জঞ্জাল যখন নির্মাণের উপকরণ হয়ে ওঠে
আগের যুগে অপ্রয়োজনীয় সব কিছুই ফেলে দেওয়া হত। তবে এখন বিজ্ঞানের কল্যানে পৃথিবীর সীমিত সম্পদ ও পরিবেশ সংরক্ষণের জন্যে ব্যাবহৃত অপ্রয়োজনীয় সব কিছুই এখন পুনর্ব্যবহারের চেষ্টা ও পরিকল্পনা চলছে। এই প্রচেষ্টায় ইউরোপের কিছু মানুষ নির্মাণের উপকরণ পুনর্ব্যহারের পথ দেখাচ্ছেন৷
ঘরবাড়ি ভাঙা আবার সেটিকে নতুন করে গড়ার কারণে গোটা বিশ্বে কয়েক কোটি টন আবর্জনা ও জঞ্জালের সৃষ্টি হয়৷ কিন্তু সেই জঞ্জাল থেকে নির্মাণের নতুন উপকরণ তৈরি করা সম্ভব৷ যেমন একটি ফ্ল্যাটের দেওয়াল ও ইনসুলেশনের উপকরণ হিসেবে অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিকের বোতল,বাতিল টেট্রাপ্যাক, ছেড়া জিনস প্যান্ট ও আলুর খোসা ব্যবহার করা হয়েছে৷
শুধু তাই নয়, পরীক্ষামূলকভাবে এই ফ্ল্যাটে আরও অনেক ফেলে দেওয়া উপাদানকে পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে৷ সেখানে ইতিমধ্যে মানুষ বসবাস করে বলে উপকরণগুলির কার্যকারিতাও খুব দ্রুত বোঝা সম্ভব হবে৷ কয়েক মাসের জন্য সেখানে কিছু ছাত্রছাত্রীরা বসবাস শুরু করেছেন৷
দেমেত্রিস এংলেসোস বসবাসকারী ছাত্রদের একজন৷ তিনি বলেন, ‘ব্যতিক্রমধর্মী এমন পরিবেশ বান্ধব পরিবেশে থাকতে ভালোই লাগে৷ কারণ এখানে ময়লা-জঞ্জালকে কাঁচামাল হিসাবে ব্যাবহার করা হয়েছে৷ এই ফ্ল্যাটে কোনোকিছুই অভাব নেই এবং প্রকৃতিক পরিবেশ রক্ষার বাড়তি অনেক সুবিধা পাওয়া যায়৷।
আজকের যুগে জঞ্জাল নির্মাণের জন্যে দামী উপাদান হয়ে উঠছে৷ বিশেষজ্ঞ হিসেবে এনরিকো মার্কেসি এই প্রক্রিয়াকে ‘আর্বান মাইনিং’ হিসেবে বর্ণনা করেন৷ এই ফ্ল্যাটটির প্রায় সবকিছু রিসাইক্লিং-এর ফসল৷ ভবিষ্যতেও সেগুলি আবার রিসাইকেল করা যাবে যা অপচয় রোধ ও পরিবেশ রক্ষায় প্রভাব ফেলবে৷
ইনোভেশন ম্যানেজার হিসেবে এনরিকো মার্কেসি মনে করিয়ে দেন, ‘‘আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর সম্পদ অতি সীমিত৷ উত্তোলনযোগ্য তামা, বালু ইত্যাদি খুব বেশি অবশিষ্ট নেই৷
আমরা এমন এক পরিস্থিতির দিকে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছি, যেখানে খুব বেশি সম্পদ অবশিষ্ট থাকবে না আবার উত্তলণও ঝুকিপূর্ণ হবে। তাই আমাদের এক বাস্তবমুখী সমাধান সূত্রের প্রয়োজন রয়েছে৷ একমাত্র রিসাইক্লিং(পুনর্ব্যবহার) ভিত্তিক অর্থনীতির মাধ্যমে কেবল সেটা সম্ভব৷
যেমন ঘরের কার্পেট প্রক্রিয়াজাত করে তাকে একেবারে নতুন কার্পেট হিসাবে পনরায় তৈরি করা৷ ফলে কেনার বদলে সেটি ভাড়া নিলেই হবে কেননা নির্মাতা সেটি আবার ফেরত নিবে এবং আবার বানাবে। এভাবে বেশিরভাগ উপকরণের ক্ষেত্রেও নবায়নের সুযোগ রয়েছে, যাতে সংস্কার অথবা সেগুলি দিয়ে নতুন কিছু তৈরি করা সম্ভব হয় আবার পূর্বের প্রয়োজনও মিটে যাবে।
তবে উপকরণের পুনর্ব্যবহার চালু রাখতে হলে নির্মাণের পদ্ধতির একটি ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। এনরিকো মার্কেসি বলেন, ‘‘একটি ভবন শুরু থেকেই এমনভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্য স্থির করতে হবে, যাতে র্নিমাণ কাজে ব্যবহৃত উপকরণগুলি আবার আলাদা করা ও পাশাপাশি আবার ব্যবহার যায়৷
অর্থাৎ পাকাপাকিভাবে জোড়া দেবার বদলে অংশগুলি স্ক্রু বা আঠা দিয়ে লাগানো অথবা বসানো থাকবে৷ একটু বাড়িয়ে বলা যেতে পরে যে, মাত্র দুই জন মানুষ যেন একটি কর্ডলেস স্ক্রুড্রাইভার দিয়ে একটা গোটা বাড়ি খুলে নিতে পারে৷
ব্রোঞ্জের তৈরি একটি ক্ষুদ্র বস্তুটিও একসময়ে একটি ব্যাংকের শোভা বাড়িয়েছে যা নষ্ট হয়ে গেলে অন্য অনেক মূল্যবান উপকরণের মতো এটিও আবর্জনার স্তূপে ফেলে দিতে হতো৷ সুইজারল্যান্ডের এক অনলাইন দোকান ভাঙা ভবনের অংশ বিক্রি করে৷
স্থপতি হিসেবে ওলিভিয়ে দে পেরো সেই প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা৷ তিনি বলেন, ‘সুইজারল্যান্ডে বছরে ৩০০০ থেকে ৪০০০ ভবন ভাঙার সরকারি অনুমতি দেওয়া হয়৷ অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে দেশে দশটিরও বেশি বাড়িঘর ভাঙা হয়৷ আর ভাঙা অংশগুলি স্পষ্ট দেখা যায়৷ আবার কখনো মাত্র দশ বছর আগে পুরোপুরি সংস্কার করা ভবনও ভাঙার ঘোষণা করা হয়৷
এমনটাই কি স্বাভাবিক? এভাবে অগ্রসর হওয়া কতটা সমর্থনযোগ্য?
পুনর্ব্যবহারের এই পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে৷ কিন্তু এখনো হাতে গোনা কিছু নির্মাণের উপকরণ পুনর্ব্যবহার করা হয়৷ স্টোরেজের সমস্যা ছাড়াও নির্মাণ শিল্পের কাছে এই সমাধানসূত্র গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে৷
মেলি জেন/এসবি