জঙ্গলের ভারসাম্য বজায় রাখার লক্ষ্যে বনকর্মীদের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র কিনছে বনদপ্তর
জঙ্গল রক্ষায় এবার অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র কেনার পরিকল্পনা করছে বনদপ্তর। কোর এরিয়ায় (Core Area) পাহারার জন্যই এরকম পদ্ধতি। বাইরের অংশের জন্য আরেক ধরনের নিরাপত্তার বলয়।
শুধু কোর এলাকার জন্য SLR, AK-56, AK-47 এর মতো আগ্নেয়াস্ত্র কেনার সিদ্ধান্তে দ্রুত কাজ করছে বনদপ্তর। বাইরের অংশের জন্য থাকবে টানা পুলিশি টহল। দফায় দফায় সেটা বাড়ানো হবে।
জঙ্গলের প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি পাথর, প্রতিটি ধাপের গাছ জঙ্গলের ভারসাম্য রক্ষার জন্য জরুরি। একইভাবে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জঙ্গলের প্রাণীরাও। তাদের জীবনেরও নির্দিষ্ট এক শৃঙ্খলা রয়েছে। এর মধ্যে যে কোনও একটির অভাব ঘটে গেলে নষ্ট হতে শুরু করে ইকো-সিস্টেম। বন দপ্তরের কাছে ইতিমধ্যে অনেক অভিযোগ জমা পড়ছে।
জঙ্গলের ভিতর থেকে রাস্তা বা তার আশপাশে পাথরের ভাগ কমে যাচ্ছে। খুবই স্পষ্টভাবে চুরির অভিযোগ সামনে এসেছে। একইভাবে গাছ চুরির খবরও মিলছে বিভিন্ন বনাঞ্চল থেকে। মূলত উত্তরবঙ্গের জঙ্গল বা তার লাগোয়া নদী তীরবর্তী এলাকায় পাথর চুরির ঘটনা বেড়েই চলেছে।
আর গাছ চুরির ঘটনা বেড়েছে রাঢ়বঙ্গ থেকে শুরু করে সুন্দরবনের অনেকাংশে। তা ছাড়া এইসব এলাকা থেকেই প্রায়শই পাচারকারীর হামলার খবরও পাওয়া যায়। আপাতত তাই পাহারাদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। ধীরে ধীরে প্রত্যেক পাহারাদারের হাতে তুলে দেওয়া হবে আধুনিক সব অস্ত্র।
জঙ্গলের ইকো সিস্টেম নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বনদপ্তরের আধিকারিকরা বলছেন, বন্যপ্রাণীরা জঙ্গলে শিকারের খোঁজে বা কোনও বিপদে পড়ে বাঁচতে দৌড়তে থাকে। রাস্তা বা জঙ্গলের ভিতর থেকে পাথর তুলে নিলে তাদের অনেক ক্ষতি হতে পারে।
উদাহরণ হিসাবে বলা হয়েছে যে, ধরা যাক, একটি বাঘ বা হাতি কিংবা বাইসন দৌড়ে কোথাও যেতে চাইছে, বা কাউকে ধাওয়া করেছে। সেই পথে থেকে আচমকা পাথর তুলে নেওয়া হয়ে থাকলে যে গর্ত তৈরি হবে, সেই গর্তে পড়ে গিয়ে সেই প্রাণীর ক্ষতি এমনকী জীবনহানিও হতে পারে।
কোনও হিংস্র জন্তুর শিকার হওয়ার হাত থেকে বাঁচতেও অনেক ক্ষেত্রে ছোট জীব-জন্তু পাথরের আশ্রয়ে লুকোয়, কিংবা দৌড়ের সময় অসমান পথে পাথরের সামনে গিয়ে পড়লে, সেখানেই থমকে দাঁড়াতে পারে হিংস্র জন্তুটি। এমন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে জঙ্গলের পাথর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া যেসব জঙ্গল থেকে গাছ চুরি হচ্ছে, সেই এলাকা চিহ্নিত করতে গাছে চিহ্ন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে কী গাছ, কোন এলাকা থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে তা বোঝা যাবে।
সেই সাথে কাঠ চেরাইয়ের কারখানায় সেসব অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে কিনা, তাও জানা যাবে। এই কাজে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে সহায়তা চেয়ে তাদের সঙ্গে যৌথ বন ব্যবস্থাপনা কমিটিও গড়ে দেওয়া হয়েছে। বনদপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও জঙ্গলের দেখাশুনা করবে। বন দপ্তরের তরফ থেকে আর্থিক সহায়তাও মিলবে।
বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমরা উত্তরবঙ্গের জঙ্গল থেকে পাথর চুরির অনেক খবর পেয়েছি। এই চুরি রুখতেই আমরা আগ্নেয়াস্ত্রের কথা ভেবেছি। জঙ্গল থেকে পাথর সরিয়ে তার ইকো–সিস্টেম নষ্ট করা যাবে না।”