অনেক দ্রুতগতিতে গলছে বিশ্বের সব হিমবাহ
বিশ্বের হিমবাহগুলো গত বছর অনেক দ্রুতগতিতে গলেছে এবং এগুলো রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। শুক্রবার জাতিসংঘ প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের সূচকগুলো আবার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) তথ্য অনুযায়ী, গত আট বছর ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম। কার্বন ডাই–অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
ডব্লিউএমওর বার্ষিক জলবায়ু পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রে বরফের স্তর সর্বনিম্ন মাত্রায় পৌঁছেছে। এ ছাড়া ইউরোপের হিমবাহগুলো এতটাই গলছে যে অনেক হিমবাহ তার অস্তিত্ব হারাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও রেকর্ড পরিমাণ বাড়ছে। ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ৪.৬২ মিলিমিটার পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, যা ১৯৯৩ থেকে ২০০২ সালের দ্বিগুণ। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টিও রেকর্ড করা হয়েছে।
২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি অনুসারে, এই শতাব্দীর শেষে বিশ্বের তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার চেষ্টার কথা বলা হয়। ডব্লিউএমওর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে বিশ্বে গড় তাপমাত্রা ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের গড় থেকে ১.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। গত আট বছরে লা নিনা পরিস্থিতি বিরাজ করার পরও বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি।
ডব্লিউএমওপ্রধান পেটারি তালাস বলেন, ‘গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের কারণে সৃষ্ট চরম আবহাওয়া ২০৬০ সাল পর্যন্ত চলতে পারে। আমরা ইতিমধ্যে এত বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ করে ফেলেছি যে কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর ধাপগুলো পার করতে কয়েক দশক লেগে যাবে।’
বিশ্বের ৪০টি হিমবাহে গড়ে ১.৩ মিটার পর্যন্ত বরফ গলে যেতে দেখেছেন গবেষকেরা, যা গত দশকের চেয়েও অনেক বেশি। ১৯৭০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩০ মিটার পাতলা হয়েছে।
ইউরোপে আল্পস পর্বতমালা হিমবাহ গলেছে সবচেয়ে বেশি। এর কারণ হিসেবে শীতকালে তুষারপাত কম হওয়া ও মে থেকে সেপ্টেম্বরের দাবদাহকে দায়ী করা হয়।
তালাস বলেন, ‘আমরা হিমবাহ গলে যাওয়া ঠেকানোর লড়াইয়ে হেরে গেছি। কারণ, আমাদের কার্বন ডাই–অক্সাইডের ঘনত্ব বেড়ে গেছে। গত গ্রীষ্মে আল্পসে ৬.২ শতাংশ হিমবাহ গলেছে, যা এখন পর্যন্ত রেকর্ড।’
তবে তালাস কিছু আশার বাণীও শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এখনো সাশ্রয়ী হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে সাশ্রয়ী হচ্ছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে উন্নত পদ্ধতি তৈরির পথে হাঁটছে বিশ্ব।
তালাস বলেন, ২০১৪ সালের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল বৈশ্বিক উষ্ণতা ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি বাড়তে পারে। কিন্তু আমাদের এখন ২.৫ থেকে ৩ ডিগ্রি নিয়ে লড়াই করতে হবে। ১.৫ ডিগ্রির লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব। তা করা সম্ভব হলে বিশ্ব অর্থনীতি ও মানুষের জন্য ভালো হবে।
তালাস আরও জানান, বিশ্বের ৩২টি দেশ গ্রিনহাউস নির্গমণ কমিয়েছে এবং তাদের অর্থনীতি এখন বাড়ছে।