এল নিনো-দক্ষিনস্থ পর্যাবৃত্ত চক্র তাপ ইঞ্জিন (El Niño-Southern Oscillation heat engine) বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে
– রহমান মাহফুজ ও
সাদিয়া নূর পর্সিয়া
এল নিনো-দক্ষিনস্থ পর্যাবৃত্ত চক্র (El Niño-Southern Oscillation – ENSO) দ্বারা জলবায়ু পরির্বতনের শক্তিশালী র্পূবাভাস পাওয়া যায়, যাকে বলা হয় বাৎসরিক জলবায়ুর সবচেয়ে শক্তিশালী সংকেত।
এল নিনো হল গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমন্ডলীয় একটি পর্যাবৃত্ত পরির্বতন। আরও সহজ করে বলা যেতে পারে , যখন পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে (তাহিতি১ এবং ডারউইন২ অঞ্চলে ) অস্ট্রেলিয়ার বায়ুমণ্ডলে বায়ুর চাপের পরির্বতন সংঘটিত হয় তখন দক্ষিন আমরেকিার পেরু ও ইকুয়ডের এর পশ্চিম মহা সাগরীয় উপকূল থেকে অস্বাভাবিক গরম অথবা ঠান্ডা বায়ু তথায় প্রবাহিত হয়।
যখন অস্বাভাবিক গরম বাতাস প্রবাহিত হয় তখন যে পর্যাবৃত্ত ঘটে তাকে এল নিনো পর্যাবৃত্তরে উষ্ণ পর্যাবৃত্ত বলা হয়, আর যখন অস্বাভাবিক ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হয় তখন যে পর্যাবৃত্ত ঘটে তাকে এল নিনা পর্যাবৃত্তরে শীতল পর্যাবৃত্ত বলে। এ পর্যায়বৃত্তের পরির্বতনের কোন র্নিদৃষ্ট সময় নেই, তবে প্রতি ৩ থেকে ৮ বছরের মাঝে একবার ঘটতে দেখা যায়। “এল নিনো দক্ষিনাঞ্চলীয় পর্যাবৃত্ত পরির্বতন” নামইে ইহা বেশি পরচিতি।
নাসার টোপক্সে/পোসইেডন উপগ্রহরে মাধ্যমে গৃহীত ১৯৯৭ সালরে এল নিনোর চিত্র। সাদা অংশটি দক্ষিণ ও উত্তর আমরেকিার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উপকূলে প্রবাহিত উষ্ণ স্রোতকে র্নিদেশ করছে
এল নিনো স্প্যানিশ শব্দ এর অর্থ – বালক, যা র্নিদেশ করে “যীশুর ছেলে” । কারণ এ পর্যাবৃত্ত সাধারণত ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে বড় দিনের সময়ে ঘটে এবং এ সময় উষ্ণ সামুদ্রিক জলস্রোতরে পরর্বিতন ঘটিয়ে দক্ষিন আমেরিকা উপকূল অঞ্চলের দিকে তীব্র উষ্ণ জল স্রোতের সৃষ্টি করে।
তার প্রভাবইে পৃথবিীতে বন্যা, খরা , র্ঘূনিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সুনামী ইত্যাদি প্রাকৃতকি দূর্যোগের সৃষ্টি হয়। এতে কৃষি, মৎসের উপর নির্ভরশীল দেশ সমূহের মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এল নিনো নিরক্ষীয় মধ্য-র্পূব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বাড়িয়ে তুলছে যার ফলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় বায়ুমন্ডলে আরও সুপ্ত তাপ নিঃসরিত হচ্ছে এবং এভাবে তাপ ইঞ্জিনের মতো বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থার পরর্বিতন করছে।
জানা গেছে যে, coupled model intercomparison project phase 5 (CMIP5) এর আওতায় জলবায়ুর Simulation প্রক্ষেপন করে দেখা গেছে যে পৃথিবীর উষ্ণায়নের প্রভাবে এল নিনো বৃষ্টিপাতের অসংখ্য গতি পরিবর্তন ঘটিয়ে পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
ENSO হিট ইঞ্জিনের অঞ্চল পরির্বতন বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়ার পরির্বতন করবে। তবে, প্রক্ষেপিত ফলাফলটি শক্তিশালী প্রক্রিয়া দ্বারা সর্মথিত হয়নি, মূলত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এর ENSO এর প্রসস্ততা পরির্বতনের ব্যাপক অনিশ্চয়তার কারণেই এমনটি হয়েছে।
সম্প্রতি সায়েন্স অ্যাডভান্স-এর একটি গবষেণায় প্রকাশিত হয়েছে যে, চীন, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল বৈশ্বিক উষ্ণায়নের আওতায় ENSO দ্বারা প্রভাবিত বৃষ্টিপাতের র্পূবমুখী গতি পরির্বতন এবং সম্প্রসারণ বোঝার জন্য একটি নতুন ব্যবস্থা প্রস্তাব করে। যুক্তরাজ্যে গবষেকরা সামগ্রীক জলবায়ু পরির্বতন পদক্ষেপ বিশ্লেষণ করনে।
ড. বো উ, যিনি চীনা বিজ্ঞান একাডেমির বায়ুমণ্ডলীয় পদার্থবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান বিষয় সংশ্লিষ্ট লেখক, তিনি সম্প্রতি লিখেছেন যে, “আমরা জানতে পেরেছি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দুর্বল র্পূবমুখী বায়ু, প্রায় গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের দক্ষিনমুখী বায়ুর সঞ্চালনকে দুর্বল করে দেয় এবং ENSO এর দক্ষিণে বিস্তার ও সংকুচতি করে দেয়।”
“এর অর্থ ENSO এর সাথে যুক্ত সমুদ্র পৃষ্ঠরে তাপমাত্রার (Sea Surface Temperature – SST) বিশৃঙ্খল নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে আরও বেশি কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। নিরক্ষীয় মধ্য-র্পূব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে র্আদ্রতা এককেন্দ্রমুখী করার ক্ষেত্রে ENSO আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে যা বৃষ্টিপাতের অসংগতির গতিকে পূর্ব দিকে অগ্রসর এবং সম্প্রসারণের দিকে পরিচালিত করে। যদিও ENSO তীব্রতা বিশ্ব উষ্ণায়নরে আওতায় অপরিবর্তিত থাকে।
টিকা:
১. তাহিতি: ফ্রান্সের অধিভুক্ত প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপাঞ্চল। এটি আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে সৃষ্টি হয় এবং দ্বীপটির চারিদিকে পাহাড় ঘেরা।
২. ডারউইন দ্বীপপুঞ্জ: ইহা পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ মালা। পানিতে নিমজ্জিত মাত্র ১ কিলোমিটার আয়তনের একটি মালভূমির মাথায় প্রস্তর দ্বারা প্রাকৃতিকভাবে নির্মিত খিলান রয়েছে যা বির্বতণবাদের প্রর্বতক ইংরেজ জীববিজ্ঞানী ডারউইন এর নাম অনুযায়ী নামকরণ করা হয়েছে । সমুদ্রের মাঝে এটিকে একটি সেতুর মত দেখায়।
Source:
1. Phy.org
2. Wikipedia