বাংলাদেশে প্রতি বছর যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণ জনিত অসুখবিসুখের কারণে। কিন্তু সারা বিশ্বে এধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ।পরিবেশ দূষণের বেশ কয়েকটি শ্রেণীবিভাগ রয়েছে। যেমন- বায়ু দূষণ, মাটি দূষণ পানি দূষণ, খাদ্য দূষণ ইত্যাদি রয়েছে। এর সবগুলোর ফলেই কোন না কোনভাবে মানুষ ক্ষতির শিকার হচ্ছে।তন্মধ্যে মাটি দূষণ অন্যতম।
সাধারণত প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য মৃত্তিকার সাথে মিশে মাটি দূষণ ঘটায়।এছাড়াও প্লাস্টিক ও কাচ যেখানে সেখানে ফেলা, শিল্পজাত বর্জ্যক সরাসরি ভূমিতে নিষ্কাষণ, অতিরিক্ত পরিমাণ বনভূমি ধ্বংসের ফলে মৃত্তিকা দূষণ হয়, আগাছানাশক, কীটপতঙ্গ ধ্বংসকারী কীটনাশক, সারের প্রয়োগ, ইট ভাটার ছাই, ময়লা আবর্জনার স্তুপ, বালাইনাশক প্রভৃতির কারনে মাটি দূষিত হয়ে থাকে।আর এই দূষিত মাটির কারনে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এর দ্বারা সংক্রমিত হয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।তবে এর প্রভাব বেশি শিশুদের উপর পড়ে।ফলে অনেক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে শিশুরা।
মাটি দূষণের কারনে কি ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন আপনি –
চর্ম এবং পাকস্থলির রোগ সংক্রমণ:
নখের ফাঁকে মাটি ঢুকলে সে মাটি মানব দেহে প্রবেশ করতে পারে। শাক সবজিতে লেগে থাকা মাটি ভাল করে না ধুয়ে খেলে তা মানব দেহে প্রবেশ করতে পারে। ফলে পাকস্থলিতে মারত্মক রোগ ব্যাধির সংক্রমণ ঘটতে পারে। রান্নার জন্য শাক সবজি কাটার আগে পরিস্কার পানিতে ভালো ভাবে ধুয়ে নিতে হবে। তাছাড়া দূষিত মাটি বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, এবং মাথা ধরার কারণ হতে পারে। দূিষত মাটি চামড়ায় লাগলে ফুসকুড়ি, চুলকানি, ঘা, চর্মরোগ ইত্যাদি হতে পারে।
ক্যান্সার:
অধিকাংশ বালাই নাশক ও রাসায়নিক সারের মধ্যে আছে বেনজিন, ক্রমিয়াম এবং অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য যা ক্যান্সার রোগ সৃষ্ঠি করে। এমন কি আগাছানাশকের মধ্যেও ঐ সব বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য রয়েছে। এ সমস্ত বিষাক্ত বালাইনাশক, আগাছানাশক এবং রাসায়নিক সার যখন ফসলে প্রয়োগ করা হয় তখন চোয়ায়ে মাটিতে জমে এবং মাটি দূষণ ঘটায়। ফসল তা শুষে নেয়। ঐ সকল বিষাক্ত শস্য সেবনের ফলে রক্তের লোহিত কনিকা, শ্বেত কনিকা এবং এন্টিবডি উৎপাদন ব্যাহত হয়। যার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
কিডনি ও লিভারের রোগ:
পারদ এবং সাইক্লোডাইনস্ এর মত পদার্থ যখন মাটিতে থাকে তখন তা ঐ মাটিতে উৎপাদিত খাদ্য শস্যের মাধ্যমে প্রাণী দেহে প্রবেশ করে। এ সব বিষাক্ত পদার্থ প্রাণীর কিডনি ও লিভারের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করতে পারে। যে সব মানুষ জঞ্জালের স্তুপের কাছে অথবা শিল্প কারখানার কাছে বাস করে তাদের সহসাই লিভার এবং কিডনির রোগ হওয়ার আশংকা থাকে।
ম্যালেরিয়া:
মাটি দূষণ নিবিড়ভাবে পানি দূষণের সাথে যুক্ত। দূষণে দূষণে মিলে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ হয়। ভেজা কর্দমাক্ত আবর্জনা যুক্ত পরিবেশে মশার জন্ম হয়। মশা ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ঘটায়।
কলেরা ও আমাশয়:
দূষিত মাটি চোয়ায়ে ভুগর্ভস্থ পানি দূষিত হয়। পানীয় জলের উৎস দূষিত হয়। এভাবে পানিবাহিত রোগ যেমন কলেয়া ও আমাশয়ের প্রাদূর্ভাব বৃদ্ধি পায়।
এসব রোগ অকাল মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।‘আজকের প্রজন্ম আগামী দিনের ভবিষ্যত’- তাই সম্ভব হলে মাটি দূষণ সম্পূর্ণ বন্ধ করা অথবা লক্ষণীয় ভাবে কমিয়ে আনার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।