জলবায়ুর পরিবর্তন কিভাবে ভবিষ্যতে সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা মানুষের জন্য আরও কঠিন করে তুলতে পারে
COVID-19 Coronavirus মহামারীটি আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক মরণব্যধি ভাইরাস।
- তবে গবেষকরা আশঙ্কা করছেন যে, এই মহামারীটি কেবল মাত্র সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে নতুন লড়াইয়ের সূচনা করেছে – বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তন আগামী কয়েক দশকে রোগের বিস্তারকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।
- গবেষকরা আশঙ্কা করছেন যে, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে প্রাণীরা আরও বেশি বিস্তৃত অঞ্চলে রোগ ছড়িয়ে দিতে পারে, উত্তপ্ত জলবায়ুতে প্যাথোজেনগুলো (মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক সকল রোগজীবানু) দীর্ঘ সময় ধরে বেঁচে থাকতে ও বংশ বিস্তার করতে পরেবে এবং এরা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটি সম্ভবত দুর্বল করে দিতে পারে।
- যদিও COVID 19 করোনভাইরাস মহামারীটি জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ততা এখনও নির্নয় করা হয়নি, তবে ভবিষ্যতে এর একটা বড় সংপৃক্ততা পাওয়া যাবে।
COVID 19 বর্তমানে সারা পৃথিবীতে সর্বনাশ করে চলছে।
মহামারীটি মানব জীবনকে দ্রুত উলট পালট করে ফেলেছে। বিশ্বজুড়ে সকল দেশই এই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবে কাঁপছে। মাত্র কয়েক মাসেই এর ভয়ানক থাবায় পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ বেকার ও অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং মানব জীবনযাত্রাকে উল্লেখযোগ্য ভাবে ব্যাহত করে ফেলছে।
তবে সম্ভবত আমাদের জীবনের সময়ের মধ্যেই ভবিষ্যতে আরও মহামারীর সাথে যে আমাদেরকে লড়াই করতে হবে – এটিই একমাত্র এমন সংক্রামক রোগ নয়।
বিশ্বস্বাস্থ সংস্থা (World Health Organization- WHO) এবং অন্যান্য সংস্থাসমূহের গবেষণা অনুসারে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি আগামী দশকগুলিতে আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।
গবেষকরা আশঙ্কা করছেন যেহেতু তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে, সংক্রামক-রোগ বহনকারী প্রাণীরা আরও বিস্তৃত জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে, উষ্ণ তাপমাত্রায় বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে প্যাথোজেনগুলি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে এবং অসুস্থতার সাথে লড়াই করার ক্ষেত্রে মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Human immune system) আরও বেশি অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে।
যদিও কভিড-১৯ করোনাভাইরাস মহামারীটি জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে যুক্ত করা হয়নি, বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা কিভাবে ভবিষ্যতের সংক্রামক রোগগুলোকে বৃদ্ধি করবে তার কিছু আলামত নিন্মে দেওয়া হয়েছে।
সংক্রামক রোগগুলো একাধিক উপায়ে সংক্রামিত হতে পারে: উদাহরণস্বরূপ, মানুষ থেকে মানুষে, প্রাণী থেকে মানুষে এবং মশক জাতীয় রক্ত শোষকদের মাধ্যমে চারি দিকে।
নিন্মে সংক্রামক রোগ ছড়ানোর প্রধান ৪টি চক্র দেওয়া হল:
মানুষ হতে মানুষের মাধ্যমে রোগ সংক্রমণের উদাহরণ দেখানো একটি চিত্র – বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা | Source: WHO
যেহেতু বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি জনিত কারণে বৃষ্টিপাত, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং চরম তাপদাহ, দাবাদাহ ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে আবহাওয়ার এইরূপ পরিবর্তণ কিছু ধরণের সংক্রামক রোগজীবানুর বেঁচে থাকার, বংশবৃদ্ধি করার এবং সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য একটি উপযোগী আদর্শিক পরিবেশের আশংকা বাড়তে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, গবেষকরা জানায় যে, উচ্চ তাপমাত্রা এবং স্যাঁতসেতে জলবায়ু ম্যালেরিয়ার মতো মশা দ্বারা সংক্রমক রোগগুলিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
উনিশ শতকের গোড়ার দিকে, ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী বর্ষা এবং আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে ম্যালেরিয়া মহামারী দেখা দিয়েছিল, যা মশার বংশবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করেছিল।
ম্যালেরিয়া মহামারীজনিত ঝুঁকি প্রতিটি এল-নিনোর ( El Nino) ঘটনার পরে পাঁচগুণ বাড়াতে পারে, এটা হল আবহাওয়ার একটি রীতি। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে এই রীতি আরও খারাপ হওয়ার আশংকা রয়েছে।
গবেষকরা আশংকা করছেন যে, আমাদের গ্রহটি উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে মশা আরও দ্রুত প্রজনন করতে সক্ষম হবে এবং বিশ্বের সাধারণত শীতল অঞ্চলে রোগ ছড়াতে সক্ষম হবে, শীতের দরূণ যে সকল অঞ্চল এখনও মশার মত কীটপতঙ্গ হতে মুক্ত রয়েছে সেসব অঞ্চলে ।
উষ্ণ জলবায়ু এবং সংক্রামক রোগ নিয়ে পড়াশোনা করা স্ট্যানফোর্ডের জীববিজ্ঞানী ইরিন মোরদেকাই হুঁশিয়ারি করেছে যে “যদি জলবায়ু সংক্রমণ রোগজীবানুর জন্য আরও অনুকূল হয়ে উঠে, তবে মশার নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন ও কঠিনতর হবে।” তিনি এর সাথে যোগ করেছেন: “এটি আপনার জন্য আসছে”।
Source: Stanford University
একইভাবে, ইঁদুর বা পোঁকামাকড় এর মতো প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত রোগসমূহ জলবায়ুর অবস্থার উপর নির্ভর করে প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এবং একস্থান হতে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হয়। নির্দিষ্ট কিছু ইঁদুর বা পোঁকামাকর জনিত রোগ বন্যার সাথে সংপৃক্ত, যা বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কিছু গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, আবহাওয়ার ঘটনাবলী ইবোলা ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে, যেহেতু প্রচুর বৃষ্টিপাতের পরে শুকনো মৌসুমে ফলমূলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে, সেহেতু এই ভাইরাসের বাহক প্রাণীদের প্রচুর খাদ্যের যোগানের ও এই রোগ ছড়ানোর পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
এবং যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের খাদ্য ঘাটতি বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেহেতু আফ্রিকার আরও বেশি লোক বণ্যপ্রাণীর মাংস (Bushmeat) খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করতে পারে, যাকে ইবোলা প্রাদুর্ভাবের জন্য প্রায় ৫০% কারণ হিসাবে দায়ী করা হয়েছে।
Source: Columbia University
বন উজাড়করণও রোগ ছড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা নিতে পারে। ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্টের মতে, একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে যতগুলো নতুন রোগ অথবা পুরাতনগুলো নতুন করে দেখা দিয়েছে তার ৭৫%ই প্রাণী থেকে মানবদেহে সংক্রামিত হয়েছে, এর কারণ বণ উজাড়ের ফলে বনভূমি মানব পরিবেশের নিকটে চলে এসেছে।
Source: Columbia University
বিজ্ঞানীরা আরও উল্লেখ করেছে যে, তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় উষ্ণ ও নাতীশীতষ্ক অঞ্চলের প্রাণীগুলো সাধারণত শীতল পরিবেশে স্থানান্তরিত হতে শুরু করে। এটি প্রাণীদের মধ্যে রোগ সংক্রমণের নতুন পথ উন্মুক্ত করতে পারে, যেহেতু বিভিন্ন নতুন প্রজাতি ও পুরাতন প্রজাতির প্রাণীরা একে অপরের সংষ্পর্শে আসে, সেহেতু পরস্পরের মধ্যে রোগের বিস্তার ঘটার একটা পথ তৈরী হয়।
Source: Scientific American
২০১৭ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, স্তন্যপায়ী ভূমির প্রাণীরা প্রতি দশকে গড়ে প্রায় ১০ মাইল হারে শীতল জলবায়ুর দিকে এগিয়ে চলেছে, এবং সামুদ্রিক প্রজাতিগুলো প্রতি দশকে প্রায় ৪৪ মাইল গতিতে শীতল জলবায়ুর দিকে এগিয়ে চলেছে।
Sources: Scientific American, Science
তবে ভবিষ্যতের মহামারীকে প্রভাবিত করতে জলবায়ুর পরিবর্তন রোগের বিস্তার বৃদ্ধির একমাত্র কারণ নয়, উষ্ণতর তাপমাত্রা রোগজীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা (Natural immune systems) কেও দূর্বল করতে পারে।
Sources: Time Magazine, Scientific American
মানবদেহ রোগজীবানুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি উপায় হল দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রাকে বৃদ্ধি করা, যা জ্বর হিসাবে পরিচিত। যখন কোনও রোগজীবাণু শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, তখন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জ্বর বাড়াতে থাকে এবং শরীরের ভিতর এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে থাকে যাতে রোগ জীবাণুগুলি বাঁচতে না পারে। এর জন্য আমরা প্রায়শই জ্বরে আক্রান্ত হই।
Source: Time Magazine
তবে বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা উষ্ণ হওয়ায় ভাইরাসগুলো আমাদের দেহের অভ্যন্তরে- গরম পরিবেশে অভিযোজিত এবং বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে ক্রমশ উন্নত হচ্ছে।
NASA.gov
Source: Time Magazine
উদাহরণস্বরূপ, COVID-19 মহামারীটির উৎস হিসাবে বাদুরকে সন্দেহ করা হচ্ছে (the suspected vector for the COVID-19 pandemic), এরা শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বজায় রাখতে পারে।
এর অর্থ হল যে, বাদুর তাদের দেহে এমন এক ধরণের রোগজীবাণু বহন করতে পারে যা তাদের দেহের উত্তাপ সহ্য করতে পারে। কিন্তু মানুষের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা 98.6 ডিগ্রি ফারেনহাইট এবং ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা সহ্য করতে পারেনা। ফলে COVID-19 এ আক্রান্ত মানুষের দেহের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বৃদ্ধিতেও COVID-19 coronavirus গুলোর মৃত্যু হয়না।
Source: Time Magazine, Business Insider
জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের আণবিক জীবাণুবিজ্ঞান এবং ইমিউনোলজির চেয়ারপারসন আর্টুরো কাসাদেভাল ”সায়েন্টিফিক আমেরিকান” ম্যাগাজিনকে বলেছেন যে, “কল্পনা করুন যে পৃথিবী সবচেয়ে উত্তপ্ত রয়েছে এবং এই অবস্থায়ও টিকটিকিগুলি সে তাপম্ত্রায় খাপ খেয়ে আপনার সাথে বা কছিাকাছি বেঁছে আছে। এতে তারা বহনকারী ভাইরাসগুলোও উচ্চতর তাপমাত্রার সাথে খাপ খেয়ে ফেলেছে,” তিণি বলেন ” আমাদের দুটি প্রতিরক্ষা স্তম্ভ রয়েছে: তাপমাত্রা এবং আমাদের শরীরের মধ্যে বিদ্যমান থাকা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা (immunity) । ফলে একটি উষ্ণ পৃথিবীতে যদি আমাদের দেহের সহ্য করার তাপমাত্রার কাছাকাছি প্যাথোজেনস(রোগ জীবানু) সমূহ মানিয়ে নেয়, তবে আমরা তাপমাত্রার স্তম্ভটি হারাতে পারি।”
কাসোদেভাল এবং গবেষকদের একটি দল এটির একটি উদাহরণ খুঁজে পেয়েছে যা হল ঔষধ প্রতিরোধী (Drug-resistant) ছত্রাক। গবেষকরা দেখতে পান যে, একইরূপ তাপমাত্রা সহ্য করার দক্ষতার কারণে ছত্রাকটি তিনটি বিভিন্ন মহাদেশে উত্থিত হতে সক্ষম হয়েছিল।
Source: Scientific American
গ্রহের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে জীবাণুগুলোও সে উষ্ণ তাপমাত্রায় টিকে থাকার এই প্রবণতা বাড়তে থাকবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সেগুলো আরও ভালভাবে খাপ খাইয়ে নিতে বংশবৃদ্ধির এই ধারা অব্যহত রাখতে পারে।
Source: Time Magazine
টোকিওর একদল বিজ্ঞানীর গবেষণায় দেখা যায় যে, উষ্ণ তাপমাত্রায় ইঁদুরেরা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কম কার্যকর। গবেষণায় বলা হয়েছে যে, উষ্ণ জলবায়ু সম্ভবত দুর্বল প্রতিরোধ ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
তবে এটি চূড়ান্ত কিনা তা বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন। গবেষকরা অবশ্য এর মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সম্মত হয় যে, জলবায়ুর পরিবর্তন প্রকৃতির মধ্যে নিদর্শণগুলো (patterns) বাধাগ্রস্থ করে যা রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি বা তাদের সাথে লড়াই করতে প্রাণীদের অসুবিধা হতে পারে।
Source: Scientific American
ওষুধের ইতিহাসের বিভাগের অধ্যাপক এবং “মহামারী এবং সমাজ: ব্ল্যাক ডেথ থেকে এখন অবধি” এর লেখক ফ্র্যাঙ্ক স্নোডেন করোনাভাইরাস নিয়ে আলোচনা করার সময় বিজনেস ইনসাইডার ম্যাগাজিনকে বলেছিলেন “মহামারীর চ্যালেঞ্জগুলো ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এটি ভাবার কোনও কারণ নেই যে, এটি আমাদের জীবদ্দশায় সবচেয়ে মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে ।”
ব্ল্যাক ডেথ (Black Death) হল ১৪শ শতাব্দিতে ইউরোপে সংঘটিত প্লেগ মহামারী।
Source: Business Insider
জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে COVID-19 মহামারীটির আর্বিভাবের এখনও কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে গবেষণা শুরু হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের নির্দিষ্ট ইভেন্টগুলোর গবেষণা সম্পূর্ণ হতে আরও সময়ের প্রয়োজন।
Sources: Time Magazine, , Johns Hopkins
জলবায়ু পরিবর্তন এবং সংক্রামক রোগের বিস্তার বিষয়ক গবেষণা অত্যন্ত জটিল, বহু-পাক্ষিক এবং বাস্তব সময়ে উদ্ভাসিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, “সংক্রামক রোগ সংক্রমণের আর্দশগুলো (Patterns) এর পরিবর্তনগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভবত একটি বড় কারণ”। তবে এখনও এমন অনেক কিছু রয়েছে যা আমরা জানি না।
নিন্মের চকে পরিবেশের পরিবর্তনের ফলে মানুষের দেহে কিভাবে ভাইরাসের সংক্রমণ হয় তার কিছু উদাহরণ দেওয়া হল:
পরিবেশের পরির্বতন কার্যাদি | রোগের উদাহরণ | ভাইরাসের বাহক | হ্রাস-বৃদ্ধি | কারণ | মন্তব্য |
নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ, খাল খনন, সেচ প্রকল্প | শামুক জ্বর বা বিলহার্জীয়া (Scistossomiasis) | শামুক | বৃদ্ধি | শামুকের প্রজনন ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়। মানুষের সংষ্পর্শে আসার সুযোগ ঘটে | টিকা ১ দেখুন |
ম্যলেরিয়া | মশা | বৃদ্ধি | মশার প্রজনন ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়। | ||
কৃমি রোগ (Helminthiasis) | স্যাঁতসেঁতে বা আদ্র মাটি | বৃদ্ধি | লার্ভার প্রজনন বাড়ে, দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকে এবং মানুষের সংষ্পর্শে আসার সুযোগ ঘটে। | টিকা ২ দেখুন | |
নদীর অন্ধত্ব (River blindness orOnchocerciasis) | পরজীবী কৃমি সিমুলিয়াম ধরণের একটি কালো পোঁকার (Black Fly) কামড় দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে | হ্রাস | নদীর তীরে এ পোঁকায় মানুষকে কামড়ায়। নদীর ব্যবহার হ্রাস পাওয়ার কারণে। | টিকা ৩ দেখুন | |
কৃষি কাজের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি | ম্যলেরিয়া | মশা | বৃদ্ধি | মশার প্রজনন ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়। | |
ভেনিজুয়েলার হেমোরজিক জ্বর | ইঁদুর | বৃদ্ধি | ইঁদুরের প্রজনন ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়, ব্যাপ্তি ঘটে এবং মানুষের সংষ্পর্শে আসার সুযোগ ঘটে। | টিকা ৪ দেখুন | |
শহর সৃষ্টি, প্রসার ও ঘন জনবসতি | কলেরা | অপর্যাপ্ত স্থাস্থ্যব্যবস্থা (Sanitation problem), স্থাস্থ্যবিধি(Unhygienic) | বৃদ্ধি | পানি বাহিত জীবানু বিধায় খাওয়ার পানির সাথে বা খাওয়ার বস্তুর সাহায্যে চড়ায়। | |
ডেঙ্গু | এডিস নামক মশা | বৃদ্ধি | এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়। | ||
কালা-আজার ডার্মাল লেশম্যানিয়াসিস (kala-azar dermal leishmaniasis) | ফ্লেবোটোমিন স্যান্ডফ্লাই (Sand-Fly) পোঁকামাকড় | বৃদ্ধি | প্রজনন ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়। | টিকা ৫ দেখুন | |
বন উজাড় এবং নতুন বসতি স্থাপন | ম্যলেরিয়া | মশা | বৃদ্ধি | মশার প্রজনন ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায় এবং ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত লোকের সমাগম ঘটে। | |
ওরোপচ আর্থোবুনিয়াভাইরাস জ্বর (Oropouche orthobunyavirus -OROV) | ওরোপচ (Oropouche) মশা | বৃদ্ধি | মশার প্রজনন ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায় এবং মানুষের সংষ্পর্শতা বৃদ্ধি ঘটে। | টিকা ৬ দেখুন | |
কালা জ্বর (Visceral leishmaniasis (VL), also known as kala-azar) | লবোটোমাস প্রজাতির স্যান্ডফ্লাই এবং লুটজমিয়া প্রজাতিরস্যান্ডফ্লাইগুলি Phlebotomus
sand-fly and Lutzomyia Sand-Fly) পোকাঁমাকড় |
বৃদ্ধি | প্রজনন ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়। | টিকা ৭ দেখুন | |
পূণ:বনায়ন | লাইম রোগ (Lyme disease) | টিক পোঁকা | বৃদ্ধি | প্রজনন ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়। | টিকা ৮ দেখুন |
মহাসাগরের উষ্ণায়ন | লাল জোয়ার (Red tide) | বিষাক্ত অ্যালজির কুড়ি | প্রকোপ দেখা দেয় | সৃষ্ট হয়। | টিকা ৯ দেখুন |
উচ্চস্থানে কৃত্রিম ঝরনা স্থাপন | রিফ্ট ভেলী ভাইরাস জ্বর (Rift Valley fever – RVF) | মশা ও অন্যান্য পোষা প্রাণী | বৃদ্ধি | মশার প্রজনন ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়। | টিকা ১০ দেখুন |
অর্থোহন্তাভাইরাস বা হ্যান্টাভাইরাস জনিত ফুসফুস রোগ | ইঁদুর | বৃদ্ধি | পঁচা খাদ্য, বসবাসের উপযোগী পরিবেশ বৃদ্ধি | টিকা ১১ দেখুন |
S জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রামক রোগের বিস্তারকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে তার উদাহরণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাource: Source: World Health Organization
টিকা ১: শামুক জ্বর বা বিলহার্জীয়া (Scistossomiasis):
স্কিজোসোমস (schistosomes) নামক পরজীবী ফ্ল্যাটওয়ার্মসের দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ। মূত্রনালী বা অন্ত্র সংক্রামিত হতে পারে। এই রোগের লক্ষণগুলো হ’ল পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, রক্তাক্ত মল বা প্রস্রাবে রক্ত নি:সৃত হওয়া।
দীর্ঘকাল ধরে সংক্রামিত রোগীগণ লিভারের ক্ষতি, কিডনি ফেইলিউর, বন্ধ্যাত্ব বা মূত্রাশয়ের ক্যান্সারের ভূগতে পারেন। শিশুদের ক্ষেত্রে, এটি তাদের দুর্বল বৃদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস করতে পারে।
পরজীবীর সাথে দূষিত মিঠা পানির সংস্পর্শে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এই পরজীবীগুলোর সংক্রামিত মিঠা পানির শামুক হতে আসে বা শামুক পরিবহন করে। এই রোগের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে কৃষক, জেলেরা এবং প্রতিদিনের জীবনযাপনের সময় অপরিষ্কার জল ব্যবহার করা জনগোষ্ঠী।
টিকা ২: কৃমি রোগ বা হেলমিনিথিয়াসিস (Helminthiasis):
মানব ও অন্যান্য প্রাণীর যে কোনও ম্যাক্রোপারাসিটিক রোগ। দেহের একটি অংশ পরজীবী কীট দ্বারা সংক্রামিত হয়, যা হেল্মিন্থস (Parasitic worms,)নামে পরিচিত। এই পরজীবীগুলোর প্রচুর প্রজাতি রয়েছে, যা ব্যাপকভাবে টেপওয়ার্ম, ফ্লুয়াকস এবং গোলকৃমি শ্রেণিতে বিভক্ত।
এরা সাধারনত প্রাণীর খাদ্য পরিপাকতন্ত্রে বাস করে ,তবে তারা অন্যান্য অঙ্গগুলিতেও থাকতে পারে এবং শারীরবৃত্তীয় ক্ষতি করে থাকে
হেলমিনিথিয়াসিসের কারণে জন্মগত দূর্বলতা দেখা দেয়, দূর্বল জ্ঞানের বিকাশ ঘটে, লেখা পড়ায় দূর্বল প্রকৃতির হয় ও কাজের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, অপুষ্টি এবং রক্তাল্পতা দেখা দেয়।
পেটের মধ্য দিয়ে অন্ত্রের মধ্যে চলে যায়, যেখানে তারা প্রাপ্তবয়স্ক কৃমি হয়ে যায়। এটি এক ধরণের মাটি সংক্রমণ হেল্মিন্থিয়াসিস এবং হেলমিনিথিয়াস নামক একধরণের রোগের অংশ। মাটি সংক্রমণ হেলমিনিথিয়াস বিশ্বব্যাপী মানব জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশের মধ্যে পরজীবী সংক্রমণের জন্য দায়ী।
টিকা ৩: নদীর অন্ধত্ব (River blindness or Onchocerciasis):
এটি পরজীবী কৃমি ওনচোসারকা ভলভুলাস সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট একটি রোগ। লক্ষণগুলির মধ্যে গুরুতর চুলকানি, ত্বকের নিচে ঘা এবং অন্ধত্ব অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বে অন্ধত্বের দ্বিতীয়-কারণ এ সংক্রমণে হয়।
সিমুলিয়াম ধরণের একধরণে কালো মাছির কামড় দ্বারা পরজীবী কৃমি দেহে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত, সংক্রমণ হওয়ার জন্য মাছির অনেকগুলি কামড়ের প্রয়োজন হয়।
এই মাছিগুলি নদীর কাছে বাস করে বলে রোগের নাম নদীর অন্ধত্ব বলা হয়। বিশ্বে প্রায় ১৫.৫০ মিলিয়ন মানুষ নদীর অন্ধত্বে আক্রান্ত । আফ্রিকার উপ-সাহারান দেশগুলোতে, ইয়েমেন এবং মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলিতেও এ রোগের প্রভাব দেখা যায়।
টিকা ৪: ভেনিজুয়েলার হেমোরজিক জ্বর (Venezuelan hemorrhagic fever -VHF):
একটি জুনোটিক (zoonotic)মানব রোগ। জুনোটিক রোগ হলো যে রোগের জীবানু অন্য কোন প্রাণী হতে মানব দেহে লাফিয়ে সংক্রামিত হয়। সাধারনত ইঁদুর, গৃহপালিত বা পোষা পশু হতে এই রোগ মানবদেহে ছড়ায়। এই রোগটি মধ্য ভেনিজুয়েলার বেশ কয়েকটি গ্রামীণ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
সংক্ষিপ্ত-লেজযুক্ত ইঁদুর (জাইগোডোনটমাইজ ব্র্যাভিকাডা) প্রধান হোস্ট। বেশিরভাগই লালা, শ্বাসকষ্টের স্রাব, প্রস্রাব বা সংক্রামক খড়ের রক্ত থেকে বায়ু সংশ্লেষিত শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যক্তি-থেকে ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সম্ভব, তবে অস্বাভাবিক। এই রোগটি ৩০% ক্ষেত্রে মারাত্মক এবং এটি ভেনেজুয়েলার পর্তুগুয়েশিয়া রাজ্য এবং বারিনাস রাজ্যে স্থানীয়।
টিকা ৫: কালা-আজার ডার্মাল লেশম্যানিয়াসিস (Post kala-azar dermal leishmaniasis):
পোস্ট-কালা-আজার ডার্মাল লেশমানিয়াসিস (Post-kala-azar dermal leishmaniasis -PKDL) : বালির মাছি (Sand Fly) এর কামড়ে মানবদেহে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ত্বকে এ ক্ষত কয়েক মাস, এমনকি ২০ বছরও থাকতে পারে।
র্দীঘ দিন চিকিৎসার পর ভাল হয়, আবার কয়েক বছর পর দেখা দেয়। উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো যেমন সুদান, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, লিবিয়ার পশ্চিম অংশে এই রোগের প্রকোপ বেশী দেখা যায়। ইদানিং নেপালেও এই রোগ লক্ষ্য করা গেছে। এই রোগের চিকিঃসা খুবই ব্যয়বহুল।
বালির মাছি মূলত রাতে কামড়ায় এবং এটি সাধারণত মাটির প্রায় আধা মিটার উপরে উড়তে পারে, তাই উচুঁ বিছানায় ঘুমালে এই রোগ হতে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। কুকুরও এই জীবানু ছড়ানোর ২য় বাহক।
টিকা ৬ ওরোপচ জ্বর (Oropouche fever):
এই অর্থোবুনিয়াভাইরাস (orthobunyavirus -OROV) সংক্রামণের মাধ্যমে দ্রুত জ্বরের অসুস্থতা সৃষ্টি করে। কোকিললেটিডিয়া ভেনিজুয়েলেনসিস , স্লোথ এবং সেরারটাস মশা এই ভাইরাসের বাহক এবং ল্যাটিন আমেরিকা বিশেষ করে ত্রিনিনাদ ও টোবাকো, ব্রাজিল, পানামা ইত্যাদি আমাজান সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে এই রোগ দেখা যায়। এই রোগ দেখা দেওয়ার পর অর্থাৎ ১৯৫৫ হতে ২০০০ পর্যন্ত এই ভাইরাসটি ৩০ টি মহামারী সৃষ্টি করে।
টিকা ৭: কালা জ্বর (Visceral leishmaniasis -VL):
প্রোটোজোয়া প্যারাসাইট (protozoan parasites) দ্বারা এই রোগ হয়। ফুলবোটোমাস (Phlebotomus) স্যান্ডফ্লাই লুটজমিয়া(Lutzomyia) প্রজাতি প্রজাতির বালি মাছি (Sand Fly) (ছোট ছোট মাছি,) এই প্যারাসাইটের বাহক ও সংক্রামক। এই রোগের সর্বাধিক সাধারণ লক্ষণ হল জ্বর এবং প্লীহের বৃদ্ধি, যকৃতের বৃদ্ধি।
পূর্ব আফ্রিকা এবং ভারতীয় উপমহাদেশে এর যেমন প্রাদুর্ভাব রয়েছে, তেমনি ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ল্যোটিন আমেরিকায়ও এই রোগের প্রাদূর্ভাব রয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর হার ১০০% এর কাছাকাছি।
টিকা ৮: লাইম রোগ (Lyme disease):
ইহা লাইম বোরেলিওসিস নামে পরিচিত। বোর্রেলিয়ার ব্যাকটিরিয়াম Borrelia bacterium) দ্বারা সৃষ্ট এটি একটি সংক্রামক রোগ যা টিক্স নামক একটি পোঁকার কামড় দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। লক্ষণ হ’ল ত্বকের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে লালচে দাগের মত হয় এবং টিক কামড়ানোর প্রায় এক সপ্তাহ পরে ইহা দেখা যায়।
প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি অনুভব হতে পারে। যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে মুখ নাড়াতে কষ্ট হয়, জয়েন্টে ব্যথা, ঘাড় শক্ত হওয়া বা তীব্র মাথাব্যথা বা হৃদপিণ্ডের ধড়ফড়ানি হতে পারে। উপযুক্ত চিকিৎসা সত্ত্বেও, প্রায় ১০% থেকে ২০% লোক কমপক্ষে ছয় মাস ধরে জয়েন্টে ব্যথা, স্মৃতি সমস্যা এবং ক্লান্তি বোধ করে।
লাইম রোগটি উত্তর গোলার্ধে টিক্স দ্বারা ছড়িয়ে পড়া সবচেয়ে সাধারণ রোগ। এটি যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ৩০০,০০০ এবং ইউরোপে ৬৫,০০০ লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়।
টিকা ৯: লাল জোয়ার (Red tide ):
সমুদ্রের তল থেকে উল্থিত বিষাক্ত শৈবালের ফুলের (algal blooms) জোয়ার, যাতে বহু ঘনত্বের জলজ অণুজীব (microorganisms) যেমন প্রোটোজোয়ানস (protozoans) এবং এককোষী শৈবাল (unicellular algae) থাকে। ক্ষতিকারক শৈবাল ফুলগুলি বিশ্বব্যাপী দেখা দিতে পারে এবং প্রাকৃতিক চক্রগুলি অঞ্চলগতভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।
লাল জোয়ার বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক উপকূলবর্তী অঞ্চলে দেখা দেয়। সামুদ্রিক ডাইনোফ্লাজলেটগুলি (dinoflagellates) ইচথিয়োটক্সিন (ichthyotoxins) তৈরি করে। তবে সমস্ত লাল জোয়ার ক্ষতিকারক নয়।
যেখানে লাল জোয়ার দেখা দেয় সেখানে প্রচুর মরা মাছ লাল জোয়ারের অঞ্চল জুড়ে দেখতে পাওয়া যায়। মাছ হত্যা ছাড়াও বিষাক্ত শেত্তলাগুলি শেলফিশকে দূষিত করে। শেলফিস ও মরা মাছ খাওয়া ডাইভিং হাঁস, অন্যান্য সামুদ্রিক পাখি মারা যেতে পারে। বিষাক্ত শৈবাল ফুলগুলি ডলফিন, সামুদ্রিক কচ্ছপ, পাখি এবং মানেটিস সহ সামুদ্রিক প্রাণীকে হত্যা করতে পারে।
টিকা ১০: রিফ্ট ভ্যালি ফিভার (Rift Valley fever – RVF):
ইহা মশা দ্বারা সংক্রামিত একটি ভাইরাল রোগ। হালকা লক্ষণগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে: জ্বর, পেশী ব্যথা এবং মাথাব্যথা যা প্রায়শই এক সপ্তাহ অবধি স্থায়ী হয়।
গুরুতর লক্ষণগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে: সংক্রমণের তিন সপ্তাহ পরে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, মস্তিষ্কের সংক্রমণে গুরুতর মাথাব্যথা ও বিভ্রান্তি দেখা দেয় এবং লিভারের সমস্যাসহ রক্তপাত হয়। যাদের রক্তপাত হয় তাদের মৃত্যুর আশংকা ৫০% এরও বেশি থাকে।
এই রোগটি আরভিএফ (RVF)ভাইরাস দ্বারা হয়, যা ফ্লেবোভাইরাস ধরণের। এই রোগের প্রাদুর্ভাব কেবল আফ্রিকা এবং আরবেই হয়েছে।
টিকা ১১: হ্যান্টাভাইরাস পালমোনারি সিনড্রোম (Hantavirus pulmonary syndrome – HPS):
অর্থোহন্তাভাইরাস (Orthohantavirus) নামক এক প্রকার আবরণযুক্ত ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট ফুসফুস আক্রান্ত রোগ যা ইঁদুর দ্বারা মানুষের মধ্যে ছড়ায়। আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ায় এই রোগ দেখা যায়।
ইঁদুরে প্রস্রাব, লালা বা মলের সংস্পর্শের মাধ্যমে মানুষ হ্যান্টাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। ফুসফুসের অসুস্থতা দেখা দেয়, অন্যদিকে হেমোরজিক জ্বর অনেক বেশি দেখা যায়। কখনও কখনও এশিয়া এবং ইউরোপে হ্যান্টাভাইরাস দ্বারা রেনাল সিন্ড্রোমের সঙ্গে রক্তক্ষয়জনিত জ্বর দেখা যায়।
সাধারণ অসুস্থতার সাথে শুরু হয়ে উচ্চ জ্বর, সর্দি, মাথা ব্যথা, পিঠে ব্যথা, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমিভাব হয়। প্রাথমিক সময়ের পরে, ত্বকের নীচে রক্তপাত শুরু হয়, এরপরে সারা শরীরের আরও অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হয়।
রেনাল কর্মহীনতার ফলে আরও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয় এবং এর ধারাবাহিকতায় মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এই রোগেরও কোন নিদিষ্ট চিকিৎসা নাই।
Source: Business Insider, Stanford University, WHO and wikipedia
Original: Natalie Colarossi for Business Insider