পরিবেশের ক্ষতি করা মানে নিজের ক্ষতি করা
একিউআই (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া মানের চেয়ে ১৫ গুণের বেশি পিএম পাওয়া গেছে বাংলাদেশের বাতাসে। পিএম হলো পার্টিকুলেট ম্যাটার, যেটি দ্বারা বোঝা যায় বাতাসে ভাসমান কঠিন বা তরল পদার্থের ক্ষুদ্র কণার মিশ্রণের পরিমাণ।
ধূলিকোণা, ধোঁয়া, ছাই, ধাতব কণা, জৈব পদার্থ, বনভূমি দাহ, আগ্নেয়গিরি, ঝড়, ধুলোঝড়, যানবাহন, কলকারখানা, বিদ্যুেকন্দ্র, ইটভাটা, নির্মাণকাজসহ বিভিন্ন কারণে বাতাসে পিএম বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। বাংলাদেশে বায়ুদূষণের পেছনে অসংখ্য কারণ রয়েছে। সাধারণত ঢাকায় চলাচল করা যানবাহনের ৮০ শতাংশ বাস এক যুগের বেশি পুরোনো।
এইসব যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত ধোঁয়া মারাত্মকভাবে বায়ুদূষণ করে থাকে। এছাড়াও যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া, রাস্তাঘাটের অতিরিক্ত যানজট বায়ুদূষণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী।
২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি পরিবেশমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৮ হাজার ইটভাটা রয়েছে, যার ৬০ শতাংশই অবৈধ। অবৈধ ইটভাটাগুলো ছাড়পত্র ছাড়াই বছরের পর বছর চলছে।
নিম্নমানের জ্বালানি ব্যবহারসহ আরো নানা মাধ্যমে এসব ইটভাটা মারাত্মকভাবে বায়ুদূষণ করছে। বাংলাদেশের শহরগুলোতে দৈনিক প্রায় ৩০ হাজার কঠিন বর্জ্য উত্পন্ন হয়, যেটি আগামী ২০২৫ সালে ৪৭ হাজারে পৌঁছাবে এবং এসব কঠিন বর্জ্যের ১০ শতাংশই প্লাস্টিকজাত।
বাংলাদেশে প্রায় ৫০ হাজার কলকারখানা রয়েছে। অধিকাংশ কলকারখানাই পুরোনো। অনুন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার, নিম্নমানের জ্বালানি ব্যবহারের কারণে নির্গত ধোঁয়া ও ধূলিকণা, বিভিন্ন রাসায়নিক গ্যাস, যেমন কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ইত্যাদি বায়ুদূষণের জন্য দায়ী।
অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজের কারণে নির্মাণ সাইট থেকে ধুলোবালি, ভবন ভাঙার ধুলো মারাত্মকভাবে দূষণ সৃষ্টি করে থাকে। কাঠ, কয়লা, কেরোসিনসহ ইত্যাদি অপরিমার্জিত জৈব জ্বালানির ব্যবহার, গ্রামাঞ্চলে জৈব জ্বালানির ওপরনির্ভরতার কারণে বায়ু দূষিত হচ্ছে।
এছাড়াও বন উজাড় করে কৃষিকাজ, অপরিচ্ছন্নতা, পরিবেশ আইনের শিথিল প্রয়োগ বায়ুদূষণের পেছনে দায়ী। বায়ুদূষণের কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে, যেমন :শ্বাসকষ্ট, হূদেরাগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, অ্যালার্জি ইত্যাদি। তাছাড়া বায়ুদূষণের কারণে মারাত্মকভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে থাকে।
পানিদূষণ পরিবেশদূষণের পেছনে একটি অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশে নানাভাবে পানিদূষণ হয়ে থাকে। তন্মধ্যে শিল্পকারখানা মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। কলকারখানার বর্জ্য পানিতে প্রত্যক্ষভাবে ফেলা পানিদূষণের পেছনে মারাত্মকভাবে দায়ী। কারখানার রাসায়নিক পদার্থ, ভারী ধাতু, তেল ও রঞ্জক পানিতে মিশে পানি দূষিত করে থাকে।
এছাড়াও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব, অপরিকল্পিত ও অপরিচ্ছন্ন শহরাঞ্চল, কঠিন বর্জ্য পানিতে ফেলা, যানবাহনের তেল ও রাসায়নিক পানিতে মিশে যাওয়া, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ফলে পানিদূষণ, আর্সেনিক দূষণ, জলাভূমি ভরাট, পানি ব্যবহারের অসচেতনতা, নদীতে চলমান যানের ময়লা-আবর্জনা পানিতে ফেলা, নদীর পাশে তৈরি হওয়া বাজারের সব বর্জ্য নদীতে ফেলাসহ ইত্যাদি কারণে মারাত্মকভাবে পানিদূষণ হয়ে থাকে।
এছাড়াও পানিদূষণের কারণে জীববৈচিত্র্য হ্রাস, জলজ প্রাণীর বিলুপ্তি, কৃষি উত্পাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা, পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়াসহ আরো নানা ক্ষতি হয়।
পরিবেশ আমাদের বেঁচে থাকার উৎস তৈরি করে। পরিবেশের ক্ষতি করার মানে নিজের ও নিজের আশপাশের সবার ক্ষতি করা। তাই পরিবেশ রক্ষার্থে ও দূষণ রোধে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দিতে পারে।