উচ্ছেদ করতে হবে পলিথিন, বাঁচাতে হবে পরিবেশ
পরিবেশ দূষণ ও ক্ষতির অন্যতম উপকরণ পলিথিন আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা হলেও এর উৎপাদন, বিপনন এবং ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। পলিথিন নিষিদ্ধের বিষয়টি কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
আইনের তোয়াক্কা না করেই এর উৎপাদন চলছে। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদফতর নির্বিকার বসে আছে। অধিদফতরের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই পলিথিন উৎপাদন অব্যাহত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
গত বছর শুধু রাজধানীতেই পলিথিন কারখানা ছিল ৫০০। এক বছরে তা বেড়ে হয়েছে ৭০০। অন্যদিকে সারাদেশে রয়েছে ১৫০০ পলিথিন কারখানা। রাজধানীর সিংহভাগ পলিথিন কারখানা পুরনো ঢাকার অলিগলিতে।
এসব কারখানা চলছে পরিবেশ অধিদফতরের অসাধু কর্মকর্তাদের প্রশ্রয়সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এলাকার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। কারখানার মেশিন প্রতি পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে মাসে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছে তারা।
অভিযোগ রয়েছে, মাঝে মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পলিথিনবিরোধী যে অভিযান চালায় তাতে চাঁদা না দেয়ার বিষয়টি জড়িয়ে আছে। যেসব কারখানা চাঁদা দেয় না শুধু তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়।
দেখা যাচ্ছে, পলিথিনের রমরমা কারবার চলছে পরিবেশ অধিদফতর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের যোগসাজসে।
উন্নত বিশ্বের কোথাও এভাবে পলিথিন ব্যবহার করা হয় না। পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এ উপকরণ অনেক দেশেই নিষিদ্ধ। আমাদের দেশে আইন করে নিষিদ্ধ হলেও তা মানা হচ্ছে না।
আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পলিথিনের শত শত কারখানা বহাল রয়েছে। আইন অমান্যের এমন নজির কোথাও আছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। পলিথিন এমনই এক উপকরণ যে, তা পচে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পলিথিনের তৈরি একটি ব্যাগ পচতে বা নিঃশেষ হতে ৪০০ বছর লাগবে। এই পলিথিন যেখানে পড়ে থাকে সেখানের মাটির উর্বরতা থাকে না। কোনো গাছপালা ও ফসল উৎপাদিত হয় না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিদিন এক রাজধানীতেই দেড় কোটি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেয়া হয়।
বড় বড় শপিং সেন্টার, মার্কেট, কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে পাড়ামহল্লার মুদি দোকান ও রেস্টুরেন্টে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব ব্যাগ যত্রতত্র ফেলার ফলে তা নর্দমা ও ড্রেনে পড়ে পুরো ড্রেনেজ সিস্টেম অকেজো করে দিচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে, ভয়াবহ পানিবদ্ধতা। পলিথিন গিয়ে পড়ছে নদী-নালা, খাল-বিলে।
এতে নদীদূষণের পাশাপাশি সাগরের পরিবেশ ও প্রতিবেশ দূষিত করছে। রাজধানীর প্রাণ হিসেবে খ্যাত বুড়িগঙ্গার দূষণ ও নাব্য হারানোর অন্যতম মূল কারণ এই পলিথিন। কয়েক বছর আগে নাব্য ফেরাতে ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নিয়েও তা সফল হয়নি শুধু পলিথিনের কারণে।
তখন বলা হয়েছিল, বুড়িগঙ্গার তলদেশে প্রায় ছয় ফুট পলিথিনের স্তর রয়েছে। এই স্তর সরিয়ে ড্রেজিং করা সম্ভব নয়। ফলে ড্রেজিং অসমাপ্ত রয়ে যায়। শুধু বুড়িগঙ্গাই নয়, রাজধানীর চারপাশের নদী-নালা এবং জেলা শহরের আশপাশের নদ-নদী অচল হয়ে পড়ছে পলিথিনের কারণে।
অক্ষয় এই উপকরণটি পুরো পরিবেশকে এক বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। হাটে-মাঠে, ঘাটে, পর্যটন কেন্দ্রসহ এমন কোনো স্থান নেই যেখানে পলিথিন পরিবেশ দূষণ করছে না।
বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, পরিবেশ অধিদফতরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জ্ঞাতসারে শত শত পলিথিন কারখানা গড়ে উঠলেও তা বন্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
বরং এসব অবৈধ কারখানাকে কেন্দ্র করে একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বাণিজ্য এবং উদাসীনতার কারণে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে পলিথিন কারখানা।
পলিথিন যে পরিবেশ দূষণ করছে তা নয়, ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের জ্বালানিও হয়ে রয়েছে। পুরনো ঢাকায় যেসব ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটেছে সেগুলোর আগুন ছড়িয়ে দিতে পলিথিনের ভূমিকাও রয়েছে।