![গ্রীন ব্যাংকিং | The Green Banking - ethical banking or a sustainable banking](https://www.greenpage.com.bd/wp-content/uploads/2019/09/image008-300x88.png)
গ্রীন ব্যাংকিং – পৃথিবী নামক এ গ্রহটিকে বাসযোগ্য রাখার ব্যাংকিং ব্যবস্থা।
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বর্তমানে এ পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্বের উপর হুমকী হয়ে দেখা দিয়েছে । কারণ এ পরিবর্তন জীববৈচিত্র্য, কৃষি , বন, শুষ্কভুমি, পানিসম্পদ,এবং মানব স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে ।
পরিবেশ অবক্ষয়ের মূল ক্ষেত্রগুলো হলো বায়ু দূষণ, পানি দূষণ ও ব্যবহারিক পানির সংকট, নদী ভরাট ও সংকুচিত হওয়া, শিল্প- মেডিক্যাল-গৃহস্থালী বর্জ্যসমূহের অনিয়মতান্ত্রিক ডাম্পিং/ডিসপোজাল, বন উজাড়করণ, উন্মুক্ত স্থানের সংকোচন ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ।
বাংলাদেশে পরিবেশের অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘাটছে; যদিও বাংলাদেশ একটি জলবায়ু সংবেদনশীল দেশ।
“বৈশ্বিক উন্নয়ন এবং পরিবেশের অবক্ষয় রোধ”।
বর্তমান বিশ্ব নীতির এ শ্লোগান ধারণ করে বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্প উৎপাদন, কৃষি উৎপাদন, ব্যবসা বাণিজ্য, সেবা খাতসহ যাবতীয় আর্থিক ক্রিয়াকলাপের মূলে হলো অর্থ।
আর এ অর্থই ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে পরিবেশের অবক্ষয় রোধ করে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ নিশ্চিত করণ ও বর্জ্য হ্রাসে এ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
![গ্রীন ব্যাংকিং | The Green Banking - ethical banking or a sustainable banking](https://www.greenpage.com.bd/wp-content/uploads/2019/09/image005-200x300.jpg)
”গ্রীন ব্যাংকিং” শব্দটি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। এটি পরিবেশের অবক্ষয় রোধের মাধ্যমে পৃথিবী নামক এ গ্রহটিকে বাসযোগ্য রাখার ব্যাংকিং ব্যবস্থা।
সাধারণত গ্রীন ব্যাংকিং পরিবেশকে সবুজ রাখার জন্য ব্যাংকিং খাতের প্রচেষ্ঠাকে বোঝায় এবং ব্যাংকিং পরিসেবা, ব্যবসা বাণিজ্য ও মানব জীবনের দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপে এমনভাবে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে থাকে যা পরিবেশ দূষণ হ্রাস করার মাধ্যমে গ্রীন হাউস প্রভাবগুলোকে হ্রাস করে।
তাই এ ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে সবুজ ব্যাংকিং বা পরিবেশ বান্ধব ব্যাংকিং বা টেকসই ব্যাংকিং ব্যবস্থাও বলে। এটি পরিবেশ বান্ধব অনুশীলনগুলো প্রচার করে এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম থেকে কার্বন পদচিহ্ন হ্রাস করে।
গ্রীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা হলো এমন এক ধরনের ব্যাংকিং যাথেকে দেশ ও জাতি পরিবেশগতভাবে সুবিধা পায়। একটি সনাতন প্রদ্ধতির ব্যাংক তার পরিবেশের উন্নতির দিকে মূল কার্যক্রম পরিচালিত করে একটি সবুজ ব্যাঙ্কে পরিণত হয়।
ব্যাংকিং খাত পরিবেশগতভাবে টেকসই এবং সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ বিনিয়োগকে উন্নীত করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষার মধ্যে মধ্যবর্তী ভূমিকা পালন করতে পারে। গ্রীন ব্যাংকিংয়ের ধারণাটি পশ্চিমা দেশগুলিতে বিকশিত হয়েছিল। পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রীন ব্যাংকিং শুরু হয় ।
তারপরে নিরক্ষীয় নীতিমালা (ইপি) চালু করা হয়েছিল এবং প্রথমে কিছু শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক ব্যাংক যেমন সিটিগ্রুপ ইএনসি, রয়্যাল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড, ওয়েস্টপ্যাক ব্যাংকিং কর্পোরেশন গ্রহণ করেছিল। ২০০৯ সালের মার্চ মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য ক্রিস ভ্যান হোলেন মার্কিন সরকারের মালিকানাধীন গ্রীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গ্রীন ব্যাংক আইন চালু করেছিলেন ।
গ্রীন ব্যাংকিংয়ের প্রবর্তনের পরে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ছিল ব্যাংকিংয়ের কাজগুলিতে কাগজের ব্যবহার হ্রাস করা, কারণ কাগজ তৈরীতে কাঁচামাল হিসাবে গাছ কাটা দরকার (এটি সবুজ বনায়ননকে ন্যূনতম করে তোলে ) এবং এ কারণে প্রাকৃতিকভাবে এটি অক্সিজেন হ্রাস করে এবং কার্বনকে বাড়িয়ে তোলে ।
গ্রীন ব্যাংকিং বা সবুজ ব্যাংকিং অনুশীলনের দুটি উপায় রয়েছে।
একটি হলো ইন-হাউস গ্রীন ব্যাংকিং; অনলাইন ব্যাংকিং, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ব্যাংকের ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপন এবং উচ্চ মাইলেজ যানবাহন ব্যবহার, শব্দ দূষণ হ্রাস, শারীরিক বৈঠকের পরিবর্তে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্য ওয়েবক্যাম ব্যবহার, অনলাইন বিবৃতি, ই-মেইল করার নথিগুলি অভ্যন্তরীণ গ্রীন ব্যাংকিংয়ের অন্তর্ভুক্ত ।
আরেকটি হ’ল সবুজ বিল্ডিং, ফরেস্টেশন, সবুজ গ্রকল্পের অর্থায়ন যেমন বায়োগ্যাস প্লান্ট, সোলার / রিনিউয়েবল এনার্জি প্লান্ট, বায়োসার প্লান্ট, এফ্লয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) ইত্যাদির প্রকল্প, নির্দিষ্ট সবুজ প্রকল্পে কাজ করা, ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম ইত্যাদি ।
ব্যাংকগুলির প্রধান কর্ম তাদের ব্যবসায়ের ক্ষেত্র। গ্রীন ব্যাংকিং নবায়নযোগ্য, অ- নবায়নযোগ্য, মানবিক ও প্রাকৃতিক সম্পদের দক্ষ ব্যবহারের পাশাপাশি অর্থায়ন করার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় এবং জলবায়ুু পরিবর্তন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ।
ব্যাংকিং খাত
![গ্রীন ব্যাংকিং - পৃথিবী নামক এ গ্রহটিকে বাসযোগ্য রাখার ব্যাংকিং ব্যবস্থা।](https://www.greenpage.com.bd/wp-content/uploads/2019/09/image020-300x169.png)
![গ্রীন ব্যাংকিং - পৃথিবী নামক এ গ্রহটিকে বাসযোগ্য রাখার ব্যাংকিং ব্যবস্থা](https://www.greenpage.com.bd/wp-content/uploads/2019/09/image018-300x175.png)
মূলতঃ গ্রীন ব্যাংকিং ব্যবস্থার মূল লক্ষ্যই পরিচালিত হয় জাতি সঙ্ঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রার ১৭ টি লক্ষ্য আর্জনকে বিবেচনা করে। গ্রীন ব্যাংকিং এর উদেশ্যেগুলো নিম্নে প্রদত্ত হলো –
- ১) বর্জ্য এড়ানো এবং পরিবেশ ও সামাজিক অগ্রাধিকার;
- ২) পরিবেশ বান্ধব উদ্যোগগুলির প্রতি মনোযোগী হওয়া এবং উদ্ভাবনী ও টেকসই উন্নয়নকে প্রাধন্য দেয়া;
- ৩) প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করণ;
- ৪) দীর্ঘসময় পর্যন্ত পৃথিবী নামক এ গ্রহটিকে বাসযোগ্য রাখা;
- ৫) ব্যাংকের অভ্যন্তরে এবং বহিঃস্থানে যত সম্ভব কাগজের ব্যবহার সীমিত করণ;
- ৬) ব্যয় ও সময়ের ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন।
![গ্রীন ব্যাংকিং - পৃথিবী নামক এ গ্রহটিকে বাসযোগ্য রাখার ব্যাংকিং ব্যবস্থা।](https://www.greenpage.com.bd/wp-content/uploads/2019/09/image016-300x175.png)
![গ্রীন ব্যাংকিং - পৃথিবী নামক এ গ্রহটিকে বাসযোগ্য রাখার ব্যাংকিং ব্যবস্থা](https://www.greenpage.com.bd/wp-content/uploads/2019/09/image014-300x186.png)
বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রীন ব্যাংকিং বাস্তবায়নের জন্য এতদসংক্রান্ত নিয়ম কানুন তৈরী করে। বাংলাদেশই বিশ্বব্যাপী প্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা গ্রীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা গুরুত্বসহকারে গ্রহন করে এবং এর উপর সুষ্পষ্ট জ্ঞান রাখে ।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক ও বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংক ও দেশী – বিদেশী আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ অনুসারে সবুজ ব্যাংকিং এর উপর নিবিড়ভাবে কাজ করছে ।
![গ্রীন ব্যাংকিং - পৃথিবী নামক এ গ্রহটিকে বাসযোগ্য রাখার ব্যাংকিং ব্যবস্থা](https://www.greenpage.com.bd/wp-content/uploads/2019/09/image010-300x183.png)
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে ২০১৩ সালে সমস্ত তফসিলী ব্যাংক তাদের নিজস্ব গ্রীন ব্যাংকিং নীতি এবং গ্রীন ব্যাংকিং ইউনিট তৈরী করেছে।
পরিবেশগত ঝুকিহ্রাসে তখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলি ১০,৮৬৮টি প্রকল্পে ৭,৯৩,৫৬১.২৫ মিলিয়ন টাকা বিতরন করেছিল।
২০১২ সালে ব্যাংকগুলি গ্রীন ফাইন্যানসিং-এ ২,০০,৯২১.৫৩ মিলিয়ন টাকা বিতরণ করার উদ্যোগ গ্রহন করে।
ব্যাংকগুলি গ্রীন ব্যাংকিং কার্যক্রম এবং সবুজ প্রকল্পগুলোতে কর্পোরেট সামিাজিক দায়বন্ধতা হিসাবে ২৫৮.৮৯ মিলিয়ন টাকা ব্যবহার করে
এবং ৯০.৪২ মিলিয়ন টাকা ব্যবহার করে গ্রীন মার্কেটিং প্রশিক্ষণ ও বিকাশে মনোনিবেশ করে। ইতোমধ্যে বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকগুলির সবকয়টি শাখায় সম্পূর্ণভাবে এবং রাষ্টীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও বিশেষায়িত উন্নয়ন ব্যাংকগুলি সীমিতি আকারে অন লাইন ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও এসএমএস ব্যাংকিং চালু করেছে।
![The Green Banking](https://www.greenpage.com.bd/wp-content/uploads/2019/09/image012-300x193.png)
বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিএ, জাইকা ইত্যাদির মত বাংলাদেশে কর্মরত আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলি পরিবেশগত প্রভাব মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক গাইড লাইন অনুসরণ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন অনুসারে, বাংলাদেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক ইতোমধ্যে গ্রীন ব্যাংককে অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের পাশাপাশী গ্রীন প্রকল্পেও অর্থায়ন জোরদার করেছে, যা আমাদের দেশের জন্য কল্যাণকর।