জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাসে সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা প্রয়োজন
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝিনাইদহের ৪টি গ্রামের ১২ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে, ২১ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবার উচ্চ ঝুঁকিতে ও ৬৫ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবার মাঝারি ঝুঁকিতে রয়েছে।
এর প্রভাবে ভবিষ্যতে ৯৫ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার স্বাস্থ্যঝুঁকি, ৯৪ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবার জীবিকার উৎস হারানো, ৯২ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি, ৬১ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার যোগাযোগব্যবস্থার ক্ষতির মধ্যে পড়বে। এ ছাড়া ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার নিরাপদ পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিডিপি পরিচালিত একটি জরিপে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (সিডিপি) পরিচালিত একটি জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার সকালে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।
ওই চারটি গ্রাম হলো ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের ঝপঝপিয়া, রাউতাইল, গোয়ালবাড়িয়া ও লেবুতলা।
জলবায়ু ঝুঁকি নিরূপণ করা হয়েছে জনগোষ্ঠীর জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাসের জন্য। সংস্থাটির আঞ্চলিক সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান বলেন, তাঁরা এই তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি ঝুঁকি হ্রাসের পরিকল্পনা প্রণয়ন করছেন। এ জন্য স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা প্রয়োজন।
জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাসে সংস্থাটির পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারে কার্যকর পদক্ষেপ, আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান, স্বল্প ও বিনা সুদে ঋণ প্রদান, বজ্রপাতে জীবন ও সম্পদহানি রোধে পদক্ষেপ, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি এবং যথাযথ ব্যক্তিদের তা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, বিনা সুদে ও দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে গৃহঋণের ব্যবস্থা করা, শীত মৌসুমে ভুক্তভোগীদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ ও বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে স্থানীয় পর্যায়ে স্বল্প কার্বন উৎপাদনকারী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, ওই ৪টি গ্রামে ৮৬০টি পরিবারে (খানা) ৩ হাজার ৪১৪ জন মানুষ বাস করেন। যাঁদের মাসিক আয় গড়ে ১৪ হাজার ৭৭৪ টাকা। সেখানে শিক্ষার হার কম।
২৭ দশমিক ২ শতাংশ পরিবারের বাড়ি এখনো কাঁচা, ১০ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়ির কাঠামো দুর্বল ও ১২ দশমিক ২ শতাংশ বাড়ি নিচু স্থানে তৈরি।
এসব গ্রামে প্রতিবছর সাইক্লোন, খরা, বজ্রপাত, শৈত্যপ্রবাহ ও তাপপ্রবাহ হয়। এ ছাড়া শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি ও টর্নেডো প্রতি দুই বছরে একবার আঘাত হানে। এসব দুর্যোগে প্রায় সবাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জীবন-জীবিকার ওপর প্রভাব পড়বে।
এসব গ্রামের ৬৫ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস দিনমজুরি। জলবায়ুর পরিবর্তনে তাঁরা কর্মসংকটে পড়তে পারেন।
পরিবারগুলোর ৫ দশমিক ১ শতাংশ ভূমিহীন, ৩ শতাংশ মানুষ তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন না, আর ৮ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষের আয় অনিয়মিত। এসব এলাকায় ৮৩ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবারের সদস্যদের আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ নেই।