জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জানতে চারটি বই পড়ার পরামর্শ বিল গেটসের
আবহাওয়া সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অর্জনে ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জানতে ধনকুবের বিল গেটস চারটি বই পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বইগুলো এতটাই সহজ ভাষায় লেখা যে, এগুলো পড়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নন, এমন পাঠকও ধারণা নিতে পারবেন।
সম্প্রতি নিজের ব্লগ ‘গেটস নোটস’-এ বিল গেটস নিজের পড়া মোট ২৫টি বইয়ের তালিকা তুলে ধরেছেন। বইগুলো তিনি ২০০৮ সাল থেকে পড়া শুরু করেছিলেন। একটা সময় নিজ প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটে খুব বেশি সময় দিতেন গেটস। তবে সে অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে সরে এসে বই পড়া ও গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মানব সেবায় মনোনিবেশ করেন ৬৭ বছর বয়সী এ ধনকুবের।
ব্লগ পোস্টে গেটস জানান, ২৫টি বইয়ের মধ্যে চারটি বই তাকে জলবায়ু পরিবর্তন ও পৃথিবীতে এর প্রভাব সম্পর্কে ধারণা দিতে সহায়তা করেছে। এমনকি ২০২১ সালে তিনি নিজেও ‘হাউ টু অ্যাভয়েড আ ক্লাইমেট ডিজাস্টার’ নামের একটি বই লিখেছেন। ২০০৮ সাল থেকে বিল গেটস জলবায়ু সংকট নিয়ে বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। একইসাথে জলবায়ুগত প্রযুক্তি খাতে তিনি প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করেছেন।
ব্লগে উল্লেখ করা বইগুলো সম্পর্কে গেটস বলেন, ‘জীবনের বেশ কয়েকটা দশক আমি সফটওয়্যার নিয়েই কাজ করেছি। এখন আমার সময় এসেছে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞানসহ বিজ্ঞানের অন্যসব ক্ষেত্র নিয়ে জ্ঞান অর্জন করার। এতে করে আমি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ভালোভাবে কাজ করতে পারবো।’
ওয়েদার ফর ডামিস
‘ওয়েদার ফর ডামিস’ বইয়ের লেখক জন ডি. কক্স। ২০২১ সালে উইলি পাবলিকেশন থেকে ৪০০ পৃষ্ঠার এই বইটি প্রকাশ করা হয়। ‘সাধারণ পাঠকদের জন্য আবহাওয়া নিয়ে লেখা সম্ভবত সেরা বই’ হিসেবে একে উল্লেখ করেছেন বিল গেটস।
এ সম্পর্কে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা তার ব্লগে লিখেন, ‘যদি কেউ আবহাওয়া সম্পর্কে জানতে চান, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব বুঝতে চান, তবে আমি তাকে সর্বপ্রথম এই বইটি পড়ার পরামর্শ দেব।’
‘ওয়েদার ফর ডামিস’ বইয়ে আবহাওয়া সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা, মেঘের ভিন্নতা ও ঝড় সম্পর্কে আন্দাজ করার কৌশল ব্যাখ্যা ধরা হয়েছে।
এছাড়াও বইয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, আবহাওয়ার সাথে বৈশ্বিক বাস্তুতন্ত্রের যোগসূত্র নিয়েও ধারণা দেওয়া হয়েছে। এতে করে পাঠক বইটি পড়ার পর প্রতিদিনের আবহাওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব লক্ষ্য করতে পারবেন।
দ্য অ্যাটমোস্ফিয়ার
‘দ্য অ্যাটমোস্ফিয়ার’ বইটির লেখক ফ্রেডরিক কে. লুটজেন্স ও এডওয়ার্ড টারবাক। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৯ সালে। এখন পর্যন্ত বইটির ১৪টি সংস্করণ বের হয়েছে। এ বইয়ে বায়ু দূষণ, বায়ুচাপ ও বৃষ্টিপাত সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে।
ব্লগে বইটি সম্পর্কে গেটস বলেন, ‘বইটি কলেজ পর্যায়ে পাঠ্যবই হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে জলবায়ু সম্পর্কে জানতে উৎসাহী যে কেউ বইটি পড়ে ধারণা নিতে পারবেন।’
ফিজিকাল জিওলজি
‘ফিজিকাল জিওলজি’ বইটি লিখেছেন জেমস এস. মনরো, রিড উইক্যান্ডার ও রিচার্ড হ্যাজলেট। কলেজ পর্যায়ের পাঠ্যবই হিসেবে ব্যবহৃত বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে।
এতে আগ্নেয়গিরি, টেকটোনিক প্লেট, হিমবাহ ও উষ্ণ তাপমাত্রাসহ বহু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
এ বই সম্পর্কে ব্লগে বিল গেটস বলেন, ‘বইটি পড়ার ক্ষেত্রে মজার ব্যাপার হচ্ছে, আপনি এখানে আগ্নেয়গিরি, টেকটোনিক প্লেটের মতো প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ের টপিক পাবেন। কিন্তু বইয়ে এই টপিকগুলো আরও বিস্তারিতভাবে ও চমকপ্রদভাবে তুলে ধরা হয়েছে।’
প্ল্যানেট আর্থ
২০০৭ সালে প্রকাশিত ‘প্ল্যানেট আর্থ’ বইটি লিখেছেন জন রেন্টন। বইটিতে ভূতত্ত্ব নিয়ে খুবই চমৎকার বিবরণ তুলে ধরায় বিল গেটস লেখকের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
ধনকুবের তার ব্লগে বলেন, ‘প্ল্যানেট আর্থ বইটি আমাদের চারপাশের পার্থিব জিনিসগুলোকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে সহায়তা করে।’
বর্তমানে বিল গেটস বেশি করে বিজ্ঞানভিত্তিক বই পড়ছেন। এ বইগুলো থেকে অর্জিত মেধা গেটস ফাউন্ডেশনে তার কাজের ক্ষেত্রে সহায়ক বলে মনে করেন তিনি। তবে এর মাঝে ফিকশন ও নন-ফিকশনধর্মী বইও তিনি পড়ে থাকেন।