ঢাকার পরিবেশ সংরক্ষণ একান্ত জরুরি
সবুজ শ্যামল বৃক্ষ জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য সুরক্ষা এই বৃক্ষ। হাসপাতাল বা ক্লিনিকে গিয়ে যে অক্সিজেন আমাদের কিনতে হয় চড়া মূল্যে, বৃক্ষ তা সরবরাহ করে বিনা মূল্যে।
পূর্ণ বয়স্ক একটি বৃক্ষ ১০ জন মানুষের বার্ষিক অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করে। বাতাস থেকে ৬০ পাউন্ডের বেশি ক্ষতিকর গ্যাস শোষণ করে ১০টি এসির সমপরিমাণ তাপ নিয়ন্ত্রণ করে বৃক্ষ। আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ, বায়ুদূষণ রোধসহ শত শত টন কার্বন শোষণ করে বৃক্ষ পরিবেশ অক্ষত রাখতে অপরিসীম অবদান রাখছে।
ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০২০ অনুসারে যেকোনো প্লটে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবনের চারপাশে খোলা জায়গা ছেড়ে দিয়ে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) বজায় রাখা বাধ্যতামূলক।
বহুতল ভবন নির্মাণে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড, ১৯৯৩ অনুসরণ করাও বাধ্যতামূলক। ভবনের সামনের/চারপাশের খোলা জায়গা কোনো অবস্থাতেই পাকা না করে সেখানে উপযুক্ত প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানোর নির্দেশনাও আছে।
২০২০-২১ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট অভিযানে বহু আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবন নির্মাতাদের উচ্চ অঙ্কের জরিমানা দণ্ড দিয়ে ভবনের সবুজায়নে ভবননির্মাতাদের বাধ্য করা হয়েছিলো। অ্যান্টিবায়োটিকের মতো সুফল বয়ে আনা এই অভিযান পরিচালনার পথে প্রচণ্ড প্রতিকূলতাকে রুখেছিলো প্রশাসনিক দৃঢ়তা নিয়ে।
পরিবেশ ধ্বংসের জন্য শিল্প-কারখানার মালিকদের সমান্তরালে ভবনের মালিকেরাও দায়ী। ঢাকার সিংহভাগ ভবন নির্মাণে অধিকাংশ প্লটে একটি কলাগাছ রোপণের স্থানও রাখেন না।
অথচ গৃহসজ্জার উপকরণ ক্রয়ে কতিপয় ভবনমালিকের অর্থ অপচয়ের যে মহা-আয়োজন, ভবনে গাছ লাগানোর বিষয়টি তাদের যেন একেবারেই অপ্রয়োজন। নগর প্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাজউক, পরিবেশ অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ এবং সিটি করপোরেশন পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে যতটা শক্তিসামর্থ্যহীন, তার চেয়েও বেশি উদাসীন ও গতিহীন।
পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়ে ‘সবুজ ঢাকা’ গড়তে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে ঢাকা হবে বসবাসের জন্য অনুপযোগী। ঢাকার পরিবেশ থেকে একে একে গাছপালার বিদায়ে বায়ুদূষণ নগরজীবনের অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত সূক্ষ্ম বস্তুকণা, ধুলাবালি ও কার্বন পরিবেশকে দূষিত করায় স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণ মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমনকি পড়াশোনায় মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি কমায়। নাগরিকদের অবসাদগ্রস্ততা ও অস্থিরতা এবং বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের যে উগ্রতা ও হিংস্রতা, তার অনেক কারণের মধ্যে রয়েছে প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্নতা।
আবার প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে গভীর সংযোগ রয়েছে সামাজিক শান্তির। ঢাকার নাগরিকদের যে পরিমাণ সবুজ পরিবেশ প্রয়োজন, বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক কিংবা চন্দ্রিমা উদ্যানের সীমিত বৃক্ষরাজি দিয়ে তা কি মেটানো সম্ভব? সবুজের এই অভাব প্রকৃতির বিরুদ্ধে বিশাল এক অভিঘাত। ফলে জলবায়ুতে অনুভূত হচ্ছে তার বিরূপ প্রভাব।