নানা উদ্যোগেও কমছে না বায়ুদূষণ বরং বিগত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ এবং ঢাকা প্রথম স্থানেই আছে
সরকার নানা উদ্যোগের কথা বললেও কমছে না বায়ুদূষণ। বরং প্রায় প্রতিদিনই শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসছে ঢাকা। আজ ১০ জানুয়ারি ২০২১ ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আগের সব রেকর্ড প্রায় ছাড়িয়ে আজ দূষণের মানমাত্রা উঠেছিল ৫০২ এ এবং তার সূচক ঊদ্ধমূখী। যা চলতি বছর তো বটেই, গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর মানমাত্রা বেশী ছিল কবে তাও উঠেছিল ৪৩০ এ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’-এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর পৌনে এক টা পর্যন্ত গড়ে ঢাকার অবস্থান প্রথম স্থানেই আছে এবং দূষণের মাত্রা গড়ে ৫০২ পর্যন্ত উঠেছিল বং তার সূচক ঊদ্ধমূখী ছিল।
বায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আবহাওয়াকে তারা দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন। এখনই দূষণ কমাতে পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
দুপুর ১.১৫ মিনিটের পরে কিছুটা কমে এখন ২২২-এ এসে দাঁড়িয়েছে এবং তারপরও ঢাকা এখনও প্রথম স্থানেই আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৬ ধরনের পদার্থ এবং গ্যাসের কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা সম্প্রতি অনেক বেড়ে গেছে। এরমধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা অর্থাৎ পিএম দুই দশমিক পাঁচের কারণেই ঢাকায় দূষণ অতিমাত্রায় বেড়ে গেলেই পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে।
কেন দূষণের মাত্রা এত বেশি জানতে চাইলে বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘দূষণের মাত্রা অনেক বেশি এখন। এটা আরও ক’দিন এমনই থাকবে। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, এতদিন আমরা বাইরে থেকে আসা বাতাসের সঙ্গে ধুলোবালিকেই দায়ী করেছি বেশি।
তবে আজকের বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। আজ পুরো দূষণের কারণ অতি স্পষ্ট আর সেটি হচ্ছে আমাদের নিজেদের দূষণ। বড় প্রকল্পের কাজ, যানবাহনের ধোঁয়া, আবর্জনা পোড়ানোর ধোঁয়াই মূলত দায়ী। এগুলো বন্ধ করে দ্রুত বড় রাস্তাগুলোতে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা দরকার এখনই। নইলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নিবার্হীসহ সভাপতি আব্দুল মতিন বলেন, ‘দূষণ কেন হয়, দূষণ রোধে কি কি করতে হবে তা আমরা যেমন জানি, সরকারও জানে। গণমাধ্যমে বহুবার বহুদিন এসব নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। আসল বিষয় হচ্ছে সরকার এটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে কিনা। নইলে সবই সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সরকার চাইলেই রোধ করা সম্ভব। বায়ু দূষণ রোধে অগ্রাধিকার দিয়ে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। এর বিকল্প আর কিছু নেই।’
সরকারের পক্ষ থেকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান জানান, ‘আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা টিম করেছি আর সেই টিমের মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে। দূষণ রোধে প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
এছাড়া দূষণ রোধে শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয় একা একা কাজ করলে হবে না, তাই দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গেও কয়েক দফা সভা করেছি আমরা।’
রাস্তায় পানি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়েও কাজ চলছে। দূষণ শুধু আমাদের জন্যই হয় তা নয়, বাইরে থেকেও বাতাসের সঙ্গে ধূলিকণা আসে। এতেও আমাদের দূষণ বেড়ে যায়। আমরা দূষণ কমিয়ে আনতে যা যা করার দরকার তা করছি।’