ঋতুবৈচিত্র্য ছন্দপতনে টালমাটাল বাংলাদেশের পরিবেশ
শুধু অতিরিক্ত গরমই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুবৈচিত্র্যে ছন্দপতন ছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে মারাত্মক হুমকির মুখে বাংলাদেশ।
এজন্য উন্নত দেশগুলোর সীমাহীন গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণকে দায়ী করে চলতি শতাব্দিতেই বিশ্বজুড়ে গড় তাপমাত্রা দুই দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। যা সত্যি হলে, নিম্নাঞ্চল ডুবে যাওয়া, খাদ্যসঙ্কটসহ আরও অনেক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে বাংলাদেশকে।
অর্থনৈতিক সংকট ও যুদ্ধ-বিগ্রহের বাইরে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সব চেয়ে বড় আতঙ্কের নাম জলবায়ু পরিবর্তন। যার সবশেষ ভুক্তভোগী সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় টালমাটাল আরবের এই শহর।
শুধুই কি দুবাই? আবহাওয়ার বিরূপ রূপের প্রভাবমুক্ত নয় কোনো দেশই। কোথাও প্রচণ্ড খরায় সৃষ্ট দাবানল পুড়িয়ে দিচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর বনভূমি। কোথাও ভয়াবহ তুষারপাতে বিপর্যস্ত জনজীবন।
আবার শীতপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। মেরু অঞ্চলের বরফ গলা ও সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধিতো আছেই। এ যেন আবহাওয়ার বড় এক ছন্দপতন।
বাংলাদেশকে কাগজে-কলমে ষড়ঋতুর দেশ বলা হলেও ঋতুগুলোর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য অনেক আগে থেকেই হুমকির মুখে। শীত, বর্ষার আক্ষেপতো আছেই, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে উঠেছে গ্রীষ্ম।
বছরের এই সময়টাতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি স্বাভাবিক বিষয় হলেও এখনকার গরমে যেন নাভিশ্বাস অবস্থা। শহর গ্রাম কোথাও নেই দুদণ্ড শান্তি। প্রকৃতির রুক্ষতায় অতিষ্ট প্রাণ-প্রকৃতি। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই কি এমন টালমাটাল অবস্থা?
আবহাওয়া অধিদফতরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রধান আবহাওয়াবিদ ড. শামীম হাসান ভূইয়া বলেন, কার্বন নিঃসরণ এবং ক্লোরো-ফ্লুরো-কার্বনের কারণে তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করার জন্য এটা একটা বড় ব্যাপার।
বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে একদিকে যেমন শীতের সময়কাল কমে আসছে অন্যদিকে দীর্ঘ হচ্ছে গ্রীষ্ম ও তীব্র হচ্ছে গরম। আর এই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ গ্রিন হাউস গ্যাসের বিরূপ প্রতিক্রিয়া। বিশ্বের উন্নত ও অগ্রসরমান উন্নয়নশীল দেশগুলো এই গ্যাস উৎপাদনে দায়ী হলেও ক্ষতিকর ফল ভোগ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, স্বাভাবিক তাপমাত্রার তুলনায় এখন বিশ্বে গড় তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রির মতো বেড়েছে। এই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়াতে বিরাট পরিবর্তন হবে।
বৃষ্টির সময় বদলে যাবে। কালবৈশাখীর সময়কাল বদলে যেতে পারে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের পরিমাণ বাড়তে পারে, জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে, বাড়তে পারে নদী ভাঙনও।
জলবায়ু পরিবর্তন পুরো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের দীর্ঘ বছরের ফল, তবে অতিরিক্ত তাপমাত্রার জন্য দেশে ক্রমাগত বৃক্ষ উজাড়সহ ইট পাথরের শহুরে অবকাঠামোকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। মোকাবিলায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তনকে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি সবুজায়নের ওপর জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে আইনুন নিশাত আরো বলেন, পৃথিবীর প্রতিটি দেশকে দুটি পরিকল্পনা করতে বলা হচ্ছে। একটি হচ্ছে, বিরূপ প্রতিক্রিয়া কী করে মোকাবিলা করা যাবে। আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে গ্রিন হাউস গ্যাস কমানো।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের যে অভিঘাত, এটা আমাদের জন্য একটা অস্তিত্বের লড়াই তৈরি করে দিচ্ছে।
সরকার শুধু আইন করে বা শাস্তি দিয়ে বা অর্থায়নের ব্যবস্থা করে এ সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। এর জন্য সব মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে বিষয়গুলো বুঝতে হবে।
পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন দশকে শুধু ঢাকা উত্তরে সবুজ এলাকা কমেছে ৬৬ শতাংশ।