পলিথিনে সয়লাব সিলেট অঞ্চল
বন্যাদুর্গত সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের বাসিন্দা জমিলা বিবি ও তার স্বামী বিলাল মিয়ার তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। বন্যা শুরুর পর এ পর্যন্ত তারা চারবার ত্রাণ সামগ্রী পেয়েছেন।
প্রতিবারই তাদের রেক্সিনে মোড়ানো একটি প্যাকেট মিলেছে, যেখানে ৫ কেজি চাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিড়া, মুড়ি, মোমবাতি, তেল, ডাল, লবণ, আলু, স্যালাইন, বোতলে পানি, গুঁড়, ম্যাচ বাক্স, ওষুধ ও আরও উপকরণ ছিল।
প্রায় প্রতিটি উপকরণই আলাদা আলাদাভাবে পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ছিল। প্রতিবারে ত্রাণের বাক্সের সঙ্গে তারা গড়ে ১৫টি পলিথিন পেয়েছেন। এই হিসাবে গত দুই সপ্তাহে চার বারে ত্রাণ সামগ্রীর সঙ্গে তারা ৬০টির বেশি পলিথিন পেয়েছেন।
জমিলা বিবি জানালেন, এসব পলিথিনের মধ্যে যেগুলো আকারে কিছুটা বড় সেরকম কয়েকটি রেখে বাকিগুলো তিনি ফেলে দিয়েছেন। একই ঘটনা ঘটেছে প্লাস্টিকের বোতলের ক্ষেত্রেও।
সিলেট অঞ্চলে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে প্রায় ২২ লাখ বন্যাকবলিত। এছাড়া সুনামগঞ্জে ৩০ লাখ বাসিন্দার ৯০ শতাংশই এবার বানভাসি। বিপুল সংখ্যক এই মানুষকে সরকারের পাশাপশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনও ত্রাণ দিচ্ছে।
বৃষ্টিভেজা আবহাওয়ায় সেই ত্রাণসামগ্রী যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য পলিথিনই মোড়ক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। কারণ সহজলভ্যতা। কিন্তু এটাই প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের মধ্যে পরিবেশগত আরেকটি সঙ্কট সামনে নিয়ে এসেছে।
কারণ এই পলিথিন পচনশীল নয়। আবার তা জমে পানি নিষ্কাশনের পথগুলোও আটকে দেয়। ফলে বিভাগীয় শহর সিলেট যেমন পলিথিন দূষণের সঙ্কটে পড়েছে। এই দূষণ শহরের গণ্ডি ছাড়িয়ে কৃষিনির্ভর পল্লীতে, হাওরাঞ্চলেও ছড়িয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে বিপর্যয় এড়াতে এখনই পলিথিন ও একবার ব্যবহার করার প্ল্যাস্টিক সামগ্রীর উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
এ সপ্তাহের সোমবার পর্যন্ত সিলেটের বাসিন্দারা ১ হাজার ৪৯৫ মেট্রিক টন চাল, ১৭ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনা খাবার, ও ২ কোটি ২৭ লাখ ৪৩ হাজার নগদ টাকা সহায়তা হিসেবে পেয়েছেন।
সরকারের পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপ (৫ হাজার ৫০০ প্যাকেট), প্রাণ আরএফএল গ্রুপ (৪ হাজার প্যাকেট), যমুনা গ্রুপ (২ হাজার ৫০০ প্যাকেট), শেভরন (১ হাজার ৪৭০ প্যাকেট) এবং অন্যান্য ব্যবসায়ী ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ত্রাণ বিতরণ করেছে।
সোমবার পর্যন্ত সুনামগঞ্জেও সরকারের পক্ষ থেকে ১ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন চাল, ২৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার প্যাকেট।
এখন এটা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি যে প্রতিটি ত্রাণের প্যাকেজে প্রায় একই ধরনের সামগ্রী ছিল, যা জমিলা বিবি ও তাদের পরিবার পেয়েছে।
এর বাইরেও আরও নানা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে, যার হিসাব স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নেই। তবে ধরেই নেওয়া যায়, সেসব ত্রাণের মোড়কও ছিল পলিথিনের।