যবস্থায় বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইডকে কার্বন আকারে মাটিতে ফিরিয়ে এনে সংরক্ষণ করা যায়। এটি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্যও কাজ করে। অর্থাৎ এ পদ্ধতিতে কার্বন সিকোয়েস্ট্রেশন করার মাধ্যমে কার্বন অফসেট করা হয়।
  • চতুর্থ. মাটিতে কার্বন প্রবেশের আরেকটি উপায় হচ্ছে বায়োচার। এটা এক ধরনের চারকোল বা কাঠকয়লা। ফসলের অবশিষ্টাংশ, ঘাস, গাছ বা অন্যান্য উদ্ভিদ থেকে জৈব বস্তু ৩০০-৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে পুড়িয়ে বায়োচার তৈরি করা হয়।



    এ পদ্ধতিটি পাইরোলাইসিস নামে পরিচিত, যা জৈব বস্তুর কার্বন ক্ষয় প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এটি কার্বনের একটি স্থিতিশীল রূপ যা সহজে বায়ুমণ্ডলে মুক্ত হতে পারে না। বায়োচার মাটিতে কার্বন সংরক্ষণ করার মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বাড়ায়। এতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে যায়।
  • পঞ্চম. কিছু খনিজ প্রাকৃতিকভাবে কার্বন ডাই অক্সাইডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। কার্বনকে গ্যাস থেকে কঠিন পদার্থে পরিণত করে। প্রক্রিয়াটিকে সাধারণত কার্বন খনিজকরণ বলা হয়। প্রাকৃতিকভাবে এটি খুব ধীরে ধীরে, শত বা হাজার বছর ধরে ঘটে।
    কিন্তু বিজ্ঞানীরা বের করছেন কার্বন খনিজকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে উপযুক্ত রক বা শিলাতে প্রবেশ করানো হয়। বিক্রিয়ার মাধ্যমে গ্যাসীয় কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে কঠিন কার্বনেটে পরিনত হয়।
  • ষষ্ঠ. কেএমসিডিআর বা কার্বন ধারণ প্রযুক্তির ব্যবহার। ভারি শিল্প কারখানার কার্বন ডাই অক্সাইড ধারণের জন্য এ ধরনের প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয়েছে। যে সব শিল্প কারখানা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হাইড্রো কার্বন পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে সেগুলো এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে।
    এ পদ্ধতিতে পাওয়ার প্লান্ট থেকে নির্গত ফ্লু-গ্যাস থেকে ৯০ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করা সম্ভব। এই প্রযুক্তি দিনে ৩০০ কেজি এবং বছরে প্রায় ১১৬ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড ধারণ করতে পারে।

বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন অপসারণ করে মাটিতে সংরক্ষণ করা কার্বন অফসেট-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাটিতে কার্বন সংরক্ষণের আগে এবং পরে মাটির জৈব উপাদানের পরিমাণ পরিমাপ করে কতটুকু কার্বন অপসারণ বা কতটুকু কার্বন সংরক্ষণ করা হয়েছে তা বের করা সম্ভব। কতটা কার্বন অপসারণ ও সংরক্ষণ করা গেল সেটার ওপর ভিত্তি করে গ্রিন হাউস নির্গমনের জন্য দায়ী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা সম্ভব।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত