অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন কতটুকু সুরক্ষা দেয় এবং ইহা কিভাবে কাজ করে?
হালনাগাদ করণ: এপ্রিল ১৪, ২০২১
বাংলাদেশে ২৭ জানুয়ারী, ২০২১ তারিখে কুর্মিটোলা হাসপাতাল, ঢাকায় প্রথম এক জন নার্সকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার মাধ্যমে কোভিধ -১৯ করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদান শুরু হয়।
অতপর ২৮ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধূ শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (পিজি হাসপাতাল) ঢাকাসহ কুর্মিটোলা হাসপাতালের ৩০ জন ডাক্তার, নার্স ও হাসপাতাল কর্মীকে টিকা প্রদান করা হয়। ২৯ জানুয়ারী ঢাকার মোট ৪ টি সরকারী হাসপাতালের ৫০০ জন ডাক্তার, নার্স ও হাসপাতাল কর্মীকে টিকা প্রদান হয়।
টিকা গ্রহনকারীদের মধ্যে তেমন কোন প্রতিক্রিয়ার উদ্ভব না হওয়ায় ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ তারিখ হতে ব্যাপকভাবে বাংলাদেশে টিকা দেওয়া শুরু হয় এবং ১২ এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত ৬১.৭০ লক্ষ জনকে একক ডোজ প্রয়োগ করা হয় (Source: Our World In Data), যা কোভিধ করোণা ভাইরাস টিকা প্রদানে সংখ্যার দিক হতে বাংলাদেশ বিশ্বে বর্তমানে ২০ তম স্থান রয়েছে।
বাংলাদেশে ১ম ডোজ দেওয়ার নুন্যতম ৮ সপ্তাহ (দুই মাস) পর টিকার ২য় ডোজ ৮ ই এপ্রিল ২০২১খ্রি: হতে শুরু হয়েছে এবং অদ্য এপ্রিল ১২, ২০২১ খ্রি: পর্যন্ত প্রায় ৫.২৩ লক্ষ জনকে ২য় ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে একক ডোজ গ্রহনকারীদের মধ্যে কিছু লোক করোণায় আক্রান্ত হয়েছে, কয়েকজন গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং প্রথম ডোজ গ্রহনকারী একজন সংসদ সদস্য করোণায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে । এসব ঘটনাকে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞাগন স্বাভাবিক হিসাবে দেখছেন। কারণ, কোন টিকাই ১০০% সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয় না।
বিশ্বে বর্তমানে বহু কোভিধ–১৯ এর টিকার গবেষণা চলছে, সংখ্যার দিক হতে ২০০ এর উপরে এবং অনেকগুলো বিভিন্ন দেশের সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে অনুমোদিত দেশসমূহে প্রয়োগ শুরু হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ৪টি কোভিধ টিকার জরুরী ক্ষেত্রে প্রয়োগের অনুমোদন প্রদান করেছে এবং রাশিয়ার তৈরী স্ফুটনিকসহ অন্যগুলো পর্যবেক্ষণ করছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক জরুরী ক্ষেত্রে প্রয়োগের অনুমোদিত টিকাগুলো হলো:-
- ১) ফাইজার টিকা (Pfizer vaccine)
- ২) জনসন এন্ড জনসন টিকা (the Johnson & Johnson vaccine) এবং
- ৩) অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২টি, একটি কোরিয়ার এসকেবিও এবং অন্যটি ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট কর্তৃক তৈরী (two AstraZeneca vaccines produced by SKBio in the Republic of Korea and Serum of Institute of India)।
গবেষণায় ফাইজারের টিকা কোভিধ-১৯ করোণা ভাইরাস হতে ৯৫% সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু ইহা (-)৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয় বিধায় আমাদের দেশের মত অঞ্চলে ইহার সংরক্ষণ, পরিবহন, বিতরণ ও প্রয়োগ খুবই অসুবিধা জনক।
জনসন এন্ড জনসন টিকাটি বিশ্বের সকল অঞ্চলে কোভিধ -১৯ করোণা ভাইরাস হতে ৮৫% সুরক্ষা দেয়ার বিষয়ে প্রমাণিত। এ টিকাটির সুবিধা হলো এটি ২ হতে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয় এবং মাত্র এক ডোজেই কার্যকর।
এ টিকাটি সবেমাত্র বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে এবং এখন পর্যন্ত বিশ্বে মাত্র ২ টি দেশে (দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রে)প্রয়োগ শুরু করা করা হয়েছিল এবং কানাডা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভূক্ত দেশসমূহসহ আরো কয়েকটি দেমে প্রয়োগের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল, কিন্তু ইহা প্রয়োগে মানবদেহে রক্ত জমাট বাঁধার মত সাইড ইফেক্ট দেখা দেওয়ায় প্রয়োগ শুরু হওয়া দেশ ২ টিসহ অন্যান্য দেশসমূহেও এর প্রয়োগ স্থগিত রাখা হয়েছে। এ টিকার আরেকটি প্রধান অসুবিধা হলো এলার্জিক রোগীদের ইহা প্রয়োগ করা যাবে না।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকাও ২ হতে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয় এবং এ টিকাটি ফাইজারের টিকার পর পরই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন প্রাপ্ত হয়। এ টিকাটির আরেকটি সুবিধা হলো এ টিকাটি Cold adenovirus হতে তৈরী যা মানব দেহের জন্য নিরাপদ।
আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট হতে কুটনৈতিক সুবিধার কারনে আমাদের পর্যায় হতে অনেক উন্নত দেশের অনেক পূর্বেই আমরা এ টিকাটি প্রাপ্ত হই এবং কোবিধ -১৯ করোণা ভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বের অনেক ধনী ও ক্ষমতাশালী দেশের অনেক পূর্বেই আমাদের দেশে কোভিধ টিকা প্রয়োগ শুরু করা সম্ভব হয়।
অষ্টেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বহু ইউরোপিয়ান দেশের অনেক পূর্বেই আমাদের দেশ টিকা প্রাপ্ত হই এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকাটি উৎপাদিত দেশের বাহিরে প্রথম দেশ হিসাবে আমাদেরকেই এ টিকাটি সরবরাহ করা হয়।
এখনো যেখানে অনেক দেশ টিকাই প্রাপ্ত হয়নি, সেখানে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ১০৩ লক্ষ টিকা প্রাপ্ত হয়েছে (বন্ধু প্রতিম দেশ ভারতের ৩৩ লক্ষ উপহারসহ) এবং আগামী মে মাসের মধ্যে আরও ১০০.০০ লক্ষ টিকা পাওয়ার আশা করছে। আমাদের মানণীয় প্রধান মন্ত্রীর সময়পোযোগী পদক্ষেপ, কুটনৈতিক দক্ষতা ও গতিশীল নের্তৃত্বের জন্যই ইহা সম্ভব হয়েছে।
এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৭১টি দেশ/অঞ্চলে কোভিধ করোণা ভাইরাসের টিকা প্রদান শুরু হয়, কোন কোন দেশ/অিঞ্চল একাধিক নমুনার টিকা ব্যবহার করছে। কোন দেশ/অঞ্চলে কোন ধরনের টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে, তার একটি তালিকা নিন্মে দেওয়া হলো:-
টিকার নাম | দেশ/অঞ্চল | WHO এর অনুমোদন | |
Oxford/AstraZeneca | Afghanistan, Angola, Anguilla, Antigua and Barbuda, Argentina, Australia, Austria, Bahamas, Bahrain, Bangladesh, Barbados, Belgium, Belize, Bhutan, Bolivia, Botswana, Brunei, Brazil, Bulgaria, Cambodia, Canada, Cape Verde, Cote d’Ivoire, Croatia, Czechia, Denmark, Dominica, Dominican Republic, Egypt, El Salvador, England, Estonia, Eswatini, Falkland Islands, Finland, France, Gambia, Georgia, Germany, Ghana, Greece, Grenada, Guyana, Guatemala, Honduras, Hungary, Iceland, India, Indonesia, Ireland, Isle of Man, Iraq, Italy, Jamaica, Jersey, Kenya, Kosovo, Lebanon, Latvia, Lithuania, Luxembourg, Malawi, Maldives, Mali, Malta, Mauritius, Mexico, Moldova, Mongolia, Montserrat, Morocco, Myanmar, Nepal, Netherlands, Nigeria, Northern Cyprus, Northern Ireland, Norway, Oman, Pakistan, Palestine, Papua New Guinea, Philippines, Poland, Portugal, Romania, Rwanda, Saint Helena, Saint Kitts and Nevis, Saint Lucia, Saint Vincent and the Grenadines, Sao Tome and Principe, Saudi Arabia, Scotland, Serbia, Seychelles, Sierra Leone, Slovenia, Solomon Islands, South Korea, Spain, Sri Lanka, Sudan, Suriname, Sweden, Taiwan, Thailand, Togo, Trinidad and Tobago, Uganda, Ukraine, United Arab Emirates, United Kingdom, Uzbekistan, Vietnam, Wales = 11৭ Countries | অনুমোদিত | |
Pfizer/BioNTech |
|
অনুমোদিত | |
Moderna/USA |
|
পর্যবেক্ষণ পর্যায়ে | |
Sinopharm/Beijing |
|
পর্যবেক্ষণ পর্যায়ে | |
Sputnik V/Rasia |
|
পর্যবেক্ষণ পর্যায়ে | |
Sinovac/China |
|
পর্যবেক্ষণ পর্যায়ে | |
Sinopharm/Wuhan | China, United Arab Emirates = 2 Countries. | পর্যবেক্ষণ পর্যায়ে | |
Covaxin/ India | India = 1 Country. | অনুমোদিত | |
EpiVacCorona/ Russia | Russia = 1 Country | পর্যবেক্ষণ পর্যায়ে | |
Johnson &Johnson/ USA | South Africa, United States = 2 Countries. | অনুমোদিত |
Source: Our World In Data
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনটি কি নতুন ভাইরাসটির নতুন নতুন রূপগুলোর(new variants)হতে সুরক্ষা দিতে পারে?
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় ২,০০০ তরুণ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করেছিল, বিভিন্ন কারণে কোভিধ ভাইরাসে সৃষ্ট হালকা ও মধ্যপন্থী রোগের বিরুদ্ধে ইহা সীমিত সুরক্ষা দিতে পেরেছে ।
যুক্তরাজ্যে হাসপাতালে কোভিধ ভাইরাসে আক্রান্ত গুরুতর রোগিদের চিকিৎসায় এটির কার্যকর না হওয়ার কোনও প্রমাণ নেই। যুক্তরাজ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা ভাইরাসটি ১৪৭টি নতুন রুপ (147 new variants) সনাক্ত করা হয়েছে এবং এর বিস্তারকে সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ব্রিটিশ সরকারের উপ-প্রধান মেডিকেল অফিসার জোনাথন ভ্যান ট্যাম বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার রূপটি যুক্তরাজ্যে প্রভাবশালী হওয়ার লক্ষণ নেই। প্রফেসর ভ্যান ট্যাম আরও জানান, ইউকে বা কেন্টের রূপ(UK or Kent variant) এর “তাৎক্ষণিক হুমকি” মোকাবেলায় ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা বিষেয়ে “প্রচুর প্রমাণ” রয়েছে।
ভ্যাকসিনটির একক ডোজ তিন মাসের জন্য ৭৬% কার্যকর সুরক্ষা সরবরাহ করেছে। সেরা সুরক্ষা দেওয়ার জন্য দুটি ডোজ হিসাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিনটির নতুন সংস্করণের কাজ করছেন, যাতে ভাইরাসটি অনিবার্যভাবে পরিবর্তিত হতে না পারে।
কোভিড টিকা কিভাবে কাজ করে?
কোন ভাইরাস প্রতিষোধক টিকা হলো অন্য প্রাণী হতে সংগৃহীত একই প্রকার ভাইরাস যা আরেকটি প্রাণীর জীবন্ত কোষের ভিতর ইনজেক্ট করানো হয় এবং বংশ বৃদ্ধি করানো হয় – এর মাধ্যমে মানব দেহে উহার বংশবৃদ্ধি ক্ষমতাকে অকার্যকর করা হয়।
তারপর ভাইরাসটিকে একটি অধিক পুষ্টির তরলে রাখা হয়। ভাইরাসটি উহার জীন (genes) কে বংশবিস্তারের জন্য পূণ:গঠন/পরিবর্তণ করে এবং বংশবিস্তার করতে থাকে। যেহেতু ভাইরাসটি অন্য প্রাণীর দেহে উহার জিন পরিবর্তণ করে বংশবিস্তার করে, সেহেতু উহা মানব দেহে আর বংশ বিস্তার করতে পারে না।
এমন ভাইরাস সংগ্রহের পর বিশেষ প্রদ্ধতিতে পরিশোধনের পর টিকা হিসাবে মানবদেহে ইনজেক্ট করানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়।
তাই টিকা মানবদেহে বংশবিস্তার করতে পারে না, কিন্তু অনুরূপ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মানব রক্তের শ্বেত কনিকার এন্টিবডি তৈয়ার করতে সাহায্য করে। তাই টিকা কোন অসুখের চিকিৎসার জন্য নয় – ইহা কোন সম্ভাব্য রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি যোগাতে মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য (to fight a potential disease)কাজ করে।
ভেষজ টিকাগুলো মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কার্যকর ও বৃদ্ধি করে যাতে শরীরের ভিতরে কোন জীবানু যেমন ব্যাকটোরিয়া, ভাইরাস প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সক্ষম হয়।
মানুষের শরীরের ব্যকটরিয়া, ভাইরাস জীবানু, হেভী মেটাল ইত্যাদি প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে রক্তের শ্বেত কণিকা (white blood cells) যুদ্ধ করে। বিশেষত এদেরকে লিম্পসাইট (lymphocytes) বলা হয় যারা রোগ জীবানুর বিরূদ্ধে এন্টিবোডি (antibodies) তৈয়ার করে।
এরা মানব দেহের সুরক্ষা সৈনিক। মানবদেহে যখনই কোন রোগ জীবানু বা বিষাক্ত কোন কিছু প্রবেশ করে, তখনি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তাদেরকে চিহ্নিত করে এ সকল কোষকে সংকেত পাঠায় এবং সাথে সাথে দলে দলে এরা রোগজীবানুকে আক্রমণ করে এবং যুদ্ধ শুরু করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রক্রিয়ায় (Immune system) দেহের অভ্যন্তরীন ভাল ও ক্ষতিকারক কোষগুলোকে চিহ্নিত করে ক্ষতিকারক কোষগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্য ভাল কোষগুলোকে শক্তি যোগায়।
রোগজীবানুর এন্টিজেন (antigens) নামক বাহিরে সুঁচালো এক প্রকার স্পাইক আকারের বিশেষ প্রোটিন রয়েছে যেগুলোকে মানব কোষের ভিতরে প্রবেশ করে কোষের ভিতরের জেনেটিক বস্তুগুলোকে দখল করে নেয় (hijacks the cell’s genetic material) এবং সেগুলোকে অধিক সংখ্যক ভাইরাস কোষে রূপান্তরিত করতে শক্তি প্রয়োগ করে।
যখন ক্ষতিকারক প্যাথজেনগুলো(ভাইরাস, ব্যটেরিয়া) মানব কোষকে আক্রামণ করে এবং বংশ বৃদ্ধি শুরু করে, তখন ঐ গুলোর গঠন দেখে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সেগুলোকে চিহ্নিত করে ফেলে।
মানবদেহে টিকা হিসাবে প্রবেশ করানো নকল ভাইরাসসমূহ মানব রক্তের শ্বেত কণিকাকে আসল ভাইরাসের এন্টিবডি তৈয়ার করতে সাহায্য করে এবং যখন মানব কোষকে আসল ভাইরাসের আক্রমণ হতে সুরক্ষা দেয়।
এন্টিবডিসমূহ রক্তের শ্বেত কণিকাকে আসল ভাইরাসের বিষয়ে সংকেত দেয় এবং তখনই শ্বেত কনিকা আসল ভাইরাসকে আক্রমণ করে আসল ভাইরাসের এন্টিজেন ধ্বংস করে উহাকে মেরে ফেলে এবং রক্ত হতে পরিশোধন
সমস্যা হল এ যুদ্ধের জন্য একপ্রকার বিশেষ আকারের এন্টিবডির প্রয়োজন। মানব দেহে বিলিয়ন বিলিয়ন শ্বেত কণিকা রয়েছে, একেক শ্বেত কণিকা একেক আকারের এন্টিবডি তৈয়ার করে। কিন্তু মাত্র সামাণ্য কয়েকটি আকারের এন্টিবডিসমূহ প্যাথজেনের( আসল ভাইরাস/ ব্যকটেরিয়া) বিরুদ্ধে কার্যকর।
প্যাথজেনসমূহকে ধ্বংস করার জন্য মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট পরিমাণ উপযুক্ত আকারের প্রয়োজনীয় এন্টিবডি তৈয়ার করতে বেশ কয়েক দিনে সময়ের প্রয়োজন হয়। এই সময়ের মধ্যে একটি দ্রুত আক্রমণকারী প্যাথজেন তার অনুরূপ বিলিয়ন বিলিয়ন প্যাথজেন উৎপাদন করে ফেলে এবং তখন দেহের অবস্থা সংকটপূর্ণ হয়ে পড়ে।
যে সকল লোকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পর্যাপ্ত নয়, তার দেহের কোষসমূহের নিউক্লিয়াস ভেঙ্গে ভাইরাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকে থাকে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, টিকার মাধ্যমে মানবদেহে পুশ করা নিষিক্ত ভাইরাস মূলত: রোগ জীবানুর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে না, বরং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে রোগজীবানুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শক্তি যোগায়। সুতরাং যে সকল মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল তাদের দেহে টিকা প্রয়োগ করা হলেও তাদের ঐ রোগজীবানু হতে সুরক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
মূলত; টিকাকে রোগজীবানুর বিরুদ্ধে মানব দেহের সুরক্ষা সৈনিক তথা রক্তের লিম্পসাইটকে শক্তি তথা অস্র জোগান দেওয়ার সাথে তুলনা করা যায়। কোন লোকের রক্তে যদি পর্যাপ্ত সৈন্য না থাকে বা থাকলেও দূর্বল থাকে অর্থাৎ দূর্বল রোগ প্রতিরোধ কাঠামো থাকে, তবে পর্যাপ্ত শক্তিশালী অস্র যোগান দেওয়া হলেও যুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব হয় না।
তাই করোণা ভাইরাসের ন্যয় রোগ জীবানুর বিরুদ্ধে বিজয়ের জন্য প্রত্যেক মানুষের তার দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
কিভাবে টিকা (vaccine) প্রস্তুত করা হয় এবং ইহার প্রয়োগ ও প্রয়োগের পর কিভাবে মানবদেহে রোগ প্রতিরোধে কাজ করে বিস্তারিত জানতে নীচের টপিকটি পড়ুন-
ভ্যাকসিন আবিস্কার প্রণালি এবং COVID-19 Coronavirus ভ্যাকসিনের জন্য ১৮ মাসের প্রয়োজন কেন?
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন কিভাবে কাজ করে?
এটি শিম্পাঞ্জি হতে সংগৃহীত একটি সাধারণ ঠান্ডা ভাইরাস (Adenovirus) এর দুর্বল সংস্করণ হতে তৈরি। Adenovirus ফুসফুসের প্রদাহ, পেটের পীঁড়া, অন্ত্র্র্র এবং চোখের প্রদাহ সুষ্টি করে।
এটিকে করোনভাইরাসের মতো দেখতে আরও সংশোধন করা হয়েছে – কিন্তু এটির উপর এমন প্রদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে যে যাতে ইহা মানব দেহে বংশ বিস্তার করে দেহে কোনরূপ অসুস্থতা তৈরী করতে না পারে।
(১) | ভ্যাকসিন তৈরীতে বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের পৃষ্ঠের স্পাইক প্রোটিনের জন্য জিন নিয়েছেন এবং ভ্যাকসিন তৈরির জন্য সেগুলোকে মানবদেহের জন্য অক্ষতিকর অবস্থা পরিনত করেছেন। | অত:পর উহা রোগীর দেহে পুশ করা হয় | |
(২) | ভ্যকসিন মানব রক্তের শ্বেত কণিকাসমূহের (white blood cells) ভিতর প্রবেশ করে স্পাইক প্রোটিন তৈয়ার করা শুরু করে। | মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে ভাইরাসটির এরন্টিবডি তৈরী করতে শুরু করে এবং ভাইরাসসমূহের স্পাইকসমূহ ভেঙ্গে দেয়। স্পাইক না থাকায় ইহারা মানব কোষে ঢুকতে পারে না এবং মানব দেহের অভ্যন্তরেই ধ্বংস হয়ে যায়। | |
(৩) | তার পরও ঐ মানবদেহে যদি করোণা ভাইরাস প্রবেশ করে এন্টিবডি এবং টি-সেলস সেগুলোর সাথে যুদ্ধ করে তাদের স্পাইক ধ্বংস করে দিয়ে ভাইরাসকে ধ্বংস করে দেয়। | ||
Source: Nature | BBC |
অন্য কিছু দেশ কেন অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ব্যবহার সীমিত করছে?
দক্ষিণ আফ্রিকা অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতার বিষয়ে আরও অধিক গবেষণা এবং ভাইরাসটির দ্রুত রুপ পরিবর্তনের উপর পর্যবেক্ষণের জন্য কিছু দিন ইহার প্রয়োগ বন্ধ রেখেছে।
জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং ফ্রান্স এই ভ্যাকসিনটি ব্যবহার করছে তবে কেবল ১৮—৬৪ বছর বয়সীদেরই এটি দিচ্ছে, কারণ ৬৫ বছরে বেশি বয়সীদের এটি কতটা সুরক্ষিত করে সে বিষয়ে সীমিত তথ্য রয়েছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা জোনিয়েছে যে এর পরীক্ষার গবেষণা হতে প্রমাণ দেয় যে এটি ৬৫ এরও বেশি বয়সের বয়সীদের মধ্যে কাজ করে। প্রারম্ভিক গবেষণাগুলোতে বয়স্ক ব্যক্তিদের পাশাপাশি কম বয়সীদের মধ্যেও ভ্যাকসিনের একই রকম শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধমূলক প্রতিক্রিয়া দেখায়।
ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি জানুয়ারি, ২০২১ এ বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদেরসহ সকল বয়সীদের ব্যবহারের জন্য এই ভ্যাকসিনটি অনুমোদন করে।
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন কি ফাইজার ভ্যাকসিনের মত ভাল?
বড় আকারের গবেষণায় দেখা গেছে যে ফাইজার ভ্যাকসিন ৯৫% কার্যকর ছিল, যখন অক্সফোর্ডের ছিল ৬২%। তবে সরাসরি ফলাফলের তুলনা করা কঠিন, কারণ যেভাবে গবেষণা পরিচালিত হয়েছিল তার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের একক ডোজ তিন মাসের জন্য ৭৬% সুরক্ষা সরবরাহ করেছে এবং এটি দ্বিতীয় ডোজের পরে ৮২% এ পৌঁছেছে।
কত সময় পর্যন্ত ধরে কোভিধের বিরুদ্ধে টিকাগুলো(vaccines)সুরক্ষা দিবে?
করোনভাইরাস প্রতিরোধী কোন ভ্যাকসিনই গ্রহনের পর ঠিক কত সময় সুরক্ষা দিতে পারবে- তা এখনো সুনিদিষ্টভাবে জানা যায়নি – এর গবেষণা চলমান রয়েছে।
আরো বিশেষ সংবাদ পড়ুন:
ভ্যাকসিন আবিস্কার প্রণালি এবং COVID-19 Coronavirus ভ্যাকসিনের জন্য ১৮ মাসের প্রয়োজন কেন?
কিভাবে করোনাভাইরাস (COVID-19) দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং শ্বাসযন্ত্রকে আক্রান্ত করে?
করোনাভাইরাস রোগ (কোভিড-১৯) আক্রান্ত দেশগুলিকে বিশ্ব ব্যাংক পরিবারের সহায়তা প্রক্রিয়া
COVID-19 এর কারণে বিশ্বব্যাপি মারাত্বক দুর্ভিক্ষ হতে পারে
কোভিড -১৯ করোনাভাইরাস দরিদ্রতম দেশগুলির জন্য অত্যন্ত বিপদ ডেকে আনবে
বাংলাদেশেই তৈরী হচ্ছে COVID 19 করোনা ভাইরাসের ঔষধ
করোনা ভাইরাসের লক্ষণ: কিভাবে বুঝব এবং কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হব?
গরম আবহাওয়া কি আসলেই Covid-19 corona Virus কে নির্মূল করে?
জলবায়ুর পরিবর্তন: কভিড-১৯ করোনাভাইরাস দিয়ে মানব জাতির লড়াই মাত্র শুরু- আরও অনেকগুলো মহামারী আসছে
বিশ্বের বেশীর ভাগ মানুষেরই হাত ধোঁয়ার সুযোগ কম – বিশ্ব ব্যাংক
ইতিহাসের মহামারীগুলো- তখনও মহামারীর বিস্তার রোধে মাস্ক, জনবিছিন্নতার নিয়মের প্রচলন ছিল
কোভিড-১৯ করোণাভাইরাস স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ – সার্বক্ষণিক মাস্ক পরা উচিত কি না??
চীনে বুবোনিক প্লেগের আর্বিভাব – যা ১৪ শত শতাব্দিতে বিশ্বে ৭.৫ হতে ২০ কোটি লোককে হত্যা করেছিল
জলবায়ু পরিবর্তন কিভাবে নতুন মহামারীর আর্বিভাব ঘটাতে পারে?
তবে এমনও হতে পারে যে করোণা ভাইরাস প্রতিরোধে মানুষকে বার্ষিক ভিত্তিতে টিকা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
Sources:
- Our World In Data
- BBC News
- USA TODAY- (WHY A CORONAVIRUS VACCINE IS MORE THAN A YEAR AWAY, DESPITE MEDICAL RESEARCHERS’ PROGRESS BY GEORGE PATRAS, RAMON PADILLA, AND VERONICA BRAVO)
- The Economic Time of India.
- The Daily Star, Bangladesh.
- Website: Johnson &Johnson, Pfizer/BioNTech, etc.