40 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
বিকাল ৫:৩১ | ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
জার্মানি ফের তাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু করেছে
পরিবেশ ও জলবায়ু

জার্মানি ফের তাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু করেছে

জার্মানি ফের তাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু করেছে

ব্রিটিশ উপনিবেশিকতা ভারতের প্রাচীন সভ্যতাকে অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে দুর্বল করেছিল। ভারতের সম্পদ ব্রিটিশ শাসকরা লুটে নিয়ে লন্ডনকে সমৃদ্ধ করায়, বাংলার মানুষ ছিল অনাহারে।

একইভাবে আফ্রিকানদের দাস হিসেবে নেওয়া হয় উত্তর আমেরিকায়। উপনিবেশিক সম্পদ কুক্ষিগত করার মাধ্যমেই পশ্চিমারা শিল্পায়নে সক্ষম হয়েছিল।

উপনিবেশ হিসেবে ভারত এবং আফ্রিকা পাশ্চাত্যের উন্নয়নে বিরাট অবদান রেখেছে। যদিও এই অঞ্চলগুলো এখন স্বাধীন, কিন্তু পশ্চিমারা এখনো অন্য উপায়ে এই অঞ্চলগুলোকে উপনিবেশ করে রেখেছে। আর সেটা হলো ‘কার্বন উপনিবেশ’।

যে ইউরোপ নিজেদের নির্ধারিত ক্লাইমেট গোলের জন্য অন্যদের কয়লা ব্যবহারে ‘লেকচার’ শুনায়, চোখ রাঙায়, সেই একই ইউরোপ নিজেই এখন কয়লার ব্যবহারে ফিরে যাচ্ছে। কারণ তার এখন জ্বালানি দরকার।

উদাহরণ হিসেবে গত মাসের শুরুতে করা জার্মানির কর্মকাণ্ডের কথা বলা যায়। জুনে জার্মানির বন শহরে সহায়ক সংস্থাগুলোর ৫৬তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। এটা ছিল জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলন। প্রায় ২০০ দেশ এবং বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ইউরোপীয়ান কূটনীতিকরাও সেখানে ছিলেন।



সম্মেলনে দুটি দাবি ওঠে, কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থায়ন করা। কিন্তু এতে কি ইউরোপীয়রা রাজি হয়েছেন? না, তারা রাজি হননি।

তারা বরং আরও কয়লা চায় এবং তা তারা উন্নয়নশীল দেশ থেকেই চায়। এ ছাড়া সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলো এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, ধনী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাণ ও প্রকৃতির ‘ধ্বংস এবং ক্ষয়ক্ষতি’ সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি পূরণে খুবই ধীর।

দেশগুলো তাদের সমাজ ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করতে একটি তহবিল ব্যবস্থা চায়। কিন্তু সব মিলিয়ে এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে অগ্রগতি খুবই সামান্য।

ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের দুর্বলতা বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

রাশিয়াও ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে সেই নিষেধাজ্ঞার প্রতিশোধ নিয়েছে। আর এই গ্যাস না পাওয়াই ইউরোপ মহাদেশ কয়লায় ফিরে যাচ্ছে। জার্মানি আবার তাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু করেছে।

নেদারল্যান্ডস কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদনের ওপরে থাকা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উঠিয়ে নিয়েছে। ডেনমার্কও হয়তো একই সিদ্ধান্ত নেবে। ইতালি জ্বালানি বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। আর ইতালিয়ান বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো কয়েক মাস ধরে কয়লা মজুত করেছে। খুব শিগগিরই হয়তো তারা সেগুলো ব্যবহার করবে।

ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনালের জলবায়ু প্রভাববিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হারজিত সিং বলেন, জার্মানি এবং অন্যদের বিদেশে নতুন জীবাশ্ম জ্বালানির উৎস করা তাদের ভণ্ডামি।

কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জলোচ্ছ্বাস ও সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা দেওয়ায় অস্বীকৃতি জানানো হচ্ছে।

ইউরোপের আরও বেশি কয়লার প্রয়োজন কেন? কারণ তারা প্রচণ্ড তাপদাহে ভুগছে। তাই তাদের শীতাতপ ব্যবস্থার জন্য অধিক গ্যাসের প্রয়োজন। তাপদাহ তাদের জ্বালানি খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই জ্বালানি কোথা থেকে আসবে? ইউরোপের ব্যয় করা মোট গ্যাসের ৪০ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে।

কিন্তু রাশিয়ার এই গ্যাস সরবরাহ এখন নিশ্চিত নয়। ইতোমধ্যে রাশিয়া গ্যাস রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রমই ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করে। গ্যাজপ্রম নর্ড স্ট্রিম পাইপ লাইন দিয়ে জার্মানিতে গ্যাস নেয়। এরপর সেখান থেকে সমগ্র ইউরোপ মহাদেশে গ্যাস সরবরাহ করে।

জুনের মাঝামাঝিতে সেই গ্যাস সরবরাহ ঠিকভাবে হচ্ছে না। ইউরোপে গ্যাস রপ্তানি ৫০ শতাংশেরও বেশি কমিয়ে এনেছে রাশিয়া। তাই ইউরোপীয়ানরা কয়লায় ফিরে যাচ্ছে।



কথা হলো পুরোপুরি কয়লায় ফিরে গেলে ইউরোপের ক্লাইমেট গোলের কি হবে? ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ইউরোপ বন্ধ করতে চায়।

তা কিভাবে সম্ভব? ইউরোপের টাকা আছে, সুতরাং তারা অন্যায় সুবিধা নেবে। তাদের প্রয়োজনীয় কয়লা পাবে কোথায়? অন্য দেশ থেকে কয়লা আনবে। উন্নয়নশীল বিশ্ব থেকে আমদানি করবে।

উন্নয়নশীল বিশ্ব ইউরোপে কয়লা সরবরাহ করবে। এমনকি ইতোমধ্যে তা করছেও। কলম্বিয়া তেমন একটি দেশ। কেবল মার্চেই কলম্বিয়া থেকে ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন টন কয়লা আমদানি করেছে ইউরোপ ।

ব্রেমারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ইউরোপে কলম্বিয়ান কয়লা রপ্তানি ৪৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ইউরোপে কয়লা রপ্তানিকারক আরেক দেশ হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। গত বছর মার্চে দেশটি ইউরোপে কিছুই রপ্তানি করেনি।

কিন্তু চলতি বছরে ইতোমধ্যে দুই লাখ ৮৭ হাজার টন কয়লা রপ্তানি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়াও ইউরোপে কয়লা রপ্তানি করে। এমনকি এই তিন দেশ মিলিয়ে ইউরোপের ক্রমবর্ধমান কয়লার চাহিদা মেটাতে সক্ষম না।

এই দেশগুলো তাদের কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে। আরও একটি সমস্যা আছে। ইউরোপের ব্যাংকগুলো রাশিয়ার কয়লা ক্রয়ে অর্থ দেবে না। তাই ইউরোপের জ্বালানি কোম্পানিগুলোর হাতে তেমন কোনো বিকল্প নেই।

তাই উন্নয়নশীল বিশ্ব থেকেই তাদের আরও বেশি করে কয়লা কিনতে হবে এবং এর মাধ্যমেই ইউরোপ প্রচণ্ড তাপদাহে বাঁচতে পারে। তাহলে ইউরোপের জলবায়ু প্রতিশ্রুতির ব্যাপারটি কি দাঁড়াল?

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ কিনে এনে সমস্যার সমাধান খুবই কঠিন। অতীতে বিশ্বকে এই কথা বলার চেষ্টা কখনো করেনি ইউরোপ।

করপোরেট অ্যাকাউন্টিবিলিটির ক্লাইমেট রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির পরিচালক রাচেল রোজ জ্যাকসন বলেন, জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) চুক্তির ৩০ বছর পূর্তি হলো। ৩০ বছর পর, বিশ্বের উত্তরের দেশগুলো এখনো জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিপজ্জনকভাবে আসক্ত।

যেখানে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার প্রত্যয়কে বাঁচিয়ে রাখার কথা বলার সময়, সেখানে তারা নিজেরাই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ইউরোপের পরিচালক চিয়ারা মার্টিনেলি বলেন, উন্নয়নশীল দেশ নয়, রাশিয়া থেকেই তেল এবং গ্যাস আমদানি করে ইউরোপীয় দেশগুলোকে তাদের জলবায়ু টার্গেট ও বিদ্যুৎ শক্তির লক্ষ্যমাত্রা জরুরিভাবে ব্যাপক বৃদ্ধি করতে হবে। আর তাদের জীবাশ্ম জ্বালানিকে আরও লাগাম টানা দরকার। একজন জলবায়ু নেতার এটাই করা উচিত।



বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চরম আবহাওয়ার কারণে প্রতিবছর ৫২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হচ্ছে এবং ২৬ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্টের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের অর্ধেকের জন্য পৃথিবীর প্রায় ২৩টি ধনী দেশ দায়ী। আর এই ২৩ দেশের অধিকাংশই ইউরোপের। যেমন জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য।

বিশ্বের মাত্র ৭ শতাংশ মানুষ ইউরোপে বাস করে, কিন্তু উপমহাদেশটি এখনো পৃথিবীর প্রায় ২০ শতাংশ সম্পদ ব্যবহার করছে। সম্প্রতি জার্মানি ২০৩৫ সাল থেকে জীবাশ্ম-জ্বালানি ব্যবহার হবে এমন নতুন গাড়ি নির্মাণ নিষিদ্ধের ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ভক্সওয়াগেন, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ এবং অডিসহ কয়েকটি বিখ্যাত গাড়ি নির্মাণকারী দেশ হলো জার্মানি।

এই রকম অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যাবে, কিন্তু সার কথা হলো, যদি ইউরোপ কয়লা চায়, তাহলে তা তারা কিনতে পারে। যদি ইউরোপ কয়লা চায়, তারা তাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু রাখতে পারে।

কারণ ইউরোপীয় শীতাতপযন্ত্রগুলো অবশ্যই চালু রাখতে হবে। কিন্তু যখন উন্নয়নশীল দেশগুলো বলে যে তারা কয়লা ব্যবহার বন্ধ করতে পারবে না, তখন তাদেরকে কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে বলা হয়।

কয়লার রেশনিং করতে বলা হয়। আবার উন্নয়নশীল দেশগুলো যখন জলবায়ু ক্ষতিপূরণ এবং অর্থায়ন চায় তখন তারা প্রত্যাখ্যাত হয়।

এটাই চিরায়ত ইউরোপীয় ভণ্ডামি। যা উন্নয়নশীল বিশ্বকে নিজেদের উপনিবেশ হিসেবে বিবেচনা করে এবং নিজেদের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে নিয়মগুলো নিজেদের মতো করে তৈরি করে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত