পরিবেশ রক্ষায় ওয়ান টাইম প্লাস্টিকমুক্ত করা হবে সচিবালয়
একবার ব্যবহারযোগ্য (ওয়ান টাইম) প্লাস্টিকমুক্ত হচ্ছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়। পরিবেশদূষণের বিষয়ে সচেতনতা তৈরির অংশ হিসেবে সচিবালয়কে এ ধরনের প্লাস্টিকমুক্ত ঘোষণা করতে যাচ্ছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। পর্যায়ক্রমে সব সরকারি দপ্তরও এর আওতায় আসবে।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে সরকারি দপ্তরগুলোয় প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাচের বোতলে পানি রাখার জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
পাশাপাশি সরকারি আমন্ত্রণপত্র, নিমন্ত্রণপত্র, ভিজিটিং কার্ড এবং ফাইল ফোল্ডারে প্লাস্টিকের ব্যবহার ও লেমিনেটিং করা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। উল্লেখিত বিষয় নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এবার সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছেন পরিবেশসচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।
এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, ‘আইন করে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও এর কোনো বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না।
দেশে অন্তত ১ হাজার ২০০ কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি হচ্ছে। শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন দুই কোটির বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি দপ্তরগুলো একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকমুক্ত হলেও অনেকাংশে পরিবেশদূষণ কমবে বলে আমার বিশ্বাস।’
সচিবদের দেওয়া চিঠির নির্দেশনায় বলা হয়, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে মন্ত্রণালয়/দপ্তর/সংস্থায় নিমন্ত্রণ/ ভিজিটিং কার্ড, ফাইল ফোল্ডার ইত্যাদির লেমিনেটিং বন্ধ করার পাশাপাশি সভাকক্ষে প্লাস্টিক বোতলের পরিবর্তে কাচের বোতল/পরিবেশবান্ধব বোতল ব্যবহার করতে হবে।
এ ছাড়া প্লাস্টিকের ব্যাগ, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের ছুরি, চামচ, প্লেট, গ্লাস, স্টারার (যেমন চা, কফি নাড়ার জন্য ছোট স্টিক/কাঠি), বেলুন, স্যাশে (চা বা কফির প্লাস্টিকের ছোট প্যাকেট বা মিনি প্যাক), খাবারের মোড়ক এবং স্টাইরোফোম ইত্যাদি পণ্যের ব্যবহার বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে।
সরকার ২০০২ সালে পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করলেও বিভিন্ন পণ্যের অতিরিক্ত প্লাস্টিকজাত মোড়ক এবং দৈনন্দিন জীবনে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক পণ্যের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার সব ধরনের প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ১০ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেল নিশ্চিত করা, ২০২৬ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হ্রাস করার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও দপ্তর/সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। না হলে এর বাস্তবায়ন কঠিন হবে বলে চিঠিতে বলা হয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রথম দফায় সচিবালয়কে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকমুক্ত ঘোষণা করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্য সরকারি অফিসগুলোতে একই ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা জারি করা হবে।