পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে বাংলাদেশই উপকৃত হবে
বাংলাদেশের সামনে জলবায়ুবিষয়ক বিভিন্ন কাজে ১ হাজার ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার বাড়তি সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে। বাজেটে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরাদ্দ প্রদান, কার্বন কর আরোপ এবং বৈদেশিক ও দেশীয় বিনিয়োগ আনার মাধ্যমে এ অর্থ সংগ্রহ করা যেতে পারে। এ জন্য যথাযথ নীতি-পদক্ষেপ নিতে হবে।
আর কাঁচামাল সংগ্রহ, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও পণ্য সরবরাহ—সব পর্যায়ই হতে হবে পরিবেশবান্ধব। এতে দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশই উপকৃত হবে। তবে তা করতে গেলে শিগগির এ–সংক্রান্ত গতিশীল কৌশলপত্র প্রণয়ন করতে হবে।
ঢাকার একটি হোটেলে রবিবার ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআইa) ৬০ বছর পূর্তি উদ্যাপন এবং দুই দিনব্যাপী বিনিয়োগ মেলার উদ্বোধনী দিনে ‘গ্রিন ভ্যালু চেইন’ শীর্ষক অধিবেশনে এসব কথা বলা হয়েছে।
এতে দেশে সামগ্রিক পণ্য ও পরিষেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতি জোর দেওয়া হয়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের উন্নয়নপ্রক্রিয়াকে পরিবেশবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব করাই ছিল অধিবেশনটির আলোচ্য বিষয়।
গ্রিন ভ্যালু চেইন বিষয়ে আয়োজিত অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন স্মার্ট বাংলাদেশ নেটওয়ার্কের কো-চেয়ার এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের উপাচার্য ইমরান রহমান। ইউনিলিভার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার ছিলেন সঞ্চালক।
ইমরান রহমান তাঁর প্রবন্ধে জলবায়ু খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও পানির লবণাক্ততা বাড়ছে। অন্যদিকে কৃষিজমি কমছে, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে, নদীভাঙন হচ্ছে, শহরে বস্তিবাসী বাড়ছে এবং প্রাণহানি ঘটছে।
পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বেশি খরচ হয় বলে যে দাবি করা হয়, তা আসলে খরচ নয় বরং বিনিয়োগ বলে প্রবন্ধে মন্তব্য করা হয়। বলা হয়, সার্বিকভাবে পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে করসুবিধাও থাকা দরকার।
সুবিধা হিসেবে প্রবন্ধে বলা হয়, পরিবেশবান্ধব হওয়া মানেই পানিসহ সব ধরনের অপচয় ও দূষণ এবং জ্বালানির ব্যবহার কমবে। এর বিপরীতে উৎপাদনশীলতা ও উদ্ভাবন বাড়বে। দেশের পোশাক খাত ইতিমধ্যে এ রকম স্বাক্ষর রেখেছে। যদিও ব্যাপকভাবে সারা দেশে পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি।
মূল প্রবন্ধে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ্যপুস্তকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয় এবং কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার পাঠ্যপুস্তকে পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচি এবং পরিবেশ–সম্পর্কিত গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তহবিল বরাদ্দের কথাও বলা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ শুরুতেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর গবেষণায় গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, কোমল পানীয়র বোতলগুলো যদি কাচের হয়, সেটাই হবে একটা বড় পরিবর্তন।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) উদ্যোগেই সেন্ট মার্টিন থেকে প্লাস্টিক বিদায় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি সংস্থাটিকে এ ব্যাপারেও ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
ইউএনডিপির আঞ্চলিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছে, সেহেতু এ দেশের সব পর্যায়েই পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা তৈরি করা আরও বেশি দরকার।
সবুজ ও সমৃদ্ধ পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে সচেষ্ট হওয়ার পরামর্শ দিয়ে জনাব আজাদ বলেন, গবেষক, এফবিসিসিআই, এফআইসিসিআইসহ সবাইকে বসে একটা নীতিমালা করতে হবে।
বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) চেয়ারপারসন নিহাদ কবির বলেন, ‘একটি পণ্য বাজারজাত ও বিক্রি করার পর এর ব্যবহার নিয়ে আমরা সজাগ থাকি না, যা কিছু কিছু পরিবেশদূষণকারী বর্জ্যে পরিণত হয়। গুণগত মান রক্ষা করে পণ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সদস্য মোহসিনা ইয়াসমিন জানান, তাঁর সংস্থার জলবায়ু–সম্পর্কিত কিছু কর্মসূচি রয়েছে। এ ছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহযোগিতায় একটা বিনিয়োগ পলিসি প্রণয়নের কাজ চলছে।
পরিবেশগত টেকসই অবস্থার জন্য তিনটি জিনিস দরকার বলে মনে করেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান। এগুলো হচ্ছে বিনিয়োগ ও ঝুঁকি গ্রহণের তৃষ্ণা, উদ্ভাবনের জন্য প্রণোদনা এবং গ্রাহকদের জন্য সহায়ক–নীতির উদ্যোগ।
হোটেল র্যাডিসন ব্লুতে আয়োজিত এফআইসিসিআইয়ের বিনিয়োগ মেলায় ৪০টি স্টল রয়েছে। ৩৫টি দেশের দুই শতাধিক সদস্যের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন এফআইসিসিআইয়ের এই মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত।