মৌসুম শুরুর আগেই টাকা এসেছিল কৃষকের ঘরে। এটা সচরাচর দেখা যায় না, যখন ধানের দাম না পাওয়া কৃষকের বিবর্ণ ছবি দেখা যায় পত্রপত্রিকায়। কিন্তুএর উল্টো ছবিটা দেখা গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের আগাম আলু চাষিদের ক্ষেত্রে। গ্রানোলা, কাঠিলাল, এসটেরিক্স, ডায়মন্ডসহ বিভিন্ন জাতের আগাম আলু চাষ করে লাভবান হয়েছেন ঠাকুরগাঁয়ের কৃষক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে যেমন চাহিদা দামেও ভালো। কাঙ্ক্ষিত মূল্য পেয়ে খুশি চাষিরা। কৃষকের অভিযোগ কৃষি বিভাগ থেকে তেমন সহযোগিতা পান না তারা।
আর কৃষি বিভাগ বলেছে সকলকে সমান ভাবে পরামর্শ ও প্রয়োজনিয় সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। এ মুহূর্তে কৃষকের ক্ষেতে যে আলু আছে তা মূল মৌসুমের আলু, সেটা উঠতে আরো মাসখানেক বাকি। এটা থেকেই বীজ আলু রাখা হবে ও সারা বছর সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরে রাখা হবে। তবে আগাম আলু দিয়ে ইতিমধ্যেই বাজার সয়লাব আর তার দামও বেশ ভালো। অন্যান্য বছর মূল মৌসুমে আলুর বাজার পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা দামের আশায় কোল্ড স্টোরে সংরক্ষণ করে বাজারে দাম বাড়ার জন্য অপেক্ষা করতেন। কেউ কেউ আবার বীজ হিসেবে বেশি মূল্য পাওয়ার আশায় যতœ করে নিয়ম মেনে আলু চাষ ও সংরক্ষণ করতেন। কিন্তু এবার সে অপেক্ষার আগেই আগাম আলু চাষিদের মুখে হাসি ছিলো। তারা দাম পেয়েছেন গত ক’বছরের তুলনায় অনেক বেশি আর অন্যান্য ফসলের তুলনায় তাদের লাভ হয়েছে কয়েক গুণ। চলতি মৌসুমে জেলার বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর, রাণীশংকৈল, পীরগঞ্জ ও সদর উপজেলায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতর তথ্য মতে চলতি মৌসুমে ২৩ হাজার ৫২৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আর আলুর আবাদ হয়েছে ২৫ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে। বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা ক্ষেত থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন আলু ১৫-১৭ টাকা দরে। আর এই আলু ঢাকা, সিলেট, হবিগঞ্জ, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। এবার আলু চাষ করে বিঘা প্রতি লাভ হয়েছে ৪০-৫০ হাজার টাকা।
নারগুন এলাকার আলুচাষি খবির উদ্দিন বলেন, আমি ৭৫ শতক জমিতে আগাম আলু করতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। আর আমি আলু বিক্রি করেছি ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। একই এলাকার খায়রুল ইসলাম জানান, তিনি চুক্তি নিয়ে সাড়ে ৮ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। এর মধ্যে তার আড়াই একর আগাম আলু, তাতে তিনি লাভ করেছেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা। বাকি আলু স্বাভাবিক মৌসুমের যার কিছুটা বীজ আর কিছুটা দামের আশায় তিনি কোল্ড স্টোরে সংরক্ষণ করবেন। গড়েয়ার কৃষক আব্দুল আউয়াল জানান, আগাম আলুর আবাদটি ঘন কুয়াশার কারণে দ্রুত রোগ আক্রান্ত হয় কিন্তু এবার শীত কিছুটা দেরিতে পড়ায় স্বাভাবিক মৌসুমের চাইতে একটু স্প্রে বেশি করা লাগলেও ফলন হয়েছে ভালো এবং বাজারে দামও ভালো ছিল। তাই তিনি এবারের মতো আলু চাষ করে আর কখনই লাভবান হননি। মো. লাভলু বালিয়াডাঙ্গীর আলু চাষি। তিনি অভিযোগ করেন, কৃষি বিভাগ কখনই তার কাছে আসেনি। তবে নিজের অভিজ্ঞতা ও কীটনাশক দোকানদারের পরামর্শে প্রয়োজনীয় সার-কীটনাশক সঠিক সময়ে প্রয়োগ করে তিনি ভালো ফলন ও বাজারে ভালো দাম পেয়েছেন।