জীবন্ত সত্ত্বা’ রক্ষায় তেঁতুলিয়ায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের আলোচনা সভা
নদী দূষণ ও অবৈধ দখলদারিত্ব এবং অন্যান্য দূষণ থেকে নদী অর্থাৎ ‘জীবন্ত সত্ত্বা’ রক্ষার্থে এবং নদীর তথ্য ভাণ্ডার তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করতে এক আলোচনা সভা করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
উক্ত আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব ইকরামুল হক, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রকল্প প্রোগ্রাম অফিসার সেলিনা সুলতানা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা, তিরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) রফিকুল ইসলাম, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা।
সভায় বক্তারা বলেন, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে দেশের নদ-নদী হারিয়ে ফেলেছে তার প্রাণপ্রবাহ। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিভিন্নমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের বিরূপ প্রভাব পড়েছে নদ-নদী গুলোতে। নদীর নাব্যতা সংকট এবং গতিপথ পরিবর্তনে প্রাকৃতিক কারণ যেমন আছে, তেমনি মানবসৃষ্ট কারণও আছে। প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে দেশের নদ-নদীগুলো। উজান থেকে আসা পানি অতিরিক্ত বালু পলি বহন করছে। তাই নদী ভরাট হয়ে নাব্যতা কমে যাচ্ছে।
এদিকে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরা জানান, বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং নিরাপত্তা বিধান করবে রাষ্ট্র। এই সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করার জন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নদীর অবৈধ দখল, পানি ও পরিবেশ দূষণ, শিল্প কারখানা কর্তৃক সৃষ্ট নদী দূষণ, অবৈধ কাঠামো নির্মাণ এবং নানাবিধ অনিয়ম রোধে ও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার, নদীর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং নৌপরিবহনযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলাসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রয়োজনে হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং ৩৫০৩/২০০৯ এর রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ২৯ নং আইনে ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’ গঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে রিট পিটিশন নং ১৩৯৮৯/২০১৬ এর রায়ে হাইকোর্ট নদীকে ‘জীবন্ত সত্ত্বা’ (Living entity) রূপে ঘোষণা করেন এবং ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’কে দেশের সব নদীর ‘আইনগত অভিভাবক’ হিসেবে অভিহিত করেন।
‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’ দেশব্যাপী নদী রক্ষার জন্য এরই মধ্যে নানা উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় নদীর বর্তমান অবস্থা যাচাই, পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষণ কৌশল ও দূষণমুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে ‘নদী দূষণ, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং অন্যান্য দূষণ থেকে ৪৮টি নদী রক্ষা এবং নদীর তথ্য ভাণ্ডার তৈরি ও গবেষণা প্রকল্প (১ম পর্ব)’ বাস্তবায়ন করছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।
উক্ত প্রকল্পের আওতায় মহানন্দা এবং করতোয়া নদীর সমীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া তেঁতুলিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে তেঁতুলিয়া, গোবরা, বেরং, ডাহুক, ভেরসা, করতোয়া, চাওয়াই, তালমাসহ আরো অনেক নদী রয়েছে। এসব নদী রক্ষায় ও অবৈধ দখল এবং নদী দূষণ ইত্যাদি বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন এবং নদী ব্যবহারকারীদের জন্য পরামর্শ ও সুপারিশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সব স্তরের স্টেকহোল্ডারদের নদী রক্ষায় এগিয়ে আশার আহ্বান করা হয় এবং অবৈধ দখল ও নদী দূষণ ইত্যাদি বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন এবং নদী ব্যবহারকারীদের পরামর্শ ও সুপারিশ দেওয়া হয়।