27 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ৮:১৩ | ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
পরিবেশ বাঁচাতে দূষণ রোধ করতে হবে
পরিবেশ দূষণ

পরিবেশ বাঁচাতে দূষণ রোধ করতে হবে

পরিবেশ বাঁচাতে দূষণ রোধ করতে হবে

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পলিথিন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও উপকারের দিক বিবেচনা করে পলিথিন পরিত্যাগ আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে। বলা যায়, এটি আমাদের জীবনযাত্রায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।

শপিংব্যাগ থেকে শুরু করে খাদ্যদ্রব্য কিংবা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংরক্ষণ করতেও পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। সে সুযোগটি নিচ্ছেনও প্রস্তুকারীরা। পলিব্যাগ নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা ব্যাগের হাতল না বানিয়ে ঠোঙার রূপ দিয়ে তা বাজারজাত করছেন।

হাতলবিহীন ঠোঙা ব্যবহারে কিছুটা বিপত্তি থাকলেও ব্যবহারকারীরা মেনে নিচ্ছেন তা খুব সহজেই। কারণ পলিথিন ব্যবহার করা আমাদের জন্য এক ধরনের বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে।



এ বিলাসিতার বা পলিথিন ব্যবহারের উপকারিতা জানলেও আমরা এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে এখনও অজ্ঞ রয়ে গেছি। এতে পলিথিন যেমন ব্যবহার হচ্ছে যথেচ্ছভাবে, তেমনি উৎপাদনও হচ্ছে মর্জিমাফিক। বিষয়টি মাথায় নিয়ে পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন যে, ‘পলিথিন দূষণ স্থল মাইনের চেয়েও মারাত্মক ভয়ঙ্কর।’

মূলত এই ভয়ঙ্কর বস্তুটি বা পলিথিন এক ধরনের পলিমার ফাইবার দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। প্রথম প্রস্তুত করা হয় ইংল্যান্ডের ইম্পেরিয়াল কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির গবেষণাগারে, সেটি ১৯৩৩ সালের দিকে।

অপরদিকে ঠিক ৪৯ বছর পর অর্থাৎ ১৯৮২ সালের মাঝামাঝিতে আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে পলিথিনের উৎপাদন আরম্ভ হয়।

তখন এটি মানুষের হাতে হাতে পৌঁছতেই এর সাময়িক উপকারিতায় মুগ্ধ হয়ে দেশবাসী পলিথিনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন দ্রুত। ফলে, এটি বাণিজ্যিক দিক দিয়ে দ্রুততম প্রসার ঘটে এবং দেশের বৃহত্তর বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে স্থান করে নেয়।

অপরদিকে এ শিল্পে প্রচুর ঋণও আদান প্রদান হতে থাকে। শিল্পটা এত ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটার আগ মুহূর্তেও আমরা এর খারাপ দিক সম্পর্কে জানতে সক্ষম হইনি। ততদিনে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে।

শুধু আমাদের দেশেই নয়, সমগ্র বিশ্বেই পলিথিনের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে স্বল্প সময়ের মধ্যে। গবেষণায় দেখা গেছে ১৯৫০-২০২০ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ৭৫০ কোটি টন প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা হয়েছে।

যার মধ্যে ব্যবহৃত ৮০ ভাগ পণ্যের পচন ধরেনি এখনো। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে প্রায় ১৩০০ কোটি টন প্লাস্টিক ব্যবহার করা হবে।



পলিথিন দূষণের ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে আমাদের জেনে নিতে হবে পলিথিনের গলনাঙ্ক তাপের হিসেবের তথ্যটি। সাধারণত আমাদের দেশে পলিথিন ১২০ থেকে ১৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ মাত্রায় পোড়ানো হয়।

এতে কিন্তু পলিথিন সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয় না। এটিকে বিনষ্ট করতে হলে সাত হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরের তাপমাত্রায় পোড়াতে হয়, নয়ত ডাইঅক্সিন জাতীয় এক ধরনের বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়।

যে গ্যাসের বিষক্রিয়ায় ফুসফুস ও ত্বকে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। এছাড়া পলিথিন পোড়ানোর সময় হাইড্রোজেন সায়ানাইড নামক এক ধরনের বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টির কারণে দহনকারী ব্যক্তি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়।

এ ধরনের কিছু ঘটনা ঘটেছেও আমাদের দেশে ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে। তখন প্রায় ১৫০ মহিলা ও ৩০০ শিশু শ্রমিক হাইড্রোজেন সায়ানাইডের শিকার হয়েছেন।

আবার নিন্মমানের পলিথিন উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বিষাক্ত রাসায়নিকের শিকারে পরিণত হতে দেখা যাচ্ছে। যেমন ক্যাডমিয়াম, লেড, টাইটোনিয়াম, ক্রোমিয়াম, নিকেল কপার ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে শ্রমিকরা আক্রান্ত হচ্ছে।

জানা গেছে, আমাদের দেশে প্রায় ৭৫ ভাগ মানুষ নানা কাজে পলিথিন ব্যবহার করে থাকেন। এ ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা শুধু শপিংয়ে নয়, প্রাত্যহিক কাজে এর ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে।

তার মধ্যে প্রদান কাজটি হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে ফ্রিজআপ করা। অথচ আমাদের অনেকেরই জানা নেই, পলিথিন মুড়িয়ে খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করলে এক ধরনের অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার কবলে পড়ে তা।

পরবর্তীতে সেই খাদ্যদ্রব্য বের করে আনলে ‘স্টাইরিন’ নামক গ্যাস উৎপাদিত হয়ে নিঃশ্বাস ও লোমকূপের মাধ্যমে মানব দেহে প্রবেশ করে। যার ফলে মাথা ব্যথা, দুর্বলতা, জটিল ও কঠিন রোগ ব্যাধি সৃষ্টি হয়; এমনকি স্নায়ুতন্ত্র বিকলের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।



অন্যদিকে প্লাস্টিকের পানির বোতল ও ট্যাপ ব্যবহারের প্রবণতার কারণে মানুষের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, এলার্জি, হাঁপানি, চর্মরোগ, থাইরয়েডের অতিরিক্ত হরমোন ধারণ এবং ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ দেখা দেয়।

অনেকে আবার খাবারকে নিরাপদে ঢেকে রাখতে রঙ্গিন পলিথিন ব্যবহার করেন যা আরও মারাত্মক। পলিথিনের রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে রঙের রাসায়নিক উপাদান মিশে খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টির কারণে জটিল রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতে হয় পরবর্তীতে।

পলিথিন ব্যবহারে শুধু খাদ্যে বিষক্রিয়াই ঘটে না, ঘটে ড্রেনেজ ব্যবস্থারও বিপত্তি। কারণ পলিথিন শত শত বছর ধরেও সক্রিয় থাকতে সক্ষম। এটি মাটির নিচে অথবা পানিতে দ্রবীভূত হয় না।

পলিথিন উৎপাদনে যে পলিমার ব্যবহার করা হয়, তা খুবই শক্তিশালী এবং যে কোন ধরনের ব্যাকটিরিয়া এর ভেতরে প্রবেশ করে নষ্ট করতে পারে না বলেই শত বছরেও অক্ষয় থেকে যায়।

এ কারণে মাটির উর্বরাশক্তি হ্রাস পায় এবং সুয়্যারেজ বা ড্রেনে আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। এ ধরনের জলাবদ্ধতায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা তো ভেঙ্গে পড়েই, তার ওপর ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গু মশার উপদ্রবও বাড়ে।

এ ছাড়াও ফসলের জমিতে পলিথিনের মিশ্রণের কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, নদ-নদী এবং সমুদ্রে পলিথিনের বর্জ্য নিক্ষেপণের ফলে জলজ প্রাণীদের জীবনহানি ঘটছে ব্যাপকভাবে।

খাদ্য ভেবে জলজ প্রাণীরা পলিথিনের বর্জ্য খেয়ে হজম করতে না পেরে পরিশেষে প্রাণ হারায়। এভাবে অনেক তিমি, কাছিমসহ অসংখ্য জলজপ্রাণী প্রাণ হারিয়েছে। তবে সত্য কথাটি হচ্ছে, সমুদ্রে পলিথিনের বর্জ্যের ভাগাড় বানানোর জন্য বাংলাদেশ মোটেও দায়ী নয়।



মূলত বঙ্গোপসাগরে বিদেশী জাহাজ কর্তৃক বর্জ্য নিক্ষেপের কারণে সমুদ্র বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। ইতোপূর্বে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানায় বেশ কিছু জাহাজ গোপনে বর্জ্য খালাস করেছে, সেই সংবাদও গণমাধ্যমে এসেছে।

১৯৯৮ সালের আলোচিত বিষয় ছিল, পারমাণবিক বর্জ্য ভর্তি বিদেশি একটি জাহাজ সাগর-মহাসাগরে বর্জ্য নিক্ষেপ করতে ব্যর্থ হয়ে বঙ্গোপসাগরে গোপনে নিক্ষেপ করে চলে যায়। এভাবে আন্তর্জাতিক চক্র প্রতিনিয়তই পলিথিনের বর্জ্য সাগরে নিক্ষেপ করে যাচ্ছে।

সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রতি মিনিটে সাগরের জলে ৩৫ হাজার প্লাস্টিক পণ্য যে কোন ভাবে পড়ছে; যার সংখ্যা বছরে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৪ মিলিয়ন। প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে কার্বন নিঃসরণ ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কারণ প্রতি বছর সারা পৃথিবী জুড়ে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১৮ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পোড়ানো হচ্ছে, তাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়ে জলবায়ুতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার প্লাস্টিক বর্জ্য ছড়িয়ে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক চক্র।



ওই বর্জ্যের ভাগাড়ে ছেঁড়া জাল থাকায় তাতে প্যাঁচিয়ে অনেক মাছ, কাছিম, ডলফিন প্রাণ হারিয়েছিল। যার ফলে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যহানিসহ মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ হয়েছিল।

সেই বর্জ্যের অধিকাংশই ছিল পলিথিনের বিস্তৃতি। উল্লেখ্য, সাগরে নিক্ষিপ্ত পলিথিন বর্জ্যরে কারণে সূর্য রশ্মির বিকিরণে মাইক্রোপ্লাস্টিক উৎপন্ন হয়ে জলজ প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করে। এতে প্রায় ৮৫০ প্রজাতির জলজ প্রাণী রোগে আক্রান্ত হয়। এছাড়াও বছরে ১০-১২ লাখ পাখি প্লাস্টিক দূষণের শিকার হচ্ছে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত