২২ এপ্রিল, বিশ্ব ধরিত্রী দিবস- ২০২১
১৯৭০ সাল হতে প্রতি বছর ২২ এপ্রিল, দরিত্রী দিবস হিসাবে পালন করা হচ্ছে। এ বছর ধরিত্রী দিবসের ৫০তম উৎযাপন।
এবার ধরিত্রী দিবসটি এমন এক সময় পালিত হচ্ছে যখন পুরো বিশ্ব কোভিধ -১৯ মহামারীতে বিপর্যস্ত। তাই আন্তর্জাতিকভাবে ভার্চুয়ালী এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড আর্থডে নেট ওর্য়াক অর্গাইজেশন কর্তৃক বিশ্ব ধরিত্রী দিবসের জন্য প্রতিপ্রাদ্যটি নির্বাচন করা হয়েছে: পৃথিবী পূনরুদ্ধার করুন (Restore the Earth), যা আগামী একবছর পর্যন্ত বলবত থাকবে।
এ বছর বিশ্ব ধরিত্রী দিবসের অন্যতম তাৎপর্য হলো মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি ভার্চুয়াল জলবায়ু সম্মেলন (a global climate summit) আয়োজন করেছেন, যেথায় অংশগ্রহনের জন্য বিশ্বের ৪০ জন সরকার/রাষ্ট্র প্রধানদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
আমন্ত্রিত ৪০ জন সরকার/রাষ্ট্র প্রধানদের মধ্যে বাংলাদেশর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রয়েছেন এবং গত ০৯ এপ্রিল, ২০২১ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট জো বাইডেনের আমন্ত্রণপত্র সরাসরি পোঁছে দেওয়ার জন্য কয়েক ঘন্টার সফরে বাংলাদেশে আসেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের ৪৮ টি দেশের সংগঠন Climate Vulnerable Forum (CVF) এর বর্তমান সভাপতি হিসাবে এ ভার্চূয়াল সম্মেলনে শেখ হাসিনার অংশ গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্ববহ।
সম্মেলনটি ২২ ও ২৩ এপ্রিল ২ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও এ ভার্চুয়াল সম্মেলনে দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়া হতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভূটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
কোভিধ-১৯ মহামারীতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিকভাবে পুর্যদস্ত বর্তমানে পৃথিবীর এ নাজুক সময়ে ”পৃথিবী পূনরুদ্ধার করুন” – প্রতিবাদ্যটি অত্যন্ত অর্থবহ এবং তাৎপর্যপূর্ণ।
তাহলে এ ধরা তলে জীবনের অস্তীত্ব টিকিয়ে রাখতে পুর্যদস্ত ধরাটিকে পূনরুদ্ধার করতে হবে কিভাবে?
• আমাদের পৃথিবীটি পুনরুদ্ধার হতে পারে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় এবং উদীয়মান সবুজ প্রযুক্তিতে মনোনিবেশের মাধ্যমে। এতে বিশ্বের বাস্তুতন্ত্র (ecosystems) পুনরুদ্ধার হতে পারে।
• প্রাকৃতিক ভিত্তিক বিনিয়োগের মাধ্যমে বিগত শতাব্দীর ভারী-কার্বন এবং শিল্প প্রবণতাটিকে হ্রাস করে এমন একটি গ্রহ তৈরি করা যেখানে মানুষ প্রকৃতির সাথে কাজ করবে, এর বিপরীতে নয়।
এর মধ্যে রয়েছে ভূমি ব্যবস্থাপনা (Soil management), বনজ সংরক্ষণ (Soil management) ও প্রজাতি সংরক্ষণ (species conservation)। আমাদেরকে র্কাবন ভিত্তিক উৎপাদন পরিহার করে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় এবং উদীয়মান সবুজ প্রযুক্তিতে মনোনিবেশ করতে হবে।
• “পৃথিবী পুনরুদ্ধার” উপপাদ্যটি সরাসরি COVID-19 মহামারীর সাথে সম্পর্কযুক্ত। COVID-19 খুব সম্ভবত বন্যজীবনে উদ্ভূত হয়েছে, মানব-বন্যজীবনের মিথস্ক্রিয়া (human-to-wildlife interactions) থেকে ছড়িয়ে পড়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড় এবং অন্যান্য আবাস ধ্বংসগুলো বন্যজীবের সাথে মানুষের যোগাযোগ বাড়ায়। তাই বনজঙ্গল হতে মানুষকে দূরে থাকতে হবে, বনজঙ্গলে মানব জাতির পদচারণ বন্ধ করতে হবে।
• আর্থ ডে নেটওয়ার্কের সভাপতি ক্যাথলিন রজার্স বলেছেন, “বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছে যে আমরা যদি গ্রহের ভাল যত্ন না নেই তবে আমরা মানব জাতির জন্য আরও সর্বনাশের জন্য অপেক্ষা করছি। আরও অধিক ও মারাত্মকভাবে ভাইরাসগুলো এ পৃথিবীতে মানব জাতির অস্তিত্বকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে।
কিভাবে অধিক ও মারাত্মকভাবে ভাইরাসগুলো এ পৃথিবীতে মানব জাতির অস্তিত্বকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে তা ভাল করে বুঝতে নীচের আর্টিকেল ২টি পড়া যেতে পারে।
জলবায়ুর পরিবর্তন: কভিড-১৯ করোনাভাইরাস দিয়ে মানব জাতির লড়াই মাত্র শুরু- আরও অনেকগুলো মহামারী আসছে
এবং
জলবায়ু পরিবর্তন কিভাবে নতুন মহামারীর আর্বিভাব ঘটাতে পারে?
মানবজাতিকে ভাইরাসের আক্রমণ হতে রক্ষা করতে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ুর পরিবর্তণ প্রতিহতের কার্যক্রম গ্রহন করতে হবে।
• আমাদের পৃথিবীটা নিজেই স্বয়ং প্রচুর পরিমাণে কার্বন সংরক্ষণ করতে সক্ষম। কিন্তু এই কার্বন ডুবগুলো (carbon sinks) ক্রমাগতভাবে মানুষের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে।
যেমন, সমুদ্র উত্তাপ গ্রহণ করে জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রতিহত করছে এবং বনভূমিগুলো গাছের মাধ্যমে কার্বণ শোষণ করে বিশাল কার্বন ডুবাকে কার্বন উৎসে পরিণত করছে। আমাজন রেইন ফরেস্ট এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অথচ মানুষ সমুদ্রকে অনবরত দূষিত করছে এবং বনভূমিগুলোকেও ধ্বংস করছে, গ্রাস করছে।
তাই পৃথিবীকে দূষণমুক্ত করতে হবে, বনভূমি রক্ষা করতে হবে, ধ্বংস প্রাপ্ত, গ্রাসকৃত বনভূমি পুনরুদ্ধার করা কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে।
• বিশ্ব পুনরুদ্ধারের অর্থ জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারও। গত বছর প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে প্রকৃতির অবক্ষয় “নজিরবিহীন” এবং বিশ্বে ১ মিলিয়ন প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কেবল হুমকী এবং বিপন্ন প্রজাতিদেরই রক্ষা করে না -এটি পৃথিবীকেও সংরক্ষণ করে: লক্ষ লক্ষ প্রজাতির আবাস হল জলে, স্থলে এবং বাতাসে।
আমাদের কতব্য এ পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা ও হারিয়ে যাওয়া জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের কর্মসূচী গ্রহন করা।
• পৃথিবী নামক আমাদের বশত বাড়িটি রক্ষা করতে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের, প্রতিটি দেশের একসাথে কাজ করা দরকার।
জলবায়ু পরিবর্তন বা করোনভাইরাস হিসাবে বৃহত্তর এবং ধ্বংসাত্মক হুমকির বিরুদ্ধে কেবলমাত্র একটি ঐক্যফ্রন্ট আর তা হলো মানব ঐক্যফ্রন্ট দীর্ঘমেয়াদে এ পৃথিবীতে মানবজাতীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এই গ্রহের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারে।
• ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক স্যার ডেভিড কিং বলেছেন, “বর্তমান মহামারীটি বিশ্বের অর্থনীতি পঙ্গু করে দিয়েছে এবং বিপুল সংখ্যক মৃত্যুর কারণ ঘটাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের বিশ্ব সভ্যতার জন্য একটি অস্তিত্বের হুমকি।
এই দুটি চ্যালেঞ্জের কোনটাই কোন দেশের সীমান্তে সীমাবদ্ধ নয়। উল্লেখ্য যে, অধ্যাপক স্যার ডেভিড কিং টনি ব্লেয়ার এবং গর্ডন ব্রাউনয়ের অধীনে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাই জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে আন্তর্জাতিক ভাবে চিন্তা করতে হবে।
তাই এ পৃথিবীতে মানবজাতীর অস্তিত্ব রক্ষায় পরিবেশ দূষণ এবং জলবায়ুর পরিবর্তণ রোধে বিশ্ববাসীর কাছে আর কোন বিকল্প নাই।
• “পৃথিবী পুনরুদ্ধার” উপপাদ্যটির ঘোষণাটি আসে কোভিড-১৯ মহামারীটি ধরিত্রী দিবসের ৫০তম বার্ষিকী অনলাইনে উদযাপনের বাধ্য করার প্রাসঙগিকতায়।
তারপরও প্রথম ডিজিটাল বিশ্ব ধরিত্রী দিবসটি পালনে বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ এবং অগণিত সেলিব্রিটি, বিজ্ঞানী, শিল্পী এবং কর্মীর আগ্রহের জুড়ি নেই। আমাদেরকে একইভাবে আগ্রহী হতে হবে।
• জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যাগুলো আমাদের প্রাকৃতিক ব্যবস্থাটিকে ভেঙে দিয়েছে, যার ফলে নতুন এবং মারাত্মক রোগ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তন এবং করোনভাইরাস আমাদেরকে যে ক্ষতির কারণ ঘটিয়েছে তা যন্ত্রণাদায়কভাবে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমাদের পৃথিবী পুনরুদ্ধার করে আমাদেরকে এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার পথ তৈয়ার করতে হবে।
Courtesy: World Earth Organization