জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতি হারাচ্ছে তার ভারসাম্য
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারিয়ে অতিবৃষ্টি, খরা, মাত্রাতিরিক্ত গরম, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, ঝড়, শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত, মৎস্য প্রাণিসম্পদ ও মানবজাতির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
খুলনা অঞ্চলে দিন দিন জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব স্পষ্ট হচ্ছে। ঝুঁকিতে পড়েছে কৃষি ও মৎস্য খাত। গত ১৪ বছরে খুলনাসহ আশপাশের এলাকার তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাংলাদেশের উপকূল এলাকার সুন্দরবন-সংলগ্ন খুলনার পাইকগাছা ও কয়রায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতি আজ বিরূপ আকার ধারণ করেছে। নদীতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর তলদেশের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ভাঙন বেশি আকারে দেখা দিয়েছে। শিবসা, কপোতাক্ষ, মিনাজ, হাড়িয়া নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।
যে নদীতে একসময় লঞ্চ, জাহাজ, স্টিমার চলাচল করতে দেখা গেছে, সেই নদীগুলো ছোট মরা খালে পরিণত হয়ে গেছে। ২০১১ সালে এখানকার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ছিল ৩১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর চলতি বছরেই সেই তাপমাত্রা ছাড়াল রেকর্ড ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আবহাওয়া দপ্তরের ১৪ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে এ তথ্য ওঠে এসেছে। উচ্চ তাপমাত্রায় হুমকির মুখে থাকা কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন নিয়ে সচেতন হওয়া এবং কার্যকর উদ্যোগ জরুরি।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য মতে, সাধারণত ধান চাষের ক্ষেত্রে প্রয়োজন ১৮ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। কিন্তু এর বেশি তাপমাত্রায় ধান উৎপাদন ব্যাহত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে গড় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়াচ্ছে।
এতে ধানের পরাগায়ন বাধাগ্রস্ত ও উৎপাদন কম হয়। আবার উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষিজমির মাটির লবণাক্ততা বাড়ছে। তাপমাত্রার সঙ্গে লবণাক্ততায় ফসলের উৎপাদনক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। অনেক কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
কৃষিজমির লবণাক্ততা যদি বাড়তে থাকে, তাহলে কৃষি আয় বছরে ২১ শতাংশ কমে যাবে। উপকূলীয় অঞ্চলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি হুমকির মুখে পড়বে। এতে এ অঞ্চলের ২ লাখ ৪০ হাজার কৃষকের বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধান ছাড়া অন্যান্য শস্য যেমন- পাট, গম, ভুট্টা, মটর, ছোলা উৎপাদনও ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
কৃষি তথ্য বলছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর বিভিন্ন পরিবর্তনের ফলে মৎস্য উৎপাদন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে পানি গরম হয়ে পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়।
এতে মাছের পোনা উৎপাদন অনেকাংশে হ্রাস পায়। ফলে মৎস্য খাত থেকে আয় কমে যাচ্ছে। খুলনার কয়রা-পাইকগাছা উপকূলীয় এলাকায় গত তিন-চার দশকে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও দুর্যোগে মানুষের কর্মসংস্থান কমে গেছে। প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মজীবী মানুষ কাজের জন্য এলাকা ছেড়েছে। তবে মানুষ এখন কৃষিতে ফিরতে চায়।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। বলতে গেলে এটি একুশ শতকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দিন দিন জলবায়ুর পরিবর্তন জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলায় তা আমাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব শুধু খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে নয় সারা দেশেই পড়ছে। তাই জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে আমাদের সচেতন হতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে।