42.2 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
বিকাল ৪:৫৫ | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
মাটির নীচে, সূর্যের আলোয় আর্থ হাউস
প্রাকৃতিক পরিবেশ

মাটির নীচে, সূর্যের আলোয় আর্থ হাউস

মাটির নীচে, সূর্যের আলোয় আর্থ হাউস

সুইজারল্যান্ডের স্থপতি পেটার ভেচ গত ৫০ বছর ধরেই প্রকৃতির মধ্যে বাড়িঘর তৈরি করে আসছেন৷ গোটা ইউরোপজুড়ে তিনি প্রায় একশটি ‘আর্থ হাউস’ তিরি করেছেন৷ যেমন মাটির ঢিপির মধ্যে ভবন৷ কাজের পরিবেশ ভালো৷ জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি সবুজের সমারোহও বাড়তি আকর্ষণ৷

পেটার ভেচ বলেন, ‘এই নির্মাণ পদ্ধতিতে আমার অনেক কম উপাদানের প্রয়োজন হয়৷ নিখুঁত পরিমাপও চাই না৷ একেবারে সেন্টিমিটার ধরে কাজ করতে হয় না, বরং অনুভূতি অনুযায়ী লাগালেই চলে৷ শিশুরা যেমন বালুর স্তূপে দূর্গ বানায়৷ সৃজনশীলতা দেখিয়ে তোরণ কিছুটা উপরে রাখা যায়৷’



পেটার ভেচ কংক্রিট দিয়েই তাঁর ‘আর্থ হাউস’ তৈরি করেন৷ অন্য স্থপতিরা সাধারণত প্রাকৃতিক উপাদানই বেশি ব্যবহার করেন৷ ভবন ও প্রকৃতির মধ্যে বিভাজন প্রায় চোখেই পড়ে না৷ সেগুলি প্রকৃতিরই অংশ হয়ে ওঠে৷ পেটার বলেন, ‘যেমন এখানে ৫০ সেন্টিমিটার পুরু মাটির স্তর রয়েছে, উপর দিকে এক মিটার, ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ঢাকা রয়েছে৷ এর ফলে অনেক সবুজ অংশ পাওয়া যায়, অনেক কম অংশ সিল করতে হয়৷ আমরা আবার গাছপালার জায়গা সৃষ্টি করতে পারি৷’

কংক্রিটের জঙ্গলের বদলে সবুজ ঢিপি৷ কিন্তু বাইরেটা এমন হলেও মাটির নীচের ভবনের ভেতরে আলো, শীতাতপ ও উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ কতটা কার্যকর হয়?

গেয়ার্ড হানসেনও প্রায় ৩০ বছর ধরে ‘আর্থ হাউস’ নির্মাণ করছেন৷ তিনি কংক্রিটের বদলে মাটির মোড়কে ঢাকা কাঠের মডিউল ব্যবহার করেন৷ গেয়ার্ড বলেন, ‘ভবনটি আসলে ‘প্যাসিভ হাউস’ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে৷ অর্থাৎ খুব ভালো জানালা, খুব ভালো ইনসুলেশনও রয়েছে৷ তবে মাটিও ভবনটির তাপমাত্রার উপর বড় প্রভাব রাখে৷ নীচের দিকে চার মিটার ‘স্লোপ এমব্যাংকমেন্ট’ রয়েছে৷ ছাদের উপর শুধু সবুজের স্তর নয়, বেশ পুরু মাটির স্তর রয়েছে৷ ফলে গ্রীষ্মে ভেতরে মনোরম শীতল পরিবেশ থাকে৷ আর শীতকালেও বেশি হিটিংয়ের প্রয়োজন হয় না৷ হিটিংয়ের জন্য নামমাত্র ব্যয় হয়৷’

আনা ক্নর ছয় বছর ধরে সপরিবারে এমন এক ‘আর্থ হাউস’-এ বাস করছেন৷ প্রথম দর্শনেই তিনি সেই ভবনের প্রেমে পড়েছিলেন৷ ভবনটি দশ মিটার চওড়া এবং মাটির নীচে শিকড় ও পানি নিরোধক বিশেষ মোড়ক দিয়ে ঢাকা৷ সামনে ও পেছনদিকে তিনটি করে কাচের স্তরের বিশাল জানালা রয়েছে৷ ‘আর্থ হাউস’-এর মালিক আনা ক্নর বলেন, ‘নির্মাণের সময় বাসাটি হয়তো কিছুটা অন্ধকার হবে বলে আমাদের মনে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল৷



আমার মতে, ‘আর্থ হাউস’ শব্দটি শুনলে সবার আগে মানুষের মনে সেই বিষয়টি ভেসে ওঠে৷ মনে হয় অন্ধকার ও বদ্ধ জায়গা৷ কিন্তু এখানে যথেষ্ট আলো আছে এবং ভবনটি স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত৷’

হানসেন নামের নির্মাণ কোম্পানি ভবনটির কাঠের মোড়ক সরবরাহ করেছে৷ কোম্পানি সেটি বসানোর দায়িত্বও নিয়েছে৷ ক্নর পরিবার ভবনের ভেতরের কাজ নিজেরাই করেছে৷ ফলে শেষ পর্যন্ত প্রথাগত পারিবারিক ভবনের তুলনায় অনেক বেশি ব্যয় হয়েছে৷

কিন্তু বাস্তবে মাটির স্তরের নীচে বাস করার অভিজ্ঞতা কেমন? আনা ক্নর মনে করেন, ‘ভবনের ছাদ যে ভালো সেটা আমরা টের পাই, কারণ জ্বালানি ও হিটিংয়ের ব্যয় খুব কম৷ হিটিং ও গরম পানির জন্য মাসে ৬০ ইউরো মাসুল গুনতে হয়৷ মাটি দিয়ে ঢাকা থাকায় আমাদের বাড়ি দ্রুত গরম হয়ে ওঠে না৷ মাটির স্তর শীতকালেও আমাদের উষ্ণতা দেয়৷’

ঢিপির মধ্যে এমন ইনসুলেটেড ভবন সাধারণ জ্বালানি ব্যয়ের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ সাশ্রয় করে৷ সেইসঙ্গে মাটির স্তর বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে ভবনের কার্বন ফুটপ্রিন্টও কমিয়ে দেয়৷ আনা ক্নর মনে করিয়ে দেন, খননের সময়ে যে মাটি তোলা হয়েছিল, সেগুলি ছাদের উপর ছড়িয়ে তার উপরটা সবুজ করে তুলেছি৷

আনা ক্নর ‘আর্থ হাউস’-এ থাকার একাধিক সুবিধা টের পাচ্ছেন৷ তবে এমন ভবনে একাধিক তলা রাখা সম্ভব নয়৷ কারণ সে ক্ষেত্রে অ্যাংগেল অত্যন্ত খাড়া হতো, তার উপর মাটি ঢালা সম্ভব হতো না৷

‘আর্থ হাউস’ জার্মানিতে এখনো অত্যন্ত বিরল৷ কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা, জ্বালানি সাশ্রয়, নির্মাণের ক্ষতিপূরণের মতো বিষয় ভবিষ্যতে মডেল হয়ে উঠতে পারে৷

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত