26 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ১০:০০ | ১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
অন্যান্য

প্লাস্টিক বর্জ্য বদলে যাচ্ছে সম্পদে, ৫ লক্ষাধিক মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা

ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে সুতা, কম্বল, সিনথেটিক কার্পেটসহ নানা মূল্যবান বস্তু। আর এই প্লাস্টিক বর্জ্য রপ্তানি থেকে বছরে দেশে প্রবেশ করে প্রায় দুই কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারণে বন্ধ্যা হচ্ছে মাটি, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, সেই বর্জ্য থেকেই জীবিকার ব্যবস্থা হয়েছে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের। কুড়িয়ে নেওয়া এসব ফেলনা প্লাস্টিক বোতল কুচি করে পেটফ্লেক্স হিসেবে রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। এ জন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে বোতল কুচি করার প্রায় আড়াই হাজার ছোট-বড় ফ্যাক্টরি। ফ্যাক্টরিগুলোয় কাজ করছে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। বোতল কুড়িয়ে এসব ফ্যাক্টরিতে কাঁচামালের জোগান দিচ্ছে অগণিত পরিবেশ বন্ধু (টোকাই)। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হিসাবে, শুধু রাজধানীতেই প্রায় দেড় লাখ মানুষ প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে। ভাঙারির দোকান, পাইকারি ক্রেতা, ক্রাশ ফ্যাক্টরি হয়ে ৮০ জন রপ্তানিকারকের মাধ্যমে পেটফ্লেক্স হিসেবে বিদেশে যাচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্য। কিছু ব্যবহার হচ্ছে দেশের টেক্সটাইল ও প্লাস্টিক শিল্পে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সব মিলিয়ে এ শিল্পের মাধ্যমে অন্তত পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা হয়েছে।

এদিকে অপচনশীল ফেলনা প্লাস্টিক বোতলের বড় একটা অংশ এখনো সংগ্রহের বাইরে থেকে যাচ্ছে। জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪ বিলিয়ন পেট বোতল ও জার তৈরি হয়, যার সাড়ে তিন বিলিয়ন একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয়। নতুন বোতল তৈরির জন্য আমদানি হয় বছরে ৯০ হাজার টনের বেশি পেট রেজিন। প্রায় ৩০ হাজার টন প্লাস্টিক দেশে পুনঃব্যবহার করে তৈরি হয় বিভিন্ন সামগ্রী। সেখান হতে ৪৫ থেকে ৫৫ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য পেটফ্লেক্স আকারে রপ্তানি হয়। কিছু স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত হয়। বাকিটা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্জ্য সংগ্রহকারীদের ভালো দাম দিতে পারলে অধিকাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য সম্পদে পরিণত করা যেত বলে মনে করছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। পেটফ্লেক্স উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন- বিপিএফএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এ কবির নোটন বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্যরে পুনঃব্যবহার যতটা না ব্যবসা, তার চেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে পরিবেশ রক্ষায়। এ কারণে বিভিন্ন দেশ আমদানি কমিয়ে নিজেদের প্লাস্টিক বর্জ্য পুনঃব্যবহারে জোর দিয়েছে। তাই প্রতিযোগিতা বেড়েছে। তবে চাহিদাও বাড়ছে। একসময় চীন আমাদের ৯০ ভাগ প্লাস্টিক বর্জ্য কিনে নিত। সারা বিশ্বের বর্জ্য ঢুকত চীনে। তবে মেডিকেল বর্জ্য থেকে সার্সসহ বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ ও নিজেদের প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেলের জন্য ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তারা প্লাস্টিক বর্জ্য আমদানি বন্ধ করে দেয়। গত দুই বছর ভারতে বড় একটা অংশ রপ্তানি করি। দেশটিতে মাসে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন পেটফ্লেক্সের চাহিদা আছে। আমরা রপ্তানি করি সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন। দেশের ফ্যাক্টরিগুলো মাসে দুই-আড়াই হাজার টন পেটফ্লেক্স ব্যবহার করছে। এখন আমরা ইউরোপের বাজার ধরার চেষ্টা করছি। বর্তমানে তুরস্ক, পোল্যান্ড, স্পেন, রাশিয়া, আমেরিকা, ভিয়েতনামে আমাদের পেটফ্লেক্স যাচ্ছে। তবে ইউরোপে হট ওয়াস করা ভালো মানের পণ্য দিতে হয়। এমন পণ্য তৈরি করার মতো ফ্যাক্টরি আমাদের হাতে গোনা। ইউরোপের বাজার ধরতে উন্নত ফ্যাক্টরি বাড়াতে হবে। বড় বিনিয়োগ দরকার। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আমাদের ১০ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছিলেন। সরকার এই খাতে প্রণোদনা আরেকটু বাড়িয়ে দিলে অনেকেই এগিয়ে আসতেন। এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের প্লাস্টিক বর্জ্য বিদেশে রপ্তানি হয়। ২০১১-১২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় দাঁড়ায় প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারে। বিপিএফএমইএ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে বাংলাদেশে ব্যবসাটি যাত্রা করে। ২০০৫-২০০৬ সালে চীন

বাংলাদেশ থেকে পেটফ্লেক্স আমদানি শুরু করলে ব্যবসাটি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখায় সরকারও ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেয়। তখন ৩০ জন ব্যবসায়ী পেটফ্লেক্স রপ্তানি করলেও বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ জনে। তবে চীন প্লাস্টিক বর্জ্য আমদানি বন্ধ করে দিলে এই খাতটি ধাক্কা খায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ কোটি ২৯ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ৪৫ হাজার ৪৭৪ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য রপ্তানি হলেও পরের অর্থবছরে রপ্তানি হয় ৩২ হাজার ২৩৫ মেট্রিক টন। তবে ইউরোপে বাজার সৃষ্টি হওয়ায় শিল্পটি ফের আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীন বন্ধ করলেও বিশ্বে পেটফ্লেক্সের চাহিদা বাড়ছে। এটা দিয়ে নতুন প্লাস্টিক বোতল, টেক্সটাইল সুতা, কম্বল, মখমলসহ নানা দামি বস্তু তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশেরও কিছু ফ্যাক্টরি প্লাস্টিক পুনঃব্যবহার করে তন্তু, হ্যাঙ্গার, বদনা, বালতি তৈরি করছে। ইউরোপ-আমেরিকার বাজার ধরতে পারলে বর্জ্য রপ্তানি করেই ১০ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব। সূত্র: বিডি-প্রতিদিন

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত