প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক রুক কাক
সারা পৃথিবীতে কাকের অনেক প্রজাতি রয়েছে। বাংলায় মাত্র দুই প্রজাতির কাক দেখেই আমাদের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। শহরে পাতিকাক ও গ্রামে দাঁড়কাক।
এখন অনেক শহরেও দাঁড়কাক দেখা যায়। ইউরোপে তিন প্রজাতির কাক শহর এলাকায় সহজেই দেখা যায়। এগুলো হলো জ্যাকডো, হুডেড ক্রো ও ক্যারিয়ন ক্রো।
কাকের অন্য দুটি প্রজাতি রুক (Rook) এবং র্যাভেন খুবই লাজুক। তারা বনের বাসিন্দা, গ্রামেও দেখা যায়। এখানে শহরের কোনো স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় না, খোলা ডাস্টবিন নেই।
যে কারণে ইউরোপে শহরের কাক ঢাকা শহরের কাকের মতো নয়। এগুলো বাড়িঘরে হানা দেয় না, মানুষকে বিরক্ত করে না, বরং মানুষ দেখলে দূরে উড়ে চলে যায়। ফ্রান্সের একটি থিম পার্কে আবর্জনা তোলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে রুক পাখিকে।
রুক সব সময় বড় ঝাঁকে চলে। একটি দলে তিন’শ রুকও থাকতে পারে। মূলত বড় গাছ ও কৃষিভূমিতে বিচরণ করে রুক। নানা ধরনের উদ্ভিজ্জ উপাদান ও মাটিতে বসবাসকারী অমেরুদণ্ডী প্রাণী খায় এ পাখি।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এগুলো সকালে, কখনো ভরদুপুরে দল বেঁধে খাবার খেতে যায়। বিশেষ করে ফসল কাটার পরপরই। জমি চাষ করার সময়ও ফসলের খেতে বিচরণ করে।
কারণ, এ সময় মাটির নিচে থাকা অমেরুদণ্ডী প্রাণী লাঙলের ফলার মাধ্যমে ওপরে চলে আসে। রুকের পাকস্থলীর খাবার পরীক্ষা করে দেখা গেছে, খাদ্যের প্রায় ৬০ শতাংশ উদ্ভিজ্জ উপাদান।
উদ্ভিজ্জ খাবারের মধ্যে রয়েছে গম, ভুট্টা, আলু, শিকড়, ফল, বেরি ও বীজ। খাদে্যর প্রাণীজ অংশ প্রধানত কেঁচো ও কীটপতঙ্গের লার্ভা। এ ছাড়া এ পাখি বিটল, মাকড়সা, মিলিপিডস, স্লাগ, শামুক, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, ছোট পাখি, তাদের ডিম ও বাচ্চা খায়।
রুকের বিচরণ এলাকা স্ক্যান্ডিনেভিয়া ও পশ্চিম ইউরোপ থেকে পূর্ব সাইবেরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে সবচেয়ে উত্তরে শীতের তীব্র পরিস্থিতি এড়াতে মাঝেমধ্যে দক্ষিণ দিকে সরে যায়।
রুক ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ এবং উত্তর ও মধ্য ইউরোপের বেশির ভাগ অংশের আবাসিক পাখি, তবে আইসল্যান্ড ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার কিছু অংশে ভ্রমণ করে।
রুক বড় পাখি। দেহে কালো পালক রয়েছে, যা প্রায়ই উজ্জ্বল সূর্যালোকে নীল বা নীল-বেগুনি রঙের আভা দেখায়। মাথা, ঘাড় ও কাঁধের পালক বিশেষভাবে ঘন ও সিল্কি।
প্রাপ্তবয়স্ক রুকের ক্ষেত্রে চোখের সামনে এবং বিলের গোড়ার চারপাশে সাদা চামড়ার একটি খালি এলাকা স্বতন্ত্র। এসব কাক পরিবারের অন্যান্য সদস্য থেকে রুককে আলাদা করতে সক্ষম।
রুক অত্যন্ত দলবদ্ধ পাখি। পুরুষ ও স্ত্রী সারা জীবনের জন্য জোড়া বাঁধে এবং জোড়া ঝাঁকের মধ্যে একসঙ্গে থাকে। সন্ধ্যায় তারা একসঙ্গে রুকারিতে (এদের বাসাগুলোকে রুকারি বলা হয়) ফিরে।
পোল্যান্ডে এমন দৃশ্য দেখেছি। বাসা বাঁধার জন্য বড় গাছ নির্বাচন করে আবাদি জমিসহ উন্মুক্ত কৃষি এলাকায়। একটি গাছে শতাধিক বাসাও থাকতে পারে।