হোলসিম এমন কংক্রিট তৈরি করবে যা বৈদ্যুতিক যানবাহনকে রিচার্জ করবে
হোলসিম (Holcim) ও ম্যাগমেন্ট (Magment GmbH) যৌথভাবে এমন একটি চৌম্বকীয় কংক্রিট প্রযুক্তি তৈরি করতে যাচ্ছে যা দিয়ে নির্মিত সড়ক বৈদ্যুতিক যানবাহনকে চলাচলের সময় তারবিহীনভাবে সংক্রিয় রিচার্জ করতে সক্ষম হবে।
বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধিই জলবায়ু পরিবর্তণের জন্য ধায়ী। বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী বায়ুমন্ডলে গ্রীণ হাউজগ্যাসসমূস (যেমন, কার্বনডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, ওজন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বণ, হাইড্রো কার্বণ ইত্যাদি) এর নির্গমণ ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাওয়া। সুতরাং বিশ্ব জলবায়ুর পরিবর্তণ রোধে বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই। আর তার জন্য প্রয়োজন বায়ুমন্ডলে গ্রীণহাউজ গ্যাস সমূহের নির্গমণ হ্রাস করা।
আওয়ার ওর্য়াল্ড ডাটা (Our World in Data) এর তথ্যমতে প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৫০ বিলিয়ন টন গ্রীণহাইজ গ্যাস নির্গমণ ঘটে, তারমধ্যে ৭৩.২%ই নির্গমণ ঘটে শক্তি উৎপাদনে।
জীবাস্ম জ্বালানী (যেমন, খনিজ কয়লা, পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন, ইত্যাদি) অধিক হারে ব্যবহারই বায়ুমন্ডলে গ্রীণহাইজ নির্গমণের জন্য প্রধান দায়ী।
শক্তি উৎপাদনের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৫%, যানবাহনে ১৪%, সড়ক যানবাহনে ১২%, শিল্পকারখানায় ২১% গ্রীণ হাউজ গ্যাস উৎপন্ন হয়।
২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরবর্তণ সম্মেলন (2015 United Nations Climate Change Conference) এ গৃহিত এবং ২০১৬ হতে স্বাক্ষরিত যা প্যারিস চুক্তি (Paris Agreement)বা প্যারিস জলবায়ু চুক্তি নামে খ্যাত, তাতে ২১শ শতাব্দিতে বিশ্ব উষ্ণতা প্রাক শিল্প যুগ হতে ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি অতিক্রম না করার এবং ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধির অনেক নীচে রাখার লক্ষ্য স্থাপন করা হয়।
সে লক্ষ্য অর্জনে বিশ্বের প্রধান প্রধান গ্রীণহাউজ গ্যাস নির্গমণকারী দেশসমূহকে ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রীণহাইজ গ্যাসের নির্গমণ গড় শূণ্য (net-zero) অর্থাৎ গ্রীণহাইজ গ্যাসের শোষণ ও নির্গমণের পরিমান গড় শূণ্য অর্জণের লক্ষ্য এবং সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাস্ম জ্বালানীর ব্যবহার ৫০% নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করা হয়।
প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্থাৎ ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রীণহাউজ নির্গমণ গড় শূণ্য (net-zero) অর্জনে ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাস্ম জ্বালানীর ব্যবহার হ্রাস এবং সবুজ শক্তি (Green or Renewable Energy) উৎপাদন এবং জ্বালানী সাশ্রয়ী যানবাহন (হাইভ্রিড গাড়ী), সৌরশক্তি চালিত গাড়ী) এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও সবুজ শক্তি উৎপাদনের প্রাচুর্য দেশসমূহে জীবাস্ম জ্বালানী ব্যবহৃত গাড়ীর পরিবর্তে বৈদ্যুতিক গাড়ীর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বৈদ্যুতিক গাড়ীসমূহ যাতে সড়কে সহজেই রিসার্জ হতে পারে এবং এ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ চালিত গাড়ী জনপ্রিয় করার মাধ্যমে ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রীণহাউজ গ্যস নির্গমণে গড় শূণ্য অর্জণে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে হোলসিম এবং ম্যাগমেন্ট যৌথভাবে এমন একটি বৈদ্যুতিক রাস্তা তৈরি করতে যাচ্ছে।
সিমেন্ট জায়ান্ট হোলসিম এবং জার্মান স্টার্ট-আপ কোম্পানী (Startup company) মেগমেন্ট যৌথভাবে এমন একটি বৈদ্যুতিক রাস্তা তৈরি করতে কাজ করেছে যা ইন্ডাকটিভ চার্জিংয়ের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক যানকে চলার গতিতে চার্জ করতে সক্ষম হবে।
হোলসিম এবং ম্যাগমেন্টের গবেষণা ও উন্নয়ন দল এর জন্য এক অনন্য কংক্রিট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যার মধ্য দিয়ে উচ্চ চৌম্বকীয় শক্তি চলাচল করতে সক্ষম।
এই যুগান্তকারী কংক্রিট-ভিত্তিক সড়কে বৈদ্যুতিক যানবাহনের অটো চাজিং প্রক্রিয়াটি সড়কের পাশে চার্জিং স্টেশনে বৈদ্যুতিক চার্জিং এর প্রয়োজনীয়তা এবং এতদসংক্রান্ত ঝামেলা হ্রাস করবে। এতে গাড়ি রিচার্জ করার সময়ও বাঁচাবে।
গবেষকরা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানার পারডু ইউনিভার্সিটি (Purdue University) তে প্রযুক্তিটির পরীক্ষা চালাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রায়োগিক বিষয়গুলো যেমন যানবাহনের রোবট এবং ফর্কলিফ্টগুলো (robots and forklifts) বৈদ্যুতিক রিচার্জ করার জন্য সড়কের মেঝের উন্নয়নও বেশ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
ম্যাগমেন্ট জিএমবিএইচ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মৌরিসিও এসগুয়েরা বলেছেন, “হোলসিমের মতো বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবনী এবং টেকসই প্রযুক্তির নেতৃত্বদারকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজে করতে পেরে আমরা গর্বিত।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের চৌম্বকীয় কংক্রিট প্রযুক্তির উচ্চতর গ্রেডগুলো বিকাশের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতের টেকসই, বৈদ্যুতিক পরিবহনের জন্য একটি মূল সক্ষমকারী হব।”
হোলসিমের গ্লোবাল ইনোভেশন সেন্টারের প্রধান এডেলিও বারমেজো বলেছেন, “হোলসিমে আমরা বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে কার্বণ নির্গম গড় শূণ্য (net-zero) অর্জনের লক্ষ্যে এ ধরনের চৌম্বকীয় কংক্রিট উদ্ভাবন করছি।”
তিনি বলেন, “ম্যাগমেন্টের সাথে আমরা বৈদ্যুতিক গতিশীলতা ত্বরান্বিত করার জন্য কংক্রিট সমাধানগুলোর উন্নয়ন করতে পেরে উত্তেজিত। সারা বিশ্ব জুড়ে স্টার্ট-আপগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমরা টেকসইতা অর্জণের পথে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উদ্ভাবনের সীমানাকে ক্রমাগত ঠেলে দিচ্ছি।”
তিনি আরো বলেন, ”হোলসিম বিশ্বজুড়ে ১২০ টিরও বেশি উদ্ভাবনী স্টার্ট-আপের সাথে কাজ করছে যা বিশ্বের কার্বণ নির্গম গড় শুণ্য অর্জণে আমাদের নতুন প্রযুক্তির অগ্রগামী ত্বরান্বিত করতে কাজ করছে।”
উদ্ভাবনী এবং টেকসই বিল্ডিং সলিউশনে বিশ্বব্যাপী নেতা হিসেবে, হোলসিম বিশ্বজুড়ে সবুজ শহর, স্মার্ট অবকাঠামো এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করার আশা করে।