সিলেটের জাফলংয়ের প্রতিবেশ-সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) সেই জায়গায় পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেশের প্রথম ‘ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর’ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশনাসংবলিত একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে পাথর তোলার প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে বিএমডি চিঠি দিয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনকে এ পরিকল্পনার তথ্য জানিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুস সাকিব প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, ২০১২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় জাফলংকে ইসিএ ঘোষণার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাফলংকে ইসিএ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। ২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি জাফলংকে ‘ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য’ ঘোষণা করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে জাফলংয়ের ২২ দশমিক ৫৯ একর জায়গাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়।
‘মেসার্স জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গত ১৭ আগস্ট একটি চিঠি দিয়ে জাফলংয়ে ইসিএ ও ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা ১৯৭২ সালে অধিগ্রহণ করা দাবি করে সম্প্রতি উচ্চ আদালতের আদেশে পাথর তোলার প্রস্তুতি শুরু করে। সেখানে সাইনবোর্ড টাঙানোর পর ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় ‘চলছে পাথর তোলার প্রস্তুতি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।
বিএমডি সূত্র জানায়, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএমডির মহাপরিচালক মো. জাফর উল্লাহ সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে চিঠির মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবহিত করেছেন।
মহাপরিচালকের চিঠিতে বলা হয়, জাফলং ইসিএ–ভুক্ত এলাকা ছাড়াও ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় একটি ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর স্থাপন করা হবে। মেসার্স জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনসহ আরও একটি প্রতিষ্ঠানকে ওই স্থানে পাথর উত্তোলন থেকে বিরত থাকতে হবে। ‘খনি ইজারা’ নিয়ে জাফলংয়ের সোনাটিলাসহ আশপাশের এলাকায় পাথর উত্তোলন করা হলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নির্দিষ্ট করে ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর স্থাপন প্রসঙ্গে চিঠিতে আরও বলা হয়, জাফলংয়ের ওই স্থানে উন্মুক্ত শিলাস্তর, চুনাপাথর সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য জাতীয় স্বার্থে ২৫ দশমিক ৫৯ একর ভূমিকে ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ঘোষণা করা হয়েছে। ওই ভূমিতে আন্তর্জাতিক মানের একটি ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর নির্মাণ করা হবে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাদুঘর নির্মাণে ইতিমধ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ জাদুঘর দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হবে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ও সরকারের গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিএমডি আইনিভাবে মোকাবিলার প্রস্তুতিও নিয়েছে।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাটের ইউএনও মো. নাজমুস সাকিব প্রথম আলোকে বলেন, বিএমডির মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত চিঠিটি বৃহস্পতিবার পাঠানো হয়েছে। এ চিঠি পেয়ে বিএমডির কাজে সার্বিক সহায়তা করতে উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি রয়েছে।
এদিকে বিএমডির চিঠির বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করছেন জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফসার উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় জাফলংয়ে অধিগ্রহণ করা জায়গায় অবস্থান নিয়েছি। সরকারকে আমরা টাকা দিয়ে ভূমির অধিগ্রহণ করেছি। সেখান থেকে পাথর তুললে এ জন্যও রেন্ট (টাকা) দেওয়া হবে। এখন এই জায়গা যদি সংরক্ষিত হয়, তাহলে অবশ্যই আমাদের অধিগ্রহণ করা ভূমির ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টি সুরাহা করতে হবে।’