31 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
দুপুর ১:২৪ | ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিকময় জীবন থেকে বের হতে হবে
পরিবেশ রক্ষা

পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিকময় জীবন থেকে বের হতে হবে

পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিকময় জীবন থেকে বের হতে হবে

যেকোনও মুদির দোকানে কিছু কিনলে মাঝারি মানের প্লাস্টিকের ব্যাগ ধরিয়ে দেবে। ভ্যানে সবজি কিনে সেই প্লাস্টিকের ব্যাগে শাক ভরে বাসায় ফিরে ব্যাগটি বিনে ফেলে দেন। রাস্তার পাশের দোকানে সারি সারি কলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে প্লাস্টিকের সুতলি দিয়ে।

কিংবা সন্তান স্কুল থেকে বের হয়ে যে চিপস খেতে খেতে ফিরলো, সেই মোড়কটিতে অন্যকিছু ঢুকিয়ে রেখে দিলেন ফ্রিজে। নগর কিংবা গ্রামে পুরোজীবন এখন প্লাস্টিকময়। কিছু কিনবেন, কিছু খাবেন, কিছু ফেলবেন— সব কিছুতেই প্লাস্টিক না হলে চলছে না! অথচ একবার খেয়ালও করছি না, নিজেদের কী ক্ষতি ডেকে আনছি রোজ।

গবেষণা কী বলছে

বিশ্বব্যাংকের ‘টুয়ার্ডস আ মাল্টিসেক্টরাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০০৫ সালে ঢাকার বাইরে অন্যান্য নগরে বছরে মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ছিল ৩ কেজি।

২০২০ সালে হয়েছে ৯ কেজি। ঢাকা শহরে ৯ কেজি থেকে বেড়ে ২৪ কেজি হয়েছে। দেশে সারা বছর যে পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয়, তার ১০ শতাংশ প্লাস্টিক পণ্য থেকে আসে। এর ৪৮ শতাংশ মাটিতে পড়ে, আর ৩৭ শতাংশ পুনরায় ব্যবহৃত হয়। ১২ শতাংশ পড়ে খাল ও নদীতে। আর ৩ শতাংশ নালায় গিয়ে মিশে যায়।

‘এনভায়রনমেন্টাল পারফরমেন্স ইনডেক্স-২০২২’ এর তথ্যমতে, বৈশ্বিক মোট প্লাস্টিক-দূষণের ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ হচ্ছে বাংলাদেশে। দূষণে এগিয়ে থাকলেও, দূষণরোধে পিছিয়ে থাকা দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।



বাংলাদেশে যে পরিমাণ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়, তার বেশিরভাগ ফেলা হয় আবাদি জমি, বিভিন্ন ধরনের জলাশয় এবং নদীতে। একইসঙ্গে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের সম্প্রতি করা গবেষণায় উঠে আসা ৫৬টি নদীদূষণের প্রধান কারণগুলোর একটি প্লাস্টিক বর্জ্য।

ক্ষতিকর কী ব্যবহার করছি

পরিবেশবাদীরা বলছেন, ‘সিঙ্গেল-ইউজ’ প্লাস্টিক পণ্যগুলো ব্যবহারের পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরাসরি জমিতে এবং নদী-নালা-খাল-বিল-সাগর-মহাসাগরে জমা হয়। আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এসব প্লাস্টিক ক্যানসার থেকে নানা ধরনের মরণব্যাধী তৈরি করতে পারে।

ইউরোপিয়ান কমিশন ১০ ধরনের ‘সিঙ্গেল ইউজ’ প্লাস্টিকপণ্যের একটি তালিকা করেছে। সেগুলো হলো— কটনবাড স্টিক, প্লাস্টিকের ছুরি, চামচ, প্লেট, গ্লাস, খাবারের মোড়ক, তরল পানীয় বোতল, প্লাস্টিকের ব্যাগ ও স্যানিটারি আইটেম।

গত ১ মার্চ মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ অধিশাখা-১ থেকে পাঠানো চিঠির মাধ্যমে দেশের পরিবেশ দূষণ রোধে জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ জেলার সব সরকারি অফিস ও উপকূলীয় এলাকায় ‘সিঙ্গেল ইউজ’ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু আদৌ তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) এর সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার খলিলুর রহমান বলেন, ‘প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে আমাদের বিকল্প সামনে আনতে হবে।



প্রথমত প্লাস্টিকের ব্যাগ বা টিস্যু ব্যাগ ব্যবহার না করে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। জনগণকে ব্যাপকহারে সচেতন করতে হবে। দিনে যে পরিমাণ ডাব খাওয়া হয়, তার সঙ্গে স্ট্র ব্যবহার না করেও ডাব খাওয়া যায়, সেই বিষয়টি বুঝাতে হবে। প্লাস্টিকের দৈনন্দিন ব্যবহার নিজেদের ভালো থাকার জন্য জরুরি— এটা বুঝতে পারলে মানুষ বিকল্প খুঁজে নেবে।’

প্লাস্টিকে সমস্যা কী

গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাস্টিকের কিছু রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যা প্লাস্টিক থেকে বেরিয়ে গিয়ে আমাদের খাবার ও পানীয়তে প্রবেশ করতে পারে।

এসব রাসায়নিক দ্রব্য যেমন ফ্যালেটস ও বিসফেনলের সঙ্গে নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যার সম্পর্ক আছে। যেমন- শারীরিক স্থূলতা, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল সমস্যা, অথবা গর্ভধারণের ক্ষমতা হ্রাস।

কী ক্ষতি করে বলতে গিয়ে এনভায়রনমেন্ট এসডো’র সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার খলিলুর রহমান বলেন, ‘এই প্লাস্টিকগুলো পানিতে মিশছে, এগুলো নিষ্ক্রিয় হয় না।

ফলে সেখান থেকে আমরা মাছের মাধ্যমে খাচ্ছি, প্লাস্টিক খাদ্য-শৃঙ্খলে ঢুকে পড়ছে। প্লাস্টিক শক্ত করতে বা অতিমাত্রায় নরম করতে বেশকিছু কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। ১৭৫ রকমের মেজর কেমিক্যালের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।’

করণীয় কী

পলিথিনের ব্যাগ ও প্লাস্টিক বর্জন করলে এর বিকল্প কী হবে— সেদিকে নতুন করে ভাবতে হবে, বলছেন পরিবেশবাদীরা। তারা বলছেন, ব্যবহার করতে হবে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ও আসবাবপত্র।

সম্প্রতি এমন আরও এক পলিথিন ব্যাগ তৈরি হয়েছে, যা পানিতে দ্রবীভূত হয়ে যাবে। এসব বিষয়ে গবেষণা ও বাজারজাতকরণের জন্য সরকারকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।

পরিবেশের এত ক্ষতি করছে জানার পরেও কেন এর ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না প্রশ্নে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘আইন প্রয়োগের জায়গায় আমাদের সংকট দীর্ঘ দিনের।



এটা কার্যকর করতে গেলে এমন পরিকল্পনা করতে হবে, যেখানে জনগণ সরাসরি নিজেকে সম্পৃক্ত মনে করে। জনগণের অংশগ্রহণকে প্রাধান্য দিলে এই ধরনের কাজ সহজ হয়। পলিথিনের উৎস, উৎপাদন, বিপণন, ব্যবহার সব জায়গায় শক্ত আইনি প্রয়োগ এখন সময়ের দাবি।’

উন্নয়ন পরিকল্পনা একেবারেই পরিবেশ সংবেদনশীল নয়— উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার সময় আমরা ভাবি আগে উন্নয়ন করবো, পরে পরিবেশ রক্ষা করবো।

আমাদের বাজার মনিটরিং নেই। এই যে যত্রতত্র পলিথিন বিক্রি হয়, সেটাতো কোথাও না কোথাও উৎপাদন হচ্ছে। গোড়ার জায়গায় শক্ত পদক্ষেপ থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব কিছু না।’

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত