35 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সন্ধ্যা ৭:২৬ | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
পরিবেশ রক্ষায় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধ করতে হবে
পরিবেশ রক্ষা

পরিবেশ রক্ষায় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধ করতে হবে

পরিবেশ রক্ষায় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধ করতে হবে

সুন্দরবনে পর্যটকদের ‘একবার ব্যবহারযোগ্য’ বা ‘সিঙ্গেল ইউজ’ প্লাস্টিক সামগ্রী নিতে দেওয়া হবে না বলে উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার কমাতে সরকারের সাম্প্রতিক এ উদ্যোগটি প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞাকে কার্যকর করার জন্য যদি শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করা হয়, তা আদতে ফলপ্রসূ হবে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন রাখা যেতে পারে।

সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিককে সর্বসাধারণ্যে ওয়ানটাইম প্লাস্টিকও বলা হয়। সহজ কথায়, এগুলো হচ্ছে যেকোনো ধরনের প্লাস্টিকে তৈরি দ্রব্য/পণ্য/পণ্যের মোড়ক যা আমরা সচারচর একবার ব্যবহার করে ফেলে দিয়ে থাকি।



এগুলোকে ব্যবহারিক বা প্রচলিত অর্থে চিহ্নিত করাই ভালো। যদি তত্ত্বগতভাবে ধরা হয়, তবে এতে জটিলতা তৈরি হয়। কারণ কোন প্লাস্টিককে সিঙ্গেল ইউজ বলা হবে তার ব্যাখ্যা দেয়া কঠিন।

তাই জটিলতায় না গিয়ে সরল করে দেখা হলে সিঙ্গেল ইউজ বা মাত্র একবার ব্যবহার করা হয় যে পণ্যগুলো, সেগুলোর একটা ফিরিস্তি আমরা নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারি।

এর মধ্যে সবার প্রথমেই আসে প্লাস্টিকের তৈরি খাবারের থালা-বাটি, পানির পাত্রের কথা। এখানে অবশ্য অনেকেই বলে থাকবেন, পলিথিন ব্যাগ কেন নয়? কথা সত্য এবং যৌক্তিকও বটে। তবে আমরা যদি ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহারিক অর্থে ভেবে দেখি, যেকোনো প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার একবারের থেকে বেশি হয় বা হবার সম্ভাবনা থাকে, যেমন আমরা বাসাবাড়িতে শক্ত প্লাস্টিক ব্যাগে কিছু না কিছু রাখি বা সংরক্ষণ করি।

মিল্কভিটা দুধের প্লাস্টিকের মোড়কে কোরবানির মাংস ফ্রিজে রাখার ঘটনা আমার ছোটবেলায় দেখা। এমন আরও অনেক উদাহরণ দেয়া সম্ভব। যেমন একদম পাতলা যে ব্যাগগুলো এখন এক প্যাকেট মশার কয়েল খরিদ করলেও দেয়া হয়, তারও আবার ব্যবহার হয় বা হবার সম্ভাবনা থাকে।

যেমন রান্না ঘরের উচ্ছিষ্ট ফেলার কাজে এসবের ব্যবহার দেখা যায়। এই উদাহরণগুলো নিজেদের কাছ থেকে নিজেদের ব্যবহারিক জীবনের অনুষঙ্গ থেকে উঠে আসা। কেননা, এটার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কোনো ব্যক্তি কীভাবে কীসের ব্যবহার করবেন তা একান্তই ব্যক্তিগত।



এই উদাহরণগুলোর মাধ্যমে এটা অন্তত প্রতিষ্ঠা পায় না যে, প্লাস্টিকের ব্যাগের যত্রতত্র ব্যবহার ভালো। তা অবশ্যই নয়। এই উদাহরণগুলো দেয়ার কারণ হলে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকে তৈরি কোনো কোনো পণ্যের ব্যবহার আদতে একবারই হয়। যেমন, থালা-বাটি-কাপ-গ্লাস জাতীয় পণ্য।

এই জাতীয় পণ্যের উৎপাদন, বিপণন থেকে শুরু করে ব্যবহারকারীর মানসিকতা যেভাবেই দেখা হোক, প্লাস্টিকে তৈরি ওইসব অতিভঙ্গুর, পাতলা পণ্যগুলো যে কেবল একবার ব্যবহার করার জন্যই তৈরি করা হয়, তার আর ব্যাখ্যার দরকার পড়ে না।

সুন্দরবনে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের থালা-বাটি-কাপ-গ্লাসের ব্যবহার রোধের জন্যে সরকার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে তা কেবল সুন্দরবন বা সংলগ্ন এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না। সুন্দরবনে আপনি আমি অনেকেই গিয়েছি, যাচ্ছি, ভবিষ্যতেও যাব।

বাংলাদেশের মধ্যে সবথেকে সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে সুন্দরবন অবশ্যই প্রথমদিকে থাকবে। নারিকেল জিনজিরা বা সেন্টমার্টিন্স একদা ভূস্বর্গের কাছাকাছি বলে বিবেচ্য হলেও বর্তমানে তার অবস্থা ত্রাহিত্রাহি। খুবই ছোট একটা আবদ্ধ জায়গায় প্রতিদিন এত এত মানুষের আগমন বা ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গের যোগান দিতে গিয়ে কী অবস্থা হয়েছে, তা এখন পত্রপত্রিকা খুললেই দেখা যায়।

কিন্তু তাতে কি আমাদের সেখানে যাওয়া কমেছে? বা কমার কোনো প্রবণতা আছে বলে মনে হয়? উত্তরটা নিজেদের জন্যে রেখে দেয়া ভালো। এই প্রশ্নইবা কেন এল? কথা হচ্ছে সুন্দরবনে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের থালাবাসন নিয়ে।



সুন্দরবনে আবাসনের সুবিধা বা বন্দোবস্ত নেই, যা আছে তা বাণিজ্যিকভাবে নয়। কিন্তু সুন্দরবনে আমরা যাচ্ছি, থাকছি। থাকছি নদীতে, নৌকায়, জলযানে, ভাসমান অবস্থায়। আবার তাই বলে ডাঙ্গায় নামছি না তাও কিন্তু নয়। দল করে ডাঙ্গায় নেমে পিকনিক, চড়ুইভাতি, বনভোজন করে আসছি। ঘটনার সুত্রপাত ওখানেই।

শুরুতেই বলেছি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বনভোজনে ব্যবহৃত তৈজসপত্রের বদল হয়েছে। কাচের থালাবাটির জায়গায় ক্রমান্বয়ে এসেছে মেলামাইন, সর্বশেষে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র। এখন আমরা এক বাক্যে বলে দিতে পারি, ‘ঝামেলা কম বুঝলেন না’! একেবারেই ঝামেলা নেই। খেয়ে হাত সাফ করে, কুলকুচি করে আয়েশের ঢেকুর তোলার আগে থালা-বাটি-কাপ ফেলে দিলেই হলো।

ধোয়ামোছার ঝামেলা নেই, ফলে পানির অপচয় কম হয়– এমন যুক্তিও নিয়ে আসেন অনেকে। কিন্তু ভেবে দেখেন, কতটুকু অসচেতন হলে আমরা শুধুই নিজেদের সুবিধার জন্য এমন একটা জিনিসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি, যাতে কোনো দায়িত্ব নিতে হয় না। এটা অসভ্যতাও বটে। নিদারুণ দায়িত্বহীনতা।

আপনার-আমার এই অভ্যাস কেবল আমাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিই বাড়ায় না, বাড়ায় পরিবেশ দূষণও। পরিবেশ দূষণ শব্দটা এখন অনেকটাই ক্লিশে হয়ে গেছে। আমার যা-ই করি তাতেই দূষণ! কথাটা ভুল নয়। আমরা যা-ই করি তার একটা বিপ্রতীপ ফলাফল আছে। এখন কথা হলো কোনটা না করলেই নয় তার বোধগম্যতা।

বেড়াতে গিয়ে এত কিছু যদি নিয়ে যাওয়া যায় তবে একটা প্লেট কেন নিয়ে যাওয়া যাবে না! এটা কি সেকেলে মনে হচ্ছে? নাকি খানিকটা দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হচ্ছে?



আমাদের এই দায়িত্ব মনে করিয়ে দেয়ার জন্যে সরকারি পদক্ষেপটি বেশ জরুরি। আমরা তো শুধু নিজেদের সুবিধার জন্যে আশপাশের এলাকায় সংকট তৈরি করতে পারি না। কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেলেও নদীর পাড়ে, পুকুরের ধারে, যেখানে-সেখানে এই সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের তৈরি থালাবাটি দেখা যায়। কেন দেখা যায়?

এই প্রশ্নটা সভ্যতার নিয়ামক। প্রশ্নটা নিজেদের। প্রশ্নটা লজ্জারও। আর যদি কোনোক্রমে দর্শনীয় কোনো স্থান হয়ে থাকে আর ওই স্থানে যদি ময়লা সাফ করার লোক না থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। সাদা প্লাস্টিকের থালায় ঢাকা পড়া নদীর পাড়, পুকুরের অর্ধেকটা ভরাট হয়ে যাওয়া দেখতে পাবেন।

আমরা একটা বিষয় কখনোই খেয়াল রাখি না যে, আমাদের ফেলে আসা ওই সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক পণ্য থেকে কী মাত্রায় পরিবেশ দূষণ হতে পারে। খুব অল্প কথায় বলা যায়, প্লাস্টিকের এই পণ্যগুলো এতই ভঙ্গুর যে, কিছুদিনের মধ্যে তা ভেঙে যেতে থাকে।

যেকোনো বড় প্লাস্টিকই একটা সময় পরে সূর্যের তাপ, পানিসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক কারণে ভেঙে যায়। যদি না এগুলো ভেঙে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হয়ে যাওয়ার আগেই আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসতে পারি। বেশির ভাগ সময় এটা করা সম্ভব হয় না। এই প্লাস্টিকগুলো ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয় এবং পরিবেশের সঙ্গে মিশে যেতে থাকে।

সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক পণ্যের দাম তুলনামূলক খুব কম হওয়ার কারণে এই ধরনের প্লাস্টিক সংগ্রহের প্রবণতা একবারে নেই বললেই চলে। যেসব শক্ত প্লাস্টিক, যেমন তেলের ড্রাম, পানির ও তেলের বোতল ইত্যাদি সংগ্রহ করে পুনঃব্যহারের সম্ভবনা বেশি থাকে। শক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করা তুলনামূলকভাবে সহজ।



কিন্তু একবার ব্যবহার্য্য প্লাস্টিক বা সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের রিসাইকেল করার সম্ভাবনা অনেক অনেক কম। যদি এর রিসাইকেলের বাণিজ্যিক মূল্য লাভজনক হতো তবে তা থেকে পরিবেশগত দূষণের মাত্রা কিছুটা হলেও কমে যেত।

সরকার শুধু উপকূলবর্তী অঞ্চলসমূহ বিশেষ করে সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে এই পদক্ষেপটি নিয়েছে। এর পাশাপাশি যদি অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রসহ ক্রমে সমগ্র নদ-নদী, পুকুর-খাল, সমুদ্র তথা জলাধার বা জলাশয়গুলোকেও এর আওতায় নিয়ে আসা হয় তবে এর দীর্ঘমেয়াদী সুফল পাওয়া সম্ভব হবে।

কেননা স্থলভাগ থেকেই বেশিরভাগ ময়লা-আর্বজনা বা দূষণকারী দ্রব্য জলজ পরিবেশে মিশতে পারে। কিন্তু এই পদক্ষেপের সাফল্যের জন্য যদি শুধু সরকারি তদারকির ওপর নির্ভর করা হয়, তা বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই হবে না। আমরা নিজেরাই যদি এগিয়ে না আসি, শুধু আইন বিধি-নিষেধ দিয়ে এই ধরনের সমস্যার সমাধানে শতভাগ সফল্য কোনোদিনই আসবে না।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত