অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন
সুন্দরবন বিষয়ক কোনও কিছু পড়তে গেলেই আমরা ম্যানগ্রোভ শব্দটি মুখে আনি। কেউ ওই অঞ্চলটাকে ম্যানগ্রোভ বলি, আবার কেউ কাঁটার মতো দেখতে কাদার উপর যা জেগে থাকে, সেটাকে বলি। আসলে ম্যানগ্রোভের ব্যাপারটা কী?
সাধারণভাবে জোয়ারভাটায় প্লাবিত বিস্তির্ণ জলাভূমিকে বোঝায়। ম্যানগ্রোভ বন জোয়ারভাটায় বিধৌত লবনাক্ত সমতলভূমি। উষ্ণমন্ডলীয় ও উপ-উষ্ণমন্ডলীয় অক্ষাংশের আন্তপ্লাবিত আবাসস্থলের সমন্বয়ে ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেম গঠিত। এ আন্তপ্লাবিত জলাভূমি বিভিন্ন স্তরের পারষ্পরিক নির্ভরশীল উপাদানসমূহ যেমন- পানি প্রবাহ, পলি, পুষ্টি উপাদান, জৈব পদার্থ এবং জীবজন্তুর সমন্বয়ে গঠিত।
আন্তপ্লাবিত এলাকা নিয়ে গঠিত বলে ‘ম্যানগ্রোভ’ জলজ, উপকূলীয়, উজানের এবং স্থলজ প্রতিবেশের সাথে পারস্পরিক আন্তক্রিয়ায় জোরালভাবে সম্পর্কিত, যার ইহার ফলে ‘ম্যানগ্রোভ’ বিভিন্ন স্তরের সামুদ্রিক, মিঠাপানি ও ভূমিজাত উদ্ভিদ এবং প্রাণীকুলকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে।
ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বৈচিত্র্যতা বলতে বৃহৎ উদ্ভিদও প্রাণীকুল ও বহু অজানা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উদ্ভিদ প্রাণী এবং কীটপতঙ্গের গোষ্ঠির সমন্বয়ে গঠিত সমাজকে বোঝায়। ম্যানগ্রোভ ব্যবস্থাপনায় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো অনেক প্রজাতিই এ বনকে তাদের জীবনচক্রের কোনো না কোনো সময় ব্যবহার করে।
ম্যানগ্রোভ একটি বৃহৎপরিসরের ভূ-প্রাকৃতিক, আবহাওয়া ও জলবায়ুগত, পানি এবং মৃত্তিকার অবস্থার উপর বিস্তৃত বলে এর ইকোসিস্টেমে বিচিত্রতা রয়েছে। দেশে দেশে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের সাথে মানুষের একটি নিবিঢ় ও সুন্দর সাংস্কৃতিক সহ অবস্থান রয়েছে।
একই সাথে এই বনাঞ্চলের ইকোসিস্টেমে বনের গঠন, উৎপাদন এবং কার্যক্রম গভীরভাবে পরিবর্তনশীল। মানুষের নিকট ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেম এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিক, বস্ত্তগত ও সামাজিক মূল্য রয়েছে।
ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেমকে বরাবরই নানাভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়। কেননা কেবলমাত্র প্রত্যক্ষভাবে প্রাপ্ত দ্রব্যসমূহকে অর্থনৈতিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় যা ম্যানগ্রোভের সকল দ্রব্য ও সেবার পরিপূর্ণ মূল্যমানের যৎসামান্য অংশ বিশেষ।
সারা পৃথিবী ব্যাপী গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের উষ্ণ ও উপউষ্ণ উপকূলীয় এলাকায় ম্যানগ্রোভ জাতীয় বনাঞ্চল দেখা যায়। সাধারণত ৩০০ উত্তর ও ৩০০ দক্ষিণ অক্ষাংশের বরাবর ম্যানগ্রোভ বনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যা তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্য ম্যানগ্রোভের সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করে। যদিও ম্যানগ্রোভ ১০০ সে. পর্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু অতিরিক্ত ঠান্ডায় অসহনীয় এবং ম্যানগ্রোভ চারা বিশেষভাবে তুষার ও ঠান্ডায় সংবেদনশীল।
ম্যানগ্রোভ জন্মানোর জন্য সবচেয়ে উপযোগী অঞ্চল হলো আদ্র-ক্রান্তীয় অঞ্চল, যেমন- গঙ্গা, মেকং এবং আমাজানের উপকূলবর্তী ব-দ্বীপ এলাকা । পৃথিবীতে ১০২টি দেশে ম্যানগ্রোভের অস্তিত্ব থাকলেও কেবলমাত্র ১০টি দেশে ৫০০০ বর্গ কিমি এর বেশি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রয়েছে।
পৃথিবীর সমগ্র ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ৪৩% ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া এবং নাইজার এ অবস্থিত এবং এদের প্রত্যেকটি দেশে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ২৫% হতে ৬০% ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থিত ম্যানগ্রোভ বন (সুন্দরবন) পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে পরিচিত।