জুড়ীর জাম্বুরা বেশ রসাল ও মিষ্টি
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার টিলা এলাকায় বহুকাল ধরে স্থানীয় জাতের বাতাবিলেবুর আবাদ হচ্ছে, স্থানীয়ভাবে যার নাম জাম্বুরা। এর মধ্যে দুটি প্রজাতির লেবু অন্যগুলোর চেয়ে বেশ রসাল ও মিষ্টি।
ফলের ভেতরে বীজও কম। তাই বাজারে এর চাহিদা বেশি। প্রায় দুই বছর আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি দল ওই দুটি প্রজাতির বাতাবিলেবুর সন্ধান পায়। তারা দুটি প্রজাতিকে উন্নত হিসেবে নির্বাচন করে তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
ওই দুটি প্রজাতির নামকরণ করা হয়, ‘জুড়ী বাতাবিলেবু-১’ ও ‘জুড়ী বাতাবিলেবু-২’। সম্প্রতি দেশের ৩৩টি উপজেলায় দুটি প্রজাতির সম্প্রসারণ ও প্রদর্শনী করা হয়েছে।
জুড়ীর ৬৬ হেক্টর টিলাভূমিতে বাতাবিলেবুর আবাদ হয়। এর মধ্যে গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে বেশি। সেখানে লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের ফরেস্ট ভিলেজার বা বন জায়গিরদারেরা বিভিন্ন প্রজাতির লেবু, মাল্টা, কমলার পাশাপাশি বাতাবিলেবুর আবাদ করেন। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে এ গাছে ফুল ধরতে শুরু করে। ফল পাকে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে।
কৃষি বিভাগ জানায়, ২০২০ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি দল দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বাতাবিলেবুর বিভিন্ন প্রজাতি সংগ্রহ করে।
এরপর যাচাই-বাছাই করে জুড়ীতে উৎপাদিত দুটি প্রজাতিকে উন্নত হিসেবে নির্বাচন করা হয়। পরে ‘লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদনবৃদ্ধি প্রকল্পের’ আওতায় ওই দুটি প্রজাতির চারা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
প্রকল্পের আওতায় দেশের ১২৭টি উপজেলা পড়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পভুক্ত ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের ৩৩টি উপজেলায় প্রায় চার হাজার চারা লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া এসব অঞ্চলের ছয়টি হর্টিকালচার সেন্টারে এসব প্রজাতির মাতৃবাগান করা হয়েছে। সেখানে আরও চারা উৎপাদন করে অন্যান্য উপজেলায়ও তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
এলাকার নামকরা ফলচাষি ছিলেন ইব্রাহিম আলী। তাঁর সন্তানেরা এখন ফলবাগান দেখাশোনা করেন। ইব্রাহিম আলীর বড় ছেলে জামাল হোসেন জানান, তাঁদের বাগানে ১০০ বাতাবিলেবুর গাছ রয়েছে। সেখানে ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী গাছও রয়েছে। এর মধ্যে জুড়ী বাতাবিলেবু-১ ও ২ প্রজাতিও রয়েছে।
বনে ঢোকার আগে জুড়ী-লাঠিটিলা সড়কের কালামাটি এলাকায় বাতাবিলেবু স্তূপ করে বস্তায় ভরা হচ্ছিল। ফয়জুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক পাইকার আশপাশের চার-পাঁচটি বাগানের বাতাবিলেবু কিনে নিয়েছেন।
ফয়জুল জানালেন, বস্তায় ভরার পর ফল ট্রাকে করে ঢাকার কারওয়ান বাজারে আড়তে পাঠানো হবে। আকারভেদে প্রতিটি বাতাবিলেবু আড়তদারের কাছে ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হবে।
পুষ্টিবিদদের মতে, ভিটামিন ‘সি’, বিটা ক্যারোটিন আর ভিটামিন ‘বি’তে ভরপুর বাতাবিলেবু। এই ফলে লিমোনয়েড নামে একধরনের উপাদান রয়েছে, যা ক্যানসারের জীবাণু ধ্বংস করে। বাতাবি লেবুর রস শরীরের বাড়তি চর্বিকে ভেঙে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
অন্যান্য অঞ্চলের বাতাবিলেবুর চেয়ে জুড়ীর দুটি প্রজাতি সুমিষ্ট ও রসাল হওয়ায় একসময় এটি সারা দেশে পরিচিত হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।