31 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
দুপুর ২:৩৫ | ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
দূষিত পানি ফেলা হচ্ছে ব্রহ্মপুত্রে, হুমকির মুখে পরিবেশ
পরিবেশ দূষণ

দূষিত পানি ফেলা হচ্ছে ব্রহ্মপুত্রে, হুমকির মুখে পরিবেশ

দূষিত পানি ফেলা হচ্ছে ব্রহ্মপুত্রে, হুমকির মুখে পরিবেশ

ময়মনসিংহ শহর দিয়ে বয়ে যাওয়া পুরোনো ব্রহ্মপুত্র অপরিকল্পিত খনন করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। কিছুদিন আগে ‘মৃতের চিৎকার’ ব্যানারে লিখে নদে নেমে তরুণদের প্রতিবাদ আমরা দেখেছি।

অনেক আগে থেকে ‘ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন’ নামেও একটি আন্দোলন আছে। তারা নদ সুরক্ষায় সাত দফা দাবি জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) খনন করেছে নদটি। কিন্তু এতে তেমন কোনো উপকার হয়নি। সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য অবৈধ স্থাপনায় বিপর্যস্ত এ নদ।



তিস্তার জলধারা কুড়িগ্রামের চিলমারী এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত রচনা করে ব্রহ্মপুত্রে মিলিত হয়। ব্রহ্মপুত্র তখন বিপুল জলরাশি নিয়ে খাত পরিবর্তন করে। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে জোনাই নামে একটি ছোট নদে গভীর খাত সৃষ্টি করে ওই পথে প্রবাহিত হয়।

তখন এর নাম হয় যমুনা। ময়মনসিংহ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ব্রহ্মপুত্রের পুরোনো যৌবন না থাকলেও প্রবহমান নদ হিসেবেই টিকে আছে। বর্তমানে জামালপুর, ময়মনসিংহ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়।

ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ বলেন, ‘দেওয়ানগঞ্জের ভরাট হওয়া সংযোগস্থলে এখন নানা অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। আমরা সেসব উচ্ছেদ করে যমুনার সঙ্গে পুরোনো সংযোগ স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছি। এটি করা সম্ভব হলে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র প্রাণ ফিরে পাবে।’

গত মে মাসে ময়মনসিংহের ত্রিশালে গিয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা লাগোয়া ব্রহ্মপুত্র দেখে বুঝলাম, এই নদে চরম সর্বনাশ করার সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের আয়োজিত একটি কর্মসূচিতে প্রায় ছয় বছর আগেও সেখানে গিয়েছিলাম। তখনো নদের অবস্থা খারাপ ছিল। কিন্তু এত খারাপ ছিল না।



দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার যে স্থানে যমুনা থেকে ব্রহ্মপুত্র বিচ্ছিন্ন হয়েছে, সেখানে নদ-সংযোগ চালু করতে হবে। দেওয়ানগঞ্জ থেকে মেঘনায় মিলিত স্থান পর্যন্ত নদের প্রাণপ্রবাহ ঠিক রাখতে হবে। এসবের উদ্যোগ যদি এখনই গ্রহণ করা না যায়, তাহলে এই নদ ময়মনসিংহের আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপে পরিণত হবে।

সকালে নদের পাড়ে হাঁটতে আসা বিভিন্ন বয়সী বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। প্রবীণ ব্যক্তি জয়নাল বলছেন, ‘নদ থাইক্যা বালু তুইল্যা নদের পাড়ে ফেইল্যা এটার অবস্থা খারাপ কইরা দিল।

বালু তোলা অল্প দিন থাইক্যা প্রশাসন বন্ধ করছে।’ আরেকজন বলছেন, নদ দখল করতে করতে শেষ করে ফেলছে। আরেক প্রবীণ ব্যক্তি বলছেন, ‘১০ বছর আগে যে পানি ছিল, এখন তা–ও নাই। চোখের সামনে নদটা মইরা যাইতেছে।’

আবুল কালাম আল আজাদ ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ব্রহ্মপুত্র ঘুরে আর অনেকের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলাম, নদটি রক্ষা করাই এখন কঠিন। ব্রহ্মপুত্র নদকে বিনুনি বৈশিষ্ট্যের নদ বলা হয়। এ নদ প্রবাহকালে বিভিন্ন স্থানে একাধিক ধারার সৃষ্টি করে। ময়মনসিংহ শহরের পাশেই এ রকম দুটি ধারা ছিল। মাঝখানে চর ছিল।

চরের উজান দিয়ে প্রবাহিত ধারাটির মুখ বন্ধ করা হয়েছে। নদের পাড়ের একজন ব্যক্তি হাফিজ আলী নদ ভরাট হওয়ার আরেকটি কারণ শোনালেন। তিনি বলছেন, বালু তোলার কারণে অনেক স্থানে ভাঙন বেড়েছে। ফলে ভাঙনের মাটি নদে পড়ে নদ ভরাট হচ্ছে।



শহরের কাছারিঘাটে দেখলাম একটি পাকা সড়ক নদের ভেতরে ঢুকে গেছে। একাধিক ভবনও চোখে পড়ল। জানলাম নদের তীরে যে পাকা সড়ক, সরকারি অনেক স্থাপনা সব নদের ভেতরেই হয়েছে। বর্তমানে খালি চোখে দেখে তা বোঝা বোঝা কঠিন। পুরোনো কাগজপত্র দেখে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা প্রয়োজন।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায় আড়াই হাজার দখলদার আছে শুধু ময়মনসিংহের। অধিকাংশই ব্রহ্মপুত্রের দখলদার।

ময়মনসিংহ শহরটি ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়েই। শহরের সব দূষিত পানি ব্রহ্মপুত্রে ফেলা হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে খননকৃত নদে পানিসংকট দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন অপরিকল্পিতভাবে নদ খনন করা হচ্ছে। এ কারণে দেখা দিয়েছে পানিশূন্যতা এবং জেগে উঠেছে চর।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর হয়েছে। সিটি করপোরেশন হয়েছে। এখানে জনবসতি বাড়ছেই। ব্রহ্মপুত্রের আশপাশে অনেক শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। ব্রহ্মপুত্র নদ সুরক্ষার জন্য এর সব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা অত্যন্ত জরুরি।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার যে স্থানে যমুনা থেকে ব্রহ্মপুত্র বিচ্ছিন্ন হয়েছে, সেখানে নদ-সংযোগ চালু করতে হবে। দেওয়ানগঞ্জ থেকে মেঘনায় মিলিত স্থান পর্যন্ত নদের প্রাণপ্রবাহ ঠিক রাখতে হবে। এসবের উদ্যোগ যদি এখনই গ্রহণ করা না যায়, তাহলে এই নদ ময়মনসিংহের আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপে পরিণত হবে।

নদের প্রস্থ কমিয়ে সড়ক নির্মাণ করার যে কথা শোনা যাচ্ছে, তা বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না। দীর্ঘ মেয়াদে প্রাণবৈচিত্র্য, জলবায়ু এবং জলপথ তথা ময়মনসিংহের মানুষের কথা বিবেচনা করে ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষায় সর্বস্তরের মানুষের উচিত ঐক্যবদ্ধ হওয়া।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত