ওয়াসার সরবরাহ করা পানি জীবাণু ও দূষণমুক্ত করতে দুই সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে সুপারিশ করেছে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি। চার দফা সুপারিশ সম্বলিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ বা জীবাণুর সংক্রমণ ঠেকাতে ঢাকা ওয়াসার উচিত পানি সরবরাহ লাইনগুলোর মেরামত করা ও লাইনগুলো আধুনিক করা। এ জন্য ঢাকা ওয়াসাকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে বলে উল্লেখ করে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনে এই চার দফা সুপারিশ করা হয়েছে। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গত ২৮ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে। আগামী ৫ ডিসেম্বর এই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে নিয়োজিত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নুর উস সাদিক কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা একটি প্রতিবেদন পেয়েছি। আগামী ৫ ডিসেম্বর তা আদালতে দাখিল করা হবে।
কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে,
১. সুপেয় পানির সরবরাহ নিরাপদ ও দূষণমুক্ত রাখতে অবৈধ পানির সংযোগ বন্ধ করতে হবে।
২. দূষণ বা জীবাণুর সংক্রমণ ঠেকাতে ঢাকা ওয়াসার উচিত পানি সরবরাহ লাইনগুলোর মেরামত করা ও লাইনগুলো আধুনিক করতে হবে। এ জন্য ঢাকা ওয়াসাকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
৩. ঢাকা শহরে সরবরাহ করা পানির মান যাচাই ও মনিটরিং করতে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ক্যাম্পেইন চালু করতে হবে। বছরজুড়ে এ ক্যাম্পেইন অব্যাহত থাকবে। এ ক্যাম্পেইনের জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. বাসা-বাড়িতে থাকা পানির ট্যাংকি ও হাউসগুলো পরিষ্কার রাখতে ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালাতে হবে।
এদিকে গত বছর ৬ নভেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া এক নির্দেশে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং আইসিডিডিআরবি’র প্রতিনিধির সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি চারটি উৎস (বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা, ভূ-গর্ভস্থ ও ভূমিস্থ), ১০টি বিতরণ জোন (যা মডস জোন নামে পরিচিত), গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এবং দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১০টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আইসিডিডিআরবি, বুয়েট ও ঢাবি অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে। এই পরীক্ষার প্রতিবেদন গত ৭ জুলাই আদালতে দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনে ৮টি নমুনায় ব্যাকটেরিয়াসহ ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনেই ক্লোরিনের তথ্য রয়েছে। কিন্তু এই তথ্য অস্বীকার করে ঢাকা ওয়াসা।
এ অবস্থায় ওয়াসা মিরপুর ও পাতলাখান লেনের পানি আবার পরীক্ষা করে গত ৩০ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। এই দুটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত জানতে চান আদালত। হাইকোর্টের এই নির্দেশে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি ৭ ও ৩০ জুলাইয়ের প্রতিবেদন দেখে তাদের মতামত দিয়েছে।